ইঁদুরের ব্রেন ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট?
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪গবেষণাটির অভিনবত্ব হলো এই যে, তা-তে দেখার চেষ্টা করা হয়েছিল, বিভিন্ন প্রজাতির মস্তিষ্কের আংশিক ‘মানবিকীকরণ' করলে, তাদের ‘কগনিশন' অর্থাৎ অবধারণ বা বোধ সংক্রান্ত মুখ্য কর্মক্ষমতাগুলি কিভাবে প্রভাবিত হয়৷
বিজ্ঞানীরা মানবমস্তিষ্কের যে জিনটি নিয়েছিলেন, সেটি বাকশক্তি ও ভাষাজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত৷ দৃশ্যত সেই জিনের কল্যাণে সাধারণ ইঁদুরদের গোলকধাঁধায় ছেড়ে দিলে তারা আরো তাড়াতাড়ি খুদকুঁড়ো খুঁজে পায়৷ অর্থাৎ শুধুমাত্র একটি জিনের প্রভাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কি ধরনের বিবর্তনবাদী, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ফলে মানব মস্তিষ্ক তার অসাধারণ ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে পেরেছে৷
এফওএক্সপি২
গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে শত শত ইঁদুরের মগজে এফওএক্সপি২ নামধারী মানব জিনটি ঢুকিয়ে দেন৷ এর আগে ২০০৯ সালেও একটি অনুরূপ পরীক্ষা করা হয়েছিল, যা থেকে দেখা গিয়েছিল যে, এফওএক্সপি২ জিন-যুক্ত ইঁদুরদের মস্তিষ্কে আরো জটিল নিউরোন ও ব্রেন সার্কিটের বিকাশ ঘটেছে৷
সেই পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে এবার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির নিউরোসায়েন্টিস্টরা ইঁদুরদের একটি ‘মেইজ' বা গোলকধাঁধার মাঝখানে ভুট্টার দানা খুঁজে বার করতে শিখিয়েছেন৷ ইঁদুরদের শুধু দু'টি বিকল্প ছিল: প্রথমত গোলকধাঁধা থেকে পরীক্ষাগারের অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের যেটুকু দেখা যাচ্ছে, সে অনুযায়ী পথ চলা: তিন-কোণা বাঁকে চেয়ারের দিকে মোড় নাও; জমিটা মসৃণ হলে ডানদিকে যাবে, খরখরে হলে বাঁ দিকে৷
অফ মাইস অ্যান্ড মেন
মানব জিন সমৃদ্ধ ইঁদুরদের পথের খুঁটিনাটি চিনতে সময় লেগেছে সাতদিন, মানব জিন বিহীন ইঁদুরদের লেগেছে ১১ দিন – প্রোসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ জানিয়েছেন এমআইটি-র বিজ্ঞানীরা৷ মজার কথা, বিজ্ঞানীরা যখন কক্ষটি থেকে সব ধরনের ‘ল্যান্ডমার্ক', অর্থাৎ পরিচিতি চিহ্ন সরিয়ে ফেলেন, যার ফলে শুধুমাত্র পায়ের তলার জমি কিরকম, তাই দিয়ে পথ চেনার উপায় বাকি থাকে – তখন কিন্তু মানব জিন বর্জিত ইঁদুররাই ‘মানবিকীকৃত' ইঁদুরদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে৷
যার অর্থ: মানব জিনটি বোধশক্তির নমনীয়তা বাড়ায়৷ মানব জিনের ফলে সজ্ঞানে স্মরণ করা, আর সহজাত প্রবৃত্তির ফলে পথের খুঁটিনাটি থেকে পথ চিনতে পারা – এই দুই পন্থাকে মেলাতে পারে মানব জিন৷ এবং মানব মস্তিষ্কও যে কখন শিক্ষাদীক্ষা, স্মরণশক্তি থেকে সহজাত প্রবৃত্তির জগতে চলাফেরা করে, সেটাও আজ কেউ বুঝে উঠতে পারেনি৷
তবে এফওএক্সপি২ জিনটি বাকশক্তি ও ভাষাজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত৷ শিশুরা যখন কথা বলতে শেখে, তখন তারা প্রথমে শব্দের আওয়াজ শুনে শব্দগুলো নকল করে – সহজাত প্রবৃত্তি থেকে৷ মধ্য পর্যায়ে তারা শেখে সেই সব শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য৷ তৃতীয় পর্যায়ে তারা আবার সেই সব শব্দই ব্যবহার করে অনায়াসে অবলীলাক্রমে, যেন ভাষা ও বাচনভঙ্গিটা তাদের সহজাত৷ সেটাই কি এফওএক্সপি২-এর বৈশিষ্ট্য নয়?
এসি/ডিজি (রয়টার্স)