শিক্ষকের কুকীর্তি
৪ জুন ২০১৩দক্ষিণ চীনের হানিয়ান প্রদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ চেন জাইপেং৷ গত মাসে জানাজানি হয়ে যাওয়া একটি ঘটনার আগ পর্যন্ত স্থানীয়রা খুব সম্মান করতো তাঁকে৷ হোটেলে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চার ছাত্রীর সঙ্গে রাত কাটানোর ছবি প্রকাশিত হবার পর থেকে তিনি সবার ঘৃণার পাত্র৷ আইনজীবী এবং নারীনেত্রী ইয়ে হাইয়ান ছুটে গিয়েছিলেন সেই স্কুলে৷ উদ্দেশ্য ঘটনার পর চাকরিচ্যূত শিক্ষকের প্রতি ক্ষোভ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানানো৷ তাঁর সমস্ত ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছিল বড় কাগজে লেখা একটি বাক্যে, ‘‘অধ্যক্ষ, আমাকে একটা ঘরে নিয়ে যাও, ছেড়ে দাও বাচ্চা মেয়েগুলোকে''৷
তারপর থেকে প্রতিবাদের ঝড় আরো তীব্র৷ শিক্ষকজাতির কলঙ্ক হয়ে ওঠা চেন জাইপেংয়ের প্রতি একই আহ্বান জানিয়ে ঘৃণা জানাচ্ছেন অনেকেই৷ এমনকি পুরুষরাও শয্যায় যেতে চাইছেন হানিয়ান প্রদেশের ওই শিক্ষকের সঙ্গে৷ বেইজিংয়ের কবি ওয়াং জেং নিজের নগ্ন দেহের ছবি প্রকাশ করেছেন৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে তাঁর পিঠেও লেখা, ‘‘অধ্যক্ষ, আমাকে একটা ঘরে নিয়ে যাও, ছেড়ে দাও বাচ্চা মেয়েগুলোকে''৷ এমন প্রতিবাদেই অবশ্য থেমে নেই চীনবাসী৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নানাভাবে চলছে শিশুদের ওপর যৌননিপীড়ন চালানোর তীব্র প্রতিবাদ৷
চীনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া নতুন কিছু নয়৷ দেশটিতে যৌন শিক্ষার প্রচলন হয়নি এখনো, বাবা-মায়েরাও সন্তানদের কিভাবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন ভোগান্তি এড়ানো যায়, তা শেখানো না৷ বেইজিং নিউজ পত্রিকার চালানো সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, চীনের ৩৭ দশমিক ৪ ভাগ বাবা-মা সন্তানকে কিভাবে যৌন হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে শেখাবেন তা জানেন না!
এমন অজ্ঞতার সুযোগ নিচ্ছে কতিপয় মানুষ৷ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা অপ্রাপ্তবয়স্ক পতিতাদের সঙ্গে রাত কাটাতে পছন্দ করেন৷ সাধারণ মেয়েরা কারো যৌন লালসার শিকার হলেও অন্যায়কারী শাস্তি পায়না৷ স্কুলগুলো গোপনেই মিটিয়ে নেয় বিষয়টি৷ কম বয়সিদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়া যে চীনে প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাই তাঁর প্রমাণ৷ গত তিনমাসে স্কুলের শিক্ষক বা অন্য কোনো কর্মীর কাছে ছাত্রীর যৌননিগ্রহের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে সাতটি৷ আট বছরের শিশুও হয়েছে যৌন লালসার শিকার! ‘‘অধ্যক্ষ, আমাকে একটা ঘরে নিয়ে যাও, ছেড়ে দাও বাচ্চা মেয়েগুলোকে''– এ আহ্বানের মাধ্যমে প্রকাশিত ক্ষোভ, ঘৃণা এবং সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এমন অনাচার বন্ধ করতে পারলেই হয়!
এসিবি/ডিজি (এপি)