ভারতের শিশু সৈনিকরা
১১ মে ২০১৩ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্য মনিপুর থেকে গত বছরের এপ্রিলে তিন ‘টিএনএজার'-কে অপহরণ করা হয়৷ পরিবারের ধারণা, আত্মগোপনে থাকা কোনো চরমপন্থী গোষ্ঠী তাদেরকে অপহরণ করেছে৷ তিন টিএনএজারের বাবা-মা এই বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও করেছেন৷ কিন্তু অপহৃতদের কোনো সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি৷ কোনো রকম চিহ্ন ছাড়াই হারিয়ে গেছে এই তিনটি প্রাণ৷
মনিপুর রাজ্যে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের এভাবে হারিয়ে যাওয়া এখন আর অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়৷ আর এভাবে হারিয়ে যাওয়াদের মধ্যে যাদের সন্ধান পরবর্তীতে পাওয়া গেছে, তাদের অধিকাংশই ছিল সৈনিকের বেশে৷
শুধু মনিপুর নয়, উড়িষ্যাতেও শিশু সৈনিকের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ গত বছর উড়িষ্যার পুলিশের কাছে অস্ত্রসমপর্ণ করে পাঁচ কিশোরী৷ ২০০৮ সালে মাওবাদীরা তাদেরকে অপহরণ করেছিল৷
আত্মসমর্পন করা এই পাঁচ কিশোরীর একজন শান্তি শয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি শুরুতে অস্ত্র বহন এবং আক্রমণের প্রশিক্ষণ পাই৷ এরপর তারা আমাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেয়৷ আমি কয়েকটি আক্রমণেও অংশ নিয়েছি৷''
সম্প্রতি এশিয়া সেন্টার পর হিউম্যান রাইটস (এসিএইচআর) ‘ভারতের শিশুযোদ্ধারা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ এতে ভারতে শিশু সৈনিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন চরমপন্থী গোষ্ঠী ছাড়াও সরকারের দিকেও আঙুল তোলা হয়েছে৷ এসিএইচআর এর পরিচালক সুহাশ চাকমা এই বিষয়ে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কমপক্ষে তিন হাজার শিশুর বিষয়ে আমরা জেনেছি, যাদেরকে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল এবং জম্মু কাশ্মীর থেকে সশস্ত্র গোষ্ঠী অপহরণ করেছে৷ অধিকাংশ অপহৃত শিশুকে মাওবাদীরা সৈনিক হিসেবে ছয়টি রাজ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে৷''
চাকমা জানেন, শিশুদেরকে সৈনিক হিসেবে ব্যবহারের এই বিষয়টি ভারত সরকার জানে৷ কেননা শত শত শিশু সৈনিক অন্য কেউ নয়, খোদ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি. চিদাম্বরমের সামনে আত্মসমর্পণ করেছে৷
এসিএইচআর এর প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সি শত শত শিশুকে ‘আজ্ঞাবাহক' হিসেবে নিয়োগ করেছে মধ্য প্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের পুলিশ৷ ঝাড়খন্ডের হিউম্যান রাইটস মুভমেন্ট সংগঠনের মহাসচিব গ্লাড্সটন ডুংডুং এই বিষয়ে বলেন, ‘‘এসব শিশু শুধু শিক্ষার অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না, বরং তাদেরকে সেসব বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে যারা সন্ত্রাস প্রতিরোধে লড়াই করছে৷ ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী অতীতে শিশুদের গুপ্তচর এবং বার্তাবাহক হিসেবে ব্যবহার করেছে৷''
ভারত সরকার অবশ্য মানবাধিকার সংগঠনগুলোর এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷