1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শাহাজাহাদপুর পতিসরে রবীন্দ্রনাথ

২ জুন ২০১১

শিলাইদহের মত আজকের বাংলাদেশের শাহজাহাদপুর আর পতিসরও রবীন্দ্রস্মৃতি ধন্য৷ এক সময় এ দু'টি কাছারি বাড়ি রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা নানা জিনিসপত্রে ছিলো ঠাসা কিন্তু এখন সেসবের অনেক কিছুই আর নেই৷

https://p.dw.com/p/11SnR
Rabindranath Tagore
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরছবি: picture-alliance/dpa

নওগাঁয় নাগর নদীর পাড়ে পতিসর কালিগ্রাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব জমিদারি হলেও পিতামহ প্রিন্স দারকানাথ ঠাকুরের কেনা শাহজাহাদপুরের জমিদারি তাঁকে দেখতে হয়েছে পাঁচ বছর৷ প্রথম তিনি সেখানে আসেন ১৮৯০ সালের জানুয়ারি মাসে৷ শাহাজাহাদপুর পতিসরের কাছারি বাড়িতে এখন রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের অবশিষ্ট যা আছে তার কিছু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংরক্ষণ করলেও নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক কিছুই উদ্ধার হয়নি এখনও৷

শাহজাহাদপুরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগের পরিচয় ছড়িয়ে আছে ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরাকে লেখা বহু পত্রে৷ এখানে তিনি লিখেছেন গল্প, কবিতা, নাটক৷ পোস্ট মাস্টার, ক্ষুধিত পাষাণ'এর মত গল্প এখানে বসেই লেখা৷ চিঠিতে তিনি লিখছেন, ‘‘এখানে যেমন আমার মনে লেখবার ভাব এবং লেখবার ইচ্ছা আসে আর কোথাও না৷'' পতিসরে রবীন্দ্রনাথ লেখার চেয়ে বরং দরিদ্র কৃষকদের কল্যাণে বেশি সময় ব্যয় করেন৷ এখান থেকেও চিঠি লেখেন ইন্দিরা দেবীকে৷

Rabindranath Tagore, Bengali poet, novelist, musician, painter
বাংলাদেশের কুষ্টিয়াতে রবীন্দ্রনাথ’এর বাসগৃহছবি: DW

১৮৪০ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, নাটোরের রানি ভবানীর জমিদারির অংশ ডিহি শাহজাহাদপুর ১৩ টাকা ১০ আনায় কিনলে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত দ্বিতল ভবনটি পান ঠাকুর পরিবার৷ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৬৯ সালে এ বাড়িটি সংরক্ষিত ঘোষণা করে এখানে প্রতিষ্ঠা করে জাদুঘর৷ কবির শখের জিনিসপত্রের পাশাপাশি তাঁর ব্যবহার করা নানা ধরনের সামগ্রী এ জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হলেও কবিগুরুর স্মৃতি সম্বলিত অনেক কিছুই এখনো রয়ে গেছে ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানিক সংগ্রহে৷ যেমন শাহজাহাদপুর পাইলট হাই স্কুলে ভিজিটরদের মতামত খাতায় রবীন্দ্রনাথের লেখা মতামত এখনো রয়েছে ওই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হেফাজতে৷ ১৮৯০ সালের ২০ জানুয়ারি রবীন্দ্রনাথ শাহজাহাদপুর কাছারি বাড়ির কাছেই ওই বিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় স্কুল সম্পর্কে ব্যক্তিগত মতামত লেখেন৷ বিদ্যানুরাগী ঠাকুর পরিবারের মুখ্য স্থপতি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর শাহজাহাদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন কিরণবালা প্রাথমিক বিদ্যালয় আর তাঁর পৌত্র রবীন্দ্রনাথ পতিসরে ছেলে রথীন্দ্রনাথের নামে স্থাপন করেন আরেকটি বিদ্যালয়৷ ওই বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে এখনো রক্ষিত আছে রবীন্দ্রনাথ ও পুত্র রথীন্দ্রনাথের লেখা গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো চিঠি৷

৭১'এর মুক্তিযুদ্ধের আগেও শাহজাহাদপুর কাছারি বাড়িতে ছিলো অনেক কিছুই৷ চোখের সামনে সেই সব বিরল নিদর্শন এখনও ভাসছে অনেকের মতো সাংবাদিক বিমল কুণ্ডের চোখের সামনে৷ তাঁর দাবি, কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত যেসব জিনিস শাহজাহাদপুর কাছারি বাড়িতে ছিলো সেগুলো তিনি দেখেছেন এবং '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী এই কাছারি বাড়িতেই ক্যাম্প করে এবং তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার করা অনেক জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় যেগুলো আর পরে পাওয়া যায়নি৷

literature, music
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’এর ব্যবহৃত জিনিসছবি: DW

পতিসর কাছারি বাড়ি থেকে খোয়া যাওয়া মূল্যবান জিনিসপত্রের অনেক কিছুরই খবর পেয়েছেন রবীন্দ্রপ্রেমিক মতিউর রহমান৷ ২০০৩ সালে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেগুলো উদ্ধারের কাজ শুরু করেন৷ ইতিমধ্যেই পেয়েছেন ৬ পৃষ্ঠার একটি চিঠি এবং রবীন্দ্রনাথের জমিদারি ও কৃষি ব্যাংকের লেজার৷ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চিঠিটি নিলেও লেজারটি পড়ে আছে নওগাঁর ডিসির হেফাজতে৷

রবীন্দ্রপ্রেমিক মতিউর রহমান দাবি করেন, আরও কিছু জিনিসপত্র চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ এর জন্য দরকার সরকারি সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা৷ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হারিয়ে যাওয়া জিনিস গুলো সংগ্রহ করতে পারলে পতিসরে একটি বড় মিউজিয়াম হতে পারে বলে তিনি মনে করেন৷

tagoreweb.in
রবীন্দ্রনাথ’কে নিয়ে ওয়েবসাইটছবি: tagoreweb.in

দীর্ঘ ১০ বছর শাহজাহাদপুর কাছারি বাড়ির দায়িত্বে ছিলেন কষ্টোডিয়ান নাহিদ সুলতানা৷ ওই কাছারি বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছু জিনিস তিনি উদ্ধার করতে পারলেও এখনো অনেক কিছুর সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ নাহিদ সুলতানা জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার করা জিনিসপত্রের মধ্যে যেসব জিনিস হারিয়ে গেছে তার মধ্যে থেকে কিছু উদ্ধার করা হয়েছে৷ তার একটি অংশ দর্শকদের দেখানো করা জাদুঘরে৷ সন্ধান করা হচ্ছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আরও নানা জিনিসপত্রের৷ সেগুলো পেলে ডিসপ্লে করা হবে জাদুঘরে৷

১৯৩৭ সালে ২৭ জুলাই রবীন্দ্রনাথ পতিসর থেকে শেষ বিদায় নেন ৷ এর আগে তিনি যখন এখানে আসেন তখন তাঁকে যারা দেখেছেন তাদেরই একজন মো: সরফরাজ আকন্দ৷ এখন বয়স তাঁর ৮৩ বছর৷ প্রবীণ এই ব্যাক্তি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে তাঁর সাক্ষাতের কথা জানাতে গিয়ে বললেন, প্রথা অনুযায়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তিনি নমস্কার করেন এবং কবি সসম্মানে তার উত্তরও দেন৷ রবীন্দ্রনাথ তাকে দই ও চিড়া খেতে দেন৷ সরফরাজ আকন্দ জানান, কবি ছিলেন অত্যন্ত উদার হৃদয়ের মানুষ৷ গরিব মানুষদের তিনি দান দক্ষিণা দিতেন এমনকি পুকুরও দেন৷

শাহজাহাদপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হলেও পতিসরে সড়ক যোগাযোগ এখনো উন্নত হয়নি৷ অথচ প্রায় ২ বছর আগে পতিসর কাছারি জাদুঘর হিসেব ঘোষণ করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর৷

প্রতিবেদন: হাসিবুর রহমান বিলু, বগুড়া

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক