শান্তির ‘অস্ত্র' হতে পারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম
১২ জুলাই ২০১৯ধর্ম ও গণমাধ্যম বিষয়ে জার্মানির বন ও বার্লিনে সম্প্রতি পাঁচদিন ব্যাপী সেমিনারের আয়োজন করে জার্মানির ডয়চে ভেলে একাডেমি৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সহায়তায় অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির বাণী ছড়াতে সামাজিক গণমাধ্যমকে ‘অস্ত্র হিসেবে' ব্যবহার করতে হবে৷
আলোচনায় রিলিজিওন্স ফর পিস মিয়ানমার-এর সদস্য মিরা লুইন মার উ জানান, তাঁর দেশে কোনো কোনো বৌদ্ধ ও মুসলিম ধর্মীয় পণ্ডিত ও নেতা এরই মধ্যে এই উপায় অবলম্বন করেছেন৷
‘‘মিয়ানমারে ফেসবুক সবচেয়ে প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম,'' বলছিলেন তিনি৷ ‘‘কোনো কিছু ভাইরাল হতে সময় নেয় না৷ তাই আমি মনে করি, শান্তির বাণী ছড়াতে এর সম্ভাবনা বিপুল৷''
ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে উস্কানি দেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে৷ বিশেষ করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সময় সংঘাত কিংবা ২০১২ সালে সেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সাম্প্রদায়িক হামলার সময়, ফেসবুকে অনেক ভুয়া ছবি ভাইরাল হয়েছে৷ শুধু মিয়ানমার নয়, বাংলাদেশেও ফেসবুকের ভুয়া পোস্ট ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে৷
মিরা বলেন, অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, ফেসবুকে অনেকে এমন ছবি বা বক্তব্য প্রকাশ করেছেন, যা বিভিন্ন সংঘাতকে উস্কে দিয়েছে৷ তাই ভুয়া ও উস্কানিমূলক এসব খবরের বিরুদ্ধে উলটো ফেসবুককেই ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি৷
ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা দেখেন কেউ কেউ৷ ডিপ্লোমেটিক স্কুল ইয়াঙ্গুনের লুইন ইব্রাহিম বলেন, ‘‘একে অন্যকে যেন বুঝতে পারি, তাই ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আমরা সংলাপের আয়োজন করি৷ আমরা ধর্মের ইতিবাচক রূপটি তুলে ধরবার জন্য ‘কাউন্টার ন্যারেটিভ' তৈরি করি৷''
এছাড়া স্কুলগুলোতে, বাধ্যতামূলকভাবে সম্প্রীতির পাঠ দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয় সেমিনারে৷
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়শিয়ার প্রথম নারী রেক্টর অধ্যাপক দাতুক সেরি জালেহা কামারুদ্দিন মনে করেন, ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীলতা বৈশ্বিকীকরণের নতুন ওয়েভ৷
‘‘মানুষ কোনো বিষয়ে অসন্তুষ্ট হলে প্রতিবাদে রাস্তায় নামতেন৷ এখন নতুন প্রজন্ম সামাজিক মাধ্যমে লেখে,'' বলেন তিনি৷
অধ্যাপক জালেহা কামারুদ্দিন যোগ করেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের মাঝে স্থিতিশীলতা তৈরি করতে হবে৷ তাদের সঙ্গে আধ্যাত্মবাদ নিয়ে কথা বলতে হবে৷ অন্য ধর্মের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে৷''
জার্মানির পররাষ্ট্র দপ্তরের ধর্ম ও বিদেশ নীতি বিভাগের প্রধান ফলকার বেরেসহাইম বলেন, শান্তি রক্ষায় ভুমিকা রাখতে চায় জার্মানি৷ তাই দেশটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুমিকা রাখতে পারেন এমন বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে সহযোগিতা বাড়াতে কাজ করবে৷
‘‘আর এই কাজটি করতে হলে গণমাধ্যমকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা বিশেষ করে ভাবতে হবে৷ তাই ধর্মীয় বা আধ্যাত্মবাদের বিষয়গুলো নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদেরও গণমাধ্যম ব্যবহারের এই শিক্ষা প্রয়োজন৷''
আগামী ২০ থেকে ২৩ আগস্ট জার্মানির লিনডাওতে দশম ‘রিলিজিয়ন্স ফর পিস' সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ সেখানে বিশ্বের ১০০টি দেশ থেকে ১৭টি ধর্মের অনুসারীদের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন৷ মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৯০০ জন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
আয়ু পূর্বানিংসিহ/জেডএ