শুধু রাশিয়াই কূটনীতিক হিসেবে গোয়েন্দা পাঠায় না
২৭ মার্চ ২০১৮চলতি মাসের চার তারিখে সাবেক রুশ গোয়েন্দা সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়েকে ব্রিটেনের সলসবেরি শহরের এক বেঞ্চে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়৷ তাঁদের শরীরে বিষ প্রবেশ করাতে ‘নোভিচক' নামে একটি ‘নার্ভ এজেন্ট' ব্যবহার করা হয় বলে ব্রিটেনের অভিযোগ৷ এবং একমাত্র ক্রেমলিনই এর জন্য দায়ী বলেও মনে করছে ব্রিটেন৷ তাদের এই দাবির সঙ্গে একমত যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় ২২টি দেশের সরকার৷ সে কারণে সোমবার ঐসব দেশ একে একে তাদের দেশে থাকা রুশ নাগরিকদের বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়৷
১৪ মার্চ ব্রিটেন প্রথমে ২৩ জন রুশ নাগরিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছিল৷ তাঁরা কূটনীতিক পরিচয়ের আড়ালে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করছিলেন বলে ব্রিটেনের দাবি৷ এরপর সোমবার যুক্তরাষ্ট্র ৬০ রুশ নাগরিককে বহিষ্কারের কথা জানায়৷ এর মধ্যে ৪৮ জন দূতাবাসসহ বিভিন্ন কনস্যুলেটে কর্মরত আছেন৷ বাকি ১২ জন আছেন জাতিসংঘে৷
যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণার পর জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের আরও প্রায় ২১টি দেশ তাদের দেশে কূটনীতিক পরিচয়ের আড়ালে কাজ করা রুশ গোয়েন্দাদের ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে৷ সবমিলিয়ে সোমবার কমপক্ষে ১১৬ জন রুশ ‘গোয়েন্দাকে' বহিষ্কারের ঘোষণা এসেছে৷
এদিকে, অস্ট্রেলিয়া রুশ গোয়েন্দাদের বহিষ্কার করা ছাড়াও রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ বয়কটেরও আভাস দিয়েছে৷
পশ্চিমা দেশগুলোর এমন প্রতিক্রিয়াকে নৈতিক জয় হিসেবে দেখছে ব্রিটেন৷ ‘‘ইইউ, ন্যাটো, অ্যামেরিকাসহ অন্য বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে আমি দারুণ সংহতির বার্তা পেয়েছি,'' সোমবার সংসদকে জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে৷
এদিকে, ব্রিটেনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকোভ৷ অবশ্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার পথ এখনও খোলা বলেও জানান তিনি৷
এর আগে ব্রিটেনের ২৩ জন রুশ গোয়েন্দা বহিষ্কারের জবাবে রাশিয়াও ২৩ জন ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছিল৷
যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে এতজন রুশ এজেন্টকে বহিষ্কারের ঘটনা এবারই প্রথম৷ এর আগে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে ৩৫ জন রুশ নাগরিককে বহিষ্কার করেছিল বারাক ওবামা প্রশাসন৷
গোয়েন্দা সব দেশেরই আছে
মার্কিন কর্মকর্তারা সোমবার জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ১০০-র বেশি রুশ গোয়েন্দা কাজ করছেন৷ তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মাত্র ৬০ জনকে বহিষ্কার করা হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোয়েন্দাগিরি বিষয়টি অবৈধ হলেও এটি একটি আন্তর্জাতিক রীতি হয়ে উঠেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই কূটনীতিক পরিচয়ের আড়ালে বিভিন্ন দেশে গোয়েন্দাপাঠিয়ে থাকে৷ ‘‘শত শত বছর ধরে দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনগুলো শত্রু দেশে গোয়েন্দা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে,'' বলেন ওয়াশিংটনের আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা জাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল ক্রিস্টোফার কস্টা৷ তিনি বলেন, ‘‘সব দেশই একসময় জানতে পারে তাদের মাটিতে কারা গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করছে৷ কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের বহিষ্কার না করে গোয়েন্দাদের উপর নজর রাখাকেই শ্রেয় মনে করে দেশগুলো৷''
কস্টা বলেন, রুশ গোয়েন্দাদের খবর জানার পরও যুক্তরাষ্ট্র সবাইকে বহিষ্কার না করার কারণ, তাদেরও রাশিয়ায় গোয়েন্দা আছে৷ যেহেতু পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়াও একটা ব্যবস্থা নেবে, সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদেরও সে দেশ থেকে বহিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে মনে করেন তিনি৷
জেডএইচ/এসিবি (এএফপি, এপি, রয়টার্স)