শুধু খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে একটি গ্রাম
পুরো খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে আছে ঘানার একটি গ্রাম৷ নাম এনজুলেজো৷ সেখানে আছে ঘরবাড়ি, স্কুল থেকে শুরু করে টয়লেট, মন্দির সবই৷ ছবিঘরে থাকছে তার কথা৷
ঘানার ভেনিস!
ইটালির ভেনিসের কথা কে না জানে! পানির উপর যেন পুরো একটি শহর দাঁড়িয়ে আছে৷ ঘানাতে এনজুলেজো নামে এমন একটি গ্রাম আছে যেখানকার ঘরবাড়ি, স্কুল থেকে শুরু করে টয়লেট, মন্দির সবই খুঁটির সহায়তায় টানডানে লেকের পানির উপর অবস্থান করছে৷ তাই তো মাঝেমধ্যেই তাকে ‘ঘানার ভেনিস’ নামে ডাকা হয়৷ রাজধানী আক্রা থেকে প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই গ্রামে প্রায় ৫০০ লোক বাস করে৷
ইউনেস্কো-তে নাম পাঠানো হয়েছে
এনজুলেজোর নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ওঠাতে নাম প্রস্তাব করেছে ঘানা৷ প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এনজুলেজোতে মানুষ আর পরিবেশ যেন একে অন্যের সঙ্গে একেবারে মিশে আছে৷ সেখানকার ইকোসিস্টেম এখনও সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অবস্থায় আছে৷ এছাড়া এলাকায় বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি, বানর, কুমির আর কচ্ছপের দেখা পাওয়া যায়৷
মালি থেকে আসা
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুযায়ী, এনজুলেজোর বর্তমান বাসিন্দাদের পূর্বপুরুষদের বাস ছিল বর্তমানে আফ্রিকার আরেকটি দেশ মালিতে৷ পঞ্চদশ শতকে সেখানকার মানডে সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ায় তাদের পালাতে হয়েছিল৷ সেই থেকে তাদের বিভিন্ন জায়গায় সাময়িকভাবে বসতি গড়তে হয়েছে এবং মাঝেমধ্যেই উৎখাতের শিকার হতে হয়েছে৷
অবশেষে নিরাপদ জায়গায়
মালি থেকে পালানোর পর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে অবশেষে বর্তমান স্থানে তারা নিরাপদভাবে বসতি স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছে৷ টানডানে লেকের উপর বসবাসের কারণে তারা মনে করছে এই লেকই তাদের শত্রু ও আগুনের হাত থেকে রক্ষা করবে৷ এছাড়া তাদের জীবিকারও উৎস হয়ে উঠবে এই লেক৷
পানি দেবতা
লেকই যেহেতু তাদের বাঁচাচ্ছে বলে মনে করছে এনজুলেজোর মানুষ, সেই থেকে তারা পানিকে দেবতা মেনে নিয়ে তার পূজা করে৷ ছবিতে যে ঘরটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি একটি মন্দির৷ পানি দেবতাকে সম্মান জানাতে এটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ মঙ্গলবার সেখানে পবিত্র দিন হিসেবে পালিত হয়৷ নারীদের যাদের রজঃস্রাব হয়েছে তারা সেদিন পানিতে নামতে পারে না৷
আধুনিক গ্রাম
এনজুলেজো গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে৷ আছে স্যাটেলাইট টিভি আর মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক৷ বিদেশি এক তেল কোম্পানির সহযোগিতায় আছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা৷ গ্রামের প্রতিটি বাড়ি কাঠ দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে সংযুক্ত৷ প্রতিটি পরিবারের রয়েছে নিজস্ব রাস্তা৷
শিক্ষক প্রশিক্ষণ
আগে সরকারের পক্ষ থেকে এনজুলেজোর স্কুলের জন্য শিক্ষক পাঠানো হতো৷ কিন্তু এই গ্রামে থাকাটা ‘বিরক্তিকর’ মনে হওয়ায় শিক্ষকরা বেশি দিন সেখানে থাকতেন না৷ তাই এখন গ্রামের সন্তানদেরই প্রশিক্ষণ দিয়ে স্কুল চালানো হচ্ছে৷
আগুন থেকে সাবধান
এনজুলেজোর বাড়ির মেঝেগুলো কাঠ দিয়ে তৈরি হওয়ায় সেগুলোতে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে৷ তাই রান্নার কাজে কাদামাটি দিয়ে তৈরি চুলা ব্যবহার করা হয়৷
মাছ ধরা
লেকে পাওয়া যাওয়া মাছই এনজুলেজো গ্রামের মানুষের প্রোটিনের প্রধান উৎস৷ তাই সেখানকার ছেলেরা অল্প বয়সেই মাছ ধরা, জাল তৈরি ও সেটা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শিখে যায়৷
উর্বর জমি
এনজুলেজো গ্রামের পাশে থাকা দুই হেক্টর জমিতে চাষবাস করে থাকে সেখানকার মানুষ৷ উৎপাদিত পণ্য মূলত নিজেরাই ভোগ করে থাকে৷ কিছু যা উদ্বৃত্ত থাকে সেগুলো ছয় কিলোমিটার দূরের বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়৷ ছবিতে বাবা ও ছেলেকে জমিতে চাষের কাজে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
ইউরোপীয়দের নজর
যে বাড়িটি দেখতে পাচ্ছেন সেটির মালিক স্প্যানিশ এক দম্পতি৷ এনজুলেজোর সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে অনেক বছর আগে সেখানে গিয়ে বসবাস শুরু করেন তারা৷ বর্তমানে তারা একটি রেস্টুরেন্ট চালাচ্ছেন৷ অনেক ইউরোপীয় এখন সেখানে যান ঘুরতে৷
গ্রামবাসীর মতো বসবাস
এনজুলেজো গিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের মতো কয়েকদিন জীবনযাপন করে দেখতে আগ্রহী হন অনেক পর্যটক৷ তাদের জন্যই তৈরি হয়েছে এই বাড়িটি৷