শীতে শীত নেই কেন?
১৬ জানুয়ারি ২০১৬টেলিভিশনে আবহাওয়া বিশারদরা যথারীতি আজোরেস দ্বীপপুঞ্জ থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস উত্তরপূর্ব দিকে বইছে ইত্যাদি বলে চলেছেন৷ তা ভালো৷ কাজেই বুকমেকাররা বড়দিনের এক সপ্তাহ আগেই হোয়াইট ক্রিসমাসের উপর বাজি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ সে-ও ভালো৷ পাড়ার ‘পাব'-এ কেউ জলবায়ু পরিবর্তনের কথা শুনতে রাজি নন৷ সেখানকার ক্রিসমাস ট্রি-র ওপর এয়ারোসল দিয়ে বরফ করা হয়েছিল৷
কিন্তু বছরের এই সময়ে ইউরোপের ‘ওয়েদার ফ্রন্ট'-গুলো আসে সাধারণত উত্তর-পশ্চিম বা উত্তর-পূর্ব থেকে৷ যার অর্থ হিমেল বাতাস আর বরফ৷ কাজেই এবার বড়দিনে যা ঘটছে, তা কি একটা অঘটন, নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাইলস অ্যালেন-এর মতে দ্বিতীয়টা৷ যুক্তরাজ্য আর পশ্চিম ইউরোপে শীতকাল হবে অনেক বেশি উষ্ণ এবং আর্দ্র৷ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটেছে, তা ১৯১০ সালে যখন হিসেব রাখা শুরু হয়, সে'যাবৎ সর্বোচ্চ৷
ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল ভেসে গেছে৷ তা-তেই যথেষ্ট নয়: এই ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের গড় তাপমাত্রা ছিল সাধারণের ৪ দশমিক ১ ডিগ্রি ওপরে!
বিশ্বের অন্যত্র পরিস্থিতি অনুরূপ৷ দক্ষিণ অ্যামেরিকায় বন্যা৷ ডিসেম্বরের শেষাশেষি সুমেরুতে দাবদাহ! দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে চরম খরা৷ ভারতে চেন্নাই জলে ডোবা৷ এ সব কিছুই কি এল নিনিও-র দোষে? আরো বড় কথা হলো, মানুষজন যেন ভ্রুক্ষেপই করছে না৷ কয়েক সপ্তাহ আগে প্যারিসে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে কিছু কিছু প্রগতি হলেও, আসলে কিন্তু চুক্তিটা বাধ্যতামূলক নয়৷ চুক্তি অনুযায়ী কাজ চললেও শীঘ্র ফললাভের কোনো আশা নেই৷ সেই সময়ের মধ্যে বিশ্বের জলবায়ু একটা পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন-এ পৌঁছে যেতে পারে, যার পরে বিশ্বের উষ্ণায়নকে রোখার আর কোনো পথ বা পন্থা থাকবে না৷
ওদিকে বড়দিনে আমার বন্ধুদের অধিকাংশকে দেখলাম দিব্যি সারা পৃথিবীতে জেট প্লেনে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর আর এসইউভি কেনার গল্প করতে৷ কার্বন ফুটপ্রিন্ট? কিসের কার্বন ফুটপ্রিন্ট? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমাণ ক্রমেই আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ সেই সঙ্গে ফুরিয়ে আসছে সময়: জাগার সময়, ওঠার সময়, কিছু একটা করার সময়৷
বন্ধুরা, আপনি কি গ্রেহেম লুকাসের সঙ্গে একমত? জানিয়ে দিন নীচের ঘরে৷