শিশু আইনে কী আছে?
আগামী দিনের জাতি গঠনে পূর্ণমাত্রায় শিশুর মেধা বিকাশ নিশ্চিত করা এবং শিশুর কল্যাণ, সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শিশু আইন, ২০১৩ প্রণীত হয়েছে৷ কী আছে এই আইনে?
শিশুর সংজ্ঞা
শিশু আইন, ২০১৩-এ (http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-details-1119.html) বলা হয়েছে, ‘বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ব্যক্তি শিশু হিসেবে গণ্য হইবে৷’
আইনে কী আছে?
শিশু আইনে ১০০টি ধারা আছে৷ ১ থেকে ৪ নম্বর ধারায় সংজ্ঞা, ৫ ও ৬ নম্বর ধারায় প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য, ৭-১২ ধারায় শিশু কল্যাণ বোর্ড ও তার কার্যাবলি, ১৩-১৫ ধারায় শিশুবিষয়ক ডেস্ক, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা ইত্যাদি, ১৬-৪৩ ধারায় শিশু আদালত ও তার কার্যাবলি, ৪৪-৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার, তদন্ত, বিকল্প পন্থা এবং জামিনের কথা আছে৷
আরও যা আছে
শিশু আইন, ২০১৩-র ৫৫-৫৮ ধারায় আইনগত প্রতিনিধিত্ব ও সহায়তা, ৫৯-৬৯ ধারায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র এবং প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান, ৭০-৮৩ ধারায় শিশুসংক্রান্ত বিশেষ অধিকারসমূহের দণ্ড, ৮৪-১০০ ধারায় বিকল্প পরিচর্যা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে৷
শিশু আদালত
শিশু আইনে বলা হয়েছে, শিশুর মাধ্যমে সংঘটিত যে-কোনো অপরাধের বিচার করবে শিশু আদালত৷ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীন গঠিত প্রত্যেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্বীয় অধিক্ষেত্রে শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হয়৷
অভিযুক্ত শিশুদের কোথায় রাখা হবে?
অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত অথবা বিচারে দোষী সাব্যস্ত শিশুকে সাধারণ জেলহাজতের পরিবর্তে নিরাপদ হেফাজতে বা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখতে হবে৷ বাংলাদেশে দুটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র আছে৷ একটি যশোর, দুটি গাজীপুরে৷
ইউনিফর্ম পরা যাবে না
শিশুর বিচার চলাকালে আইনজীবী, পুলিশ বা আদালতের কোনো কর্মচারী আদালতকক্ষে তাদের পেশাগত বা দাপ্তরিক ইউনিফর্ম পরতে পারবেন না৷ উপরের ছবিটি প্রতীকী৷
হাতকড়া পরানো যাবে না
গ্রেপ্তার করার পর কোনো শিশুকে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি বা রশি লাগানো, কোনো শিশুকে নিবর্তনমূলক আটকাদেশ-সংক্রান্ত কোনো আইনের অধীন গ্রেপ্তার বা আটক করা নিষেধ৷
শিশু আইন কিশোর গ্যাং দমনে বাধা?
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সারাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২২৫টি৷ কিশোর গ্যাং-এর সদস্যদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে৷ শিশু আইন কিশোর গ্যাং দমনে বাধা কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
শিশু শ্রমিক
বাংলাদেশের শ্রম আইনে বলা হয়েছে, ১৪ বছর বয়সের নিচে কোনো শিশুকে শ্রমে নিযুক্ত করা যাবে না৷ গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, দেশে এখন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৬ হাজার৷ তাদের বয়স পাঁচ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে৷ শ্রমজীবী শিশুদের ১০ লাখ ৬৮ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে যুক্ত৷ ঝুঁকি নেই এমন কাজে যুক্ত আছে সাত লাখ সাত হাজার শিশু৷
আন্তর্জাতিক আইন
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সংজ্ঞায় পাঁচ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত শিশু ধরা হয়৷ এরমধ্যে পাঁচ থেকে ১১ বছরের শিশুরা সপ্তাহে এক ঘণ্টা, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সি শিশু সপ্তাহে ২৫ ঘণ্টা এবং ১৪ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করালে তাকে শিশু শ্রম হিসেবে গণ্য করা হয়৷ বিবিএসের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার৷