শিশু মৃত্যু
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ভিটামিন এ'র অভাবে হাম ও ফুসফুসের সংক্রমণের মত রোগ ব্যাধিও সহজেই বাসা বাঁধতে পারে৷ বিশেষ করে বাচ্চারাই এসব রোগের কবলে পড়ে৷ এ কারণে বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশে কয়েক দশক ধরে শিশুদের জন্য ভিটামিন-এ সরবরাহের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে৷
দরিদ্র দেশের শিশুদের প্রথম কয়েকটা বছরই বেশ বিপজ্জনক৷ ৮০ লক্ষ শিশু পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করে৷ সোমালিয়া থেকে বাংলাদেশ, পাকিস্তান সব দেশেই প্রায় একই রকম অবস্থা৷ অধিকাংশ শিশুই অপুষ্টিতে ভোগে, যার ফলে সংক্রামক রোগগুলিও সহজেই তাদের পেয়ে বসে৷ পাকিস্তানের করাচি শহরের আগা খান ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের শিশু চিকিত্সক ডা. জুলফিকার ভুট্টাএই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাচ্চাদের ভিটামিন এ-র ড্রপ খেতে দেয়া হয়৷ এগুলো থাকে ক্যাপসুলের মধ্যে৷ ক্যাপসুলটি শুধু খুলে ফেললেই হল৷ কাজটা খুব সহজ৷''
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগ
বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা সেই ১৯৮৭ সাল থেকেই অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ভিটামিন-এ সরবরাহ করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে৷ তবে অনেক বিশেষজ্ঞ ভিটামিন এ'র কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে থাকেন৷ কেননা কেউ ঠিক মত জানেনা, ভিটামিন-এ শিশুদের কতটা সাহায্য করে৷ কোনো কোনো চিকিত্সক ভিটামিন- এ'র আদৌ কোনো উপকারিতা আছে কিনা, সে বিষয়ে সন্দিহান৷ এ কারণে জুলফিকার ভুট্টা ও তাঁর টিম নতুন করে ভিটামিন-এ নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে তা প্রকাশ করেছেন৷ জুলফিকার ভুট্টা জানান, ‘‘আমাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভিটামিন-এ'র বেশ বড় উপকারিতা রয়েছে৷ ভিটামিন-এ চার জনের মধ্যে এক জন শিশুর জীবন রক্ষা করতে পারে৷ বিশেষ করে সেই সব দেশে, যেখানে শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে এবং যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন পায় না৷''
বহু শিশুর জীবন রক্ষা করতে পারে
গবেষকরা জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত ভিটামিন-এ প্রতি বছর ৬ লক্ষ ছেলেমেয়ের জীবন রক্ষা করতে পারে৷ বছরে দুটি ডোজই যথেষ্ট৷ ভিটামিন-এ শরীরে জমা হয়ে থাকে, যা প্রয়োজনে কাজে লাগে৷ ডা. জুলফিকার ভুট্টা মনে করেন, এই ভিটামিন বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রামক ব্যাধিকে সহজেই মোকাবেলা করতে পারে৷
তাঁর ভাষায়, ‘‘আমাদের বিশ্লেষণে লক্ষ্য করেছি যে, ভিটামিন- এ মৃত্যুর ঝুঁকিই শুধু কমায় না, এটি ডায়রিয়া ও হামের মত রোগকেও প্রতিরোধ করে৷ পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের এক পঞ্চমাংশ মারা যায় ডায়রিয়ায়৷ এই ধরনের রোগে মৃত্যু কমাতে ভিটামিন যে কতটা জরুরি তা সহজেই বোঝা যায়৷''
ভিটামিন এ ক্যাপসুলের দাম খুব বেশি নয়৷ উন্নয়নশীল অনেক দেশে হামের টিকার সঙ্গেও এই ভিটামিন দেয়া হয়৷ বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থার নিউট্রেশন ফর হেল্থ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ফ্রানচেস্কো ব্রাংকা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘টিকার মাধ্যমে দেয়ার পরিবর্তে অনেক দেশে এখন সাধারণ স্বাস্থ্যসেবার আওতায় ভিটামিন দেয়া হচ্ছে৷ সে ক্ষেত্রে, আমরা লক্ষ্য করেছি, বেশ কম শিশুই ভিটামিন-এ পাচ্ছে৷ এই দেশগুলির উচিত হবে তাদের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে লক্ষ্য রাখা, যাতে করে যত বেশি সম্ভব বাচ্চা এই ভিটামিনের সুফল পেতে পারে৷''
মা বাবাকে সচেতন হতে হবে
ডা. জুলফিকার ভুট্টা মনে করেন, বাবা মাকেও এই ব্যপারে এগিয়ে আসতে হবে৷ তাঁর স্বদেশ পাকিস্তানে বাচ্চারা টিকা কর্মসূচির মাধ্যমে ভিটামিন-এ পেয়ে থাকে৷ কিন্তু অনেক বাবা মা বাচ্চাদের টিকা দেয়ার ব্যাপারে উত্সাহ দেখান না৷ এছাড়া ভিটামিন-এ ক্যাপসুল অনেক সময় সঠিকভাবে সংরক্ষিত এবং দ্রুত বিতরণ করা হয় না৷ তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানে আমরা এক বড় জরিপ চালিয়ে লক্ষ্য করেছি যে, অনেক শিশুই ভিটামিনের অভাবে ভুগছে৷ গত পাঁচ বছরে এই প্রবণতা আরো বেড়ে গেছে৷ বৃদ্ধি পেয়েছে দারিদ্র্যও৷ পাকিস্তানে আমাদের ভিটামিন- এ প্রদানের কর্মসূচি রয়েছে৷ কিন্তু এই কর্মসূচির উন্নয়ন করতে হবে, যাতে সব মানুষের কাছেই এই ভিটামিন পৌঁছাতে পারে৷''
সব শিশুরই পুষ্টিকর খাবার পাওয়ার অধিকার আছে, মনে করেন ডা. জুলফিকার ভুট্টা৷ কম পক্ষে তাদের কাছে ভিটামিন এ পৌঁছে দিতে হবে৷ আর তা না হলে ব্যাপারটা হবে অনৈতিক৷ তাঁর সমীক্ষা এটাই প্রমাণ করেছে৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক