আদালতের নতুন নির্দেশিকা
১৯ আগস্ট ২০১২শিশু নিগ্রহের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেসব ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়, এবং সংশ্লিষ্ট সেই শিশুর পরিচয় মিডিয়াতে যেভাবে তুলে ধরা হয়, তাতে আদালত যারপরনাই ক্ষুব্ধ৷ সমাজে শিশুরা হামেশাই শোষণ, যৌন নিগ্রহ, পাচার, জীবনের নিরাপত্তা, মানসিক পীড়ন এবং সংগঠিত অপরাধের শিকার হয়ে থাকে৷ সেটা সামাজিক ও মানসিক দিক থেকে আরো মারাত্মক হয়ে ওঠে যখন তা সবিস্তারে তুলে ধরা হয় মিডিয়াতে৷
সম্প্রতি জনৈক আইনজীবীর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে দিল্লি হাইকোর্ট এক বিশেষ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়৷ কমিটিতে ছিলেন জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড, জাতীয় শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশন, এনজিও, মিডিয়া ও ভারতের প্রেস কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা৷ তাঁদের সুপারিশ করা নির্দেশিকায় বলা হয়, শিশুর পরিচয়, অর্থাৎ নামধাম, ঠিকানা, ছবি, স্কুলের নাম বা মা-বাবার পরিচয় ইত্যাদি যেন মিডিয়াতে তুলে ধরা না হয়৷ খবর হিসেবে প্রচার করার সময় যেন যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা হয়৷ কারণ, এই সব শোষণের ঘটনা প্রচার করলে তাদের সামাজিক লজ্জা, মানসিক চাপ এবং আবেগ দারুণভাবে আহত হয়৷ মিডিয়ার উচিত শিশু সংক্রান্ত খবরাখবর প্রচার এবং মত প্রকাশ ও জানার অধিকারের মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখা৷
মালদার সহযোগিতা সমিতি নামে একটি শিশু সুরক্ষা এনজিও'র সভাপতি রবিশঙ্কর ঘোষ সে কথাই বললেন ডয়চে ভেলেকে৷ নিগৃহীত শিশু বৈষম্যের শিকার হয়৷ তার স্কুলে যাওয়ার অসুবিধা হয়, তাকে সমাজে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে৷ এমন কী তার বাবা-মাকেও নানা প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হয়৷ এর জন্যই আদালত মনে করছে যে, কোথাও একটা নৈতিক বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ মিডিয়া নিশ্চয় খবর করবে, কিন্তু তাদেরও একটা নীতি থাকা উচিত, কতটা বলবো, কতটা বলবো না৷
উল্লেখ্য, যে আইনজীবী জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন তিনি দু'বছরের একটি শিশু কন্যাকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাস্তা থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান৷ শিশুটির মাথায় আঘাত, হাত পা ভাঙা, শরীরে মানুষের দংশনের চিহ্ন৷ পুরো ঘটনাটাই কিন্তু ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয় ফলাও করে৷
তাই আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার৷ শিশু অধিকার পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা চাই৷ শিশুদের প্রধান অধিকার চারটি৷ বেঁচে থাকার অধিকার, সুরক্ষার অধিকার, বিকাশের অধিকার এবং মতপ্রকাশের অধিকার৷ আর দরকার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি৷ অথচ সে জায়গাটা দেশে খুব কম রয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷
প্রতিবেদন: অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ