শিক্ষাই সমাধান!
১৪ জুন ২০১২ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা মানুষকে তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলে৷ এটি সংলাপ এবং মুক্ত মত প্রকাশের ভিত্তিতে সংহতকরণের সংস্কৃতিকে সমর্থন করে, যেখানে বিশ্বাস এবং প্রত্যয় প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে৷ স্বাধীন, ন্যায়পরায়ন, পূর্ণাঙ্গ মানুষ -- যারা ভিন্নভাবে চিন্তা করতে সক্ষম, তাদেরকে আরো উৎসাহিত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে শিক্ষা৷
দ্বিতীয় যে কারণটির জন্য শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, সামাজিক সচলতায় এর সুস্পষ্ট ভূমিকা৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে মিশরের কথা৷ সহজ করে বলতে গেলে, ভালো শিক্ষা ভালো বেতনের চাকুরির সংস্থান করে, একইসঙ্গে যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষদেরকে সমাজে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়৷ মিশরের শ্রমিক শ্রেণির একটি বড় অংশ এখনো বিশ্বাস করে, ভালো শিক্ষা তাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্য নিশ্চিত করবে৷ সরাসরি এই বিষয়টি জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলে, ‘‘আমি আমার শিশুকে ভালো শিক্ষা দিতে চাই, যাতে করে ভবিষ্যতে তারা আমার চেয়ে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে৷''
দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, শিক্ষার সুযোগকে অন্যায্যভাবে ভাগ করা হয়েছে৷ যারা সমাজের উপরের দিকে উঠতে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে, তাদের কাছে ভালো শিক্ষা এক দুষ্প্রাপ্য বিষয়৷ অথচ সামাজিক সচলতা অর্জনে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷ সমাজের সবচেয়ে গরীব শ্রেণি এক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় থাকে৷ একটি সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য যেসব মৌলিক বিষয়াদি প্রয়োজন সেগুলো থেকেও প্রায়ই বঞ্চিত হয় এই শ্রেণি৷ ফলে বিদ্যালয়ে যোগ দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না, এমনকি সেটা বিনামূল্যের ব্যবস্থা হলেও৷
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা সমাজের একটি বড় অংশের প্রতি ন্যায়বিচার করছে না৷ দুই-স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা, যা সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলের মধ্যে ব্যবধান তৈরি করছে -- পুরো পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে৷
রাজনীতিবিদরা শিক্ষার জন্য অর্থ প্রদান এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাঝে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণে আপাতদৃষ্টিতে অপরিহরণীয় উভয়সঙ্কট সৃষ্টি করেছে৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে তাদের দেশের সম্পদ ব্যবহারে আরো সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে শিক্ষা৷
আর্থিক মূলধনের অভাবে কাঠামোগত পরিবর্তন স্থগিত রাখার পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না৷ শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের ফলে শুধুমাত্র এককভাবে কোনো ব্যক্তি নয়, বরং পুরো জাতিই লাভবান হবে৷ বৃহৎ অর্থে একটি জাতির কর্মদক্ষতার স্তর বেড়ে যাবে এবং এতে করে ভবিষ্যতের অনেক ক্ষতি এড়ানো যাবে৷ ফলে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগের ফায়দা অনেক দিক থেকেই কয়েকগুন বেড়ে যাবে৷
শিক্ষাখাতের উন্নয়নে মৌলিক সমাধান -- যা আজ না হোক কাল সবাইকে বুঝতে হবে -- সেটি হচ্ছে শিক্ষাদানের পদ্ধতির উন্নয়নে বড় সংস্কার৷ একটি স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থার আওতায় শিক্ষাদানের সঙ্গে সম্পৃক্তদের মজুরি বাড়িয়ে এবং আরো ভালো সুযোগসুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এই সংস্কার সম্ভব৷ সেক্ষেত্রে অধিকাংশ শিক্ষক আর সমৃদ্ধ জীবনযাপনের আশায় বেসরকারি ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে অধিক অর্থ উপার্জনের দিকে মনোযোগী হবে না৷
মনে রাখতে হবে, শিক্ষা বলতে শুধু বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণকেই বোঝায় না৷ এটি একটি জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার মৌলিক লক্ষ্য৷
প্রতিবেদন: হানান বাডর / এআই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ