দুর্নীতি দমনে শাস্তি
১৪ জুলাই ২০১৩এই জরিপে ১০৭টি দেশের এক লাখ ১৪ হাজার প্রশ্ন করা হয়৷ উত্তরদাতাদের এক চতুর্থাংশ বলেছেন, তাঁরা গত ১২ মাসে অন্তত একবার কোনো না কোনো সুবিধা আদায়ের জন্য সরকারি দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানের সদস্যকে ঘুস দিয়েছেন৷ যা আসলে নিখরচায় পাওয়ার কথা৷
বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি সংক্রান্ত জরিপে দেখা গেছে, পুলিশ, আদালত ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে৷ অথচ এদের কাছ থেকেই মানুষ সহায়তার আশা করে থাকে৷
দারিদ্র্যের সঙ্গে দুর্নীতির যোগসূত্র
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দারিদ্র্যের সঙ্গে দুর্নীতির একটা যোগসূত্র আছে বলে মনে করে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত ১০টি দেশের আটটিই আফ্রিকা মহাদেশের৷ আর ঘুস দেওয়ার ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিয়েরা লিয়ন৷
‘‘যারা ঘুস চায়, তারা শাস্তি ছাড়াই পার পেয়ে যায় বলে প্রবণতাটা আরো বাড়ছে৷ এটা রীতিমত উদ্বেগজনক৷ তবে আমরা লক্ষ্য করেছি, মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে৷ তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে৷ তারা বুঝতে পারছে সরকার নয় বরং নিজেদেরই কিছু করতে হবে'', বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের আফ্রিকা বিভাগের প্রধান শান্টাল উইমানা৷
সর্বক্ষেত্রে ঘুস
আফ্রিকার ২০টি দেশে এই জরিপ চালানো হয়েছিল৷ উত্তরদাতাদের বেশিরভাগ বলেছেন যে, সাধারণ দৈনন্দিন দাপ্তরিক কাজের জন্যও তাদের ঘুস দিতে হয়৷ বিশেষ করে পুলিশকে ঘুস দেওয়ার কথা বলেছেন অধিকাংশ উত্তরদাতা৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশরা নিজেরাই ঘুস চায়৷ কখনও বা মানুষ যেচে তাদের অর্থ দেয়, যাতে কাজটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায় বা কোনো সমস্যা দূর হয়৷
কয়েকজন উত্তরদাতা জানিয়েছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা পেতে হলে ঘুস দিতে হয় তাদের৷ এমনকি পানি ও জমিজমার ব্যাপারেও টাকা না দিলে কাজ হয় না৷ ‘‘আমরা কয়েকটি দেশে বিশেষ সমিতি গড়ে তুলেছি, যেখানে দুর্নীতির শিকার ব্যক্তিরা আইনি সহায়তা পেতে পারে৷ পাশাপাশি ঘুসের বিরুদ্ধে লড়াইতেও সক্রিয় হতে পারে৷ আমরা বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছি৷ ক্যামেরুনে অনেক বছর ধরে আমরা সক্রিয়'', জানান শান্টাল উয়িমানা৷
শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি
ক্যামেরুনে প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনার জন্য কোনো ফি দিতে হয় না৷ কিন্তু কিছু স্কুল এই আইন উপেক্ষা করে টিউশন ফি আদায় করে থাকে৷ জনসাধারণ বিষয়টি সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না বলেই নির্বিকারে এই অবৈধ কাজটি চালিয়ে যায় তারা৷ এছাড়া বই-পত্রও যে নিখরচায় পাওয়া যায়, সে সম্পর্কেও ধারণা নেই অনেকের৷
শান্টাল জানান, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে চাই৷ এছাড়া আফ্রিকান দেশগুলির সরকারদের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি, এমন ধরনের আইন প্রণয়ন করতে, যাতে এই সব তথ্য পাওয়ার পথটা সুগম হয়৷''
আফ্রিকাতে রুয়ান্ডার মতো দেশও রয়েছে, যারা দুর্নীতিকে সাফল্যের সাথে দমন করছে৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, তাদের এই সাফল্য হচ্ছে কী ভাবে? এর উত্তরে শান্টাল উয়িমানা বলেন, ‘‘দেশটিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নেই৷ এছাড়া জনগণকে দুর্নীতির খবরাখবর জানাতে উৎসাহিত করা হয় সেখানে৷ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লে শাস্তিও পেতে হয়৷ মানুষ অনেক বেশি সচেতন৷ যেমন তারা জানে, স্কুলের জন্য কত খরচ হবে এবং টাকাটা কোন খাতে ব্যয় করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি৷ একটা দেশে যত বেশি স্বচ্ছতা থাকবে, তত কম দুর্নীতি হবে সেখানে৷''