শেক্সপিয়ার, গ্যোটে, রবীন্দ্রনাথ?
২৪ আগস্ট ২০১১অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী আপাতত তেমনই একটি কাজ করছেন রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি, পাঠ ও পাঠান্তর নিয়ে৷ বিশ্বসাহিত্যের আঙ্গিকে রবীন্দ্রনাথের স্থান কোথায়, এ' প্রশ্নের উত্তরে সুকান্ত চৌধুরী ডয়চে ভেলে'কে বলেন: ‘‘যদি আমরা রবীন্দ্রসাহিত্যের ব্যাপকতা, তার গভীরতা, তার তাৎপর্য, এটা বিবেচনা করি, তাহলে তিনি যে শেক্সপিয়ার বা গ্যোটে বা দান্তে, এদের চেয়ে কোনো অংশে কম যান, এটা কিছুতেই বলা যাবে না৷ তাঁর এতোগুলি আঙ্গিকে - কাব্য, নাটক উপন্যাস, বিভিন্ন ধরনের - যাকে আমরা এক কথায় প্রবন্ধ বলি আর কি, ‘নন-ফিকশনাল প্রোজ' - এতে এতো রকম লিখেছেন, এতো বিষয়ে লিখেছেন এবং এতো গভীরভাবে লিখেছেন, যাতে সমগ্র মানবজাতির যে কতগুলি সাধারণ মানসিক ও সামাজিক অভিজ্ঞতা, এগুলি যতো গভীরভাবে, সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, এটা তো আমরা শেক্সপিয়ারে যা পাচ্ছি, গ্যোটে'তে যা পাচ্ছি, তার তুলনীয় তো বটেই - তা ছাপিয়ে যাচ্ছে না, তা'ও বলা যায় না অনেক ক্ষেত্রে৷ কিন্তু এ' সবই তো আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে একটা ভাষায়, যেটা যদিও জনসংখ্যার বিচারে পৃথিবীর একটা খুব বহুপ্রচলিত ভাষা, কিন্তু বিশ্ব সংস্কৃতিতে এই ভাষার স্থান কিন্তু এখনও একপ্রান্তে৷ এবং এ' পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের ক'টা আর ভালো অনুবাদ হয়েছে? ফলে একজন বিশ্বকবি বা বিশ্বসাহিত্যিক হতে গেলে বিশ্বময় যে প্রচার ও স্বীকৃতি আমরা আশা করি, সেটা তো রবীন্দ্রনাথ পাননি৷''
তাঁর নিজের সর্বনতুন প্রকল্প রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি নিয়ে, ‘টেক্স্ট' নিয়ে৷ এখানে ঠিক কোন দিকে এবং কী ধরনের কাজ তিনি করছেন এবং করাচ্ছেন, সে'বিষয়ে সুকান্ত চৌধুরী জানালেন: ‘‘এটা সত্যিই একটা নতুন ধরনের কাজ আমরা করছি৷ কাজটা কিন্তু শুধু পাণ্ডুলিপি নিয়ে নয়৷ এটা হচ্ছে পাণ্ডুলিপি এবং ছাপা বই যা, মুদ্রিত পাঠ যেগুলো, রবীন্দ্রনাথের ‘টেক্স্ট', রবীন্দ্রনাথের পাঠ, এটা নিয়ে৷ এই কাজে আমার প্রধান সহযোগী হচ্ছেন আমার সহকর্মী অধ্যাপক শুভা চক্রবর্তী-দাশগুপ্ত৷ এবং আরো অনেক রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে আমরা পরামর্শ পাচ্ছি, বিশেষত শঙ্খ ঘোষ মহাশয় এবং স্বপন মজুমদার মহাশয়৷ বিশ্বভারতী এবং বিশ্বভারতী রবীন্দ্র ভবনের থেকে আমরা প্রচুর সহায়তা পাচ্ছি৷ না হলে কাজটা করা সম্ভব হতো না৷ এবং আমাদের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা প্রযুক্তিবিদ, বিশেষত কম্প্যুটার দিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক সাহায্য পাচ্ছি৷ কারণ কাজটা হচ্ছে, একটা খুব বড় ওয়েবসাইট তৈরি করা, যা'তে রবীন্দ্রনাথের এক একটা রচনার যে নানা রকম পাঠান্তর আছে, সেই সবগুলি তুলে ধরা হবে এবং পাশাপাশি মেলানোর একটা সুযোগ থাকবে৷''
ওয়েবসাইটের ইতিমধ্যেই নামকরণ করা হয়েছে কিনা, প্রশ্ন করলে সুকান্ত চৌধুরী জানালেন: ‘‘ঠিক হয়নি৷ পুরো প্রকল্পটার আবার একটা নাম দিয়েছি৷ এই প্রকল্পটার নাম হচ্ছে ‘বিচিত্রা'৷''
কবে নাগাদ এই ওয়েবসাইটটি ঠিকমতো কাজ শুরু করবে? সুকান্ত চৌধুরী বললেন: ‘‘আমাদের এই প্রকল্প অল্প কয়েক মাস হল শুরু হয়েছে, এই সার্ধশতবর্ষে৷ এর জন্যে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক, তারা আমাদের যথেষ্ট অর্থসাহায্য করছেন৷ এই প্রকল্পটা শেষ হওয়ার কথা ২০১৩ সালের মার্চ মাসে৷ আমরা আশা করছি যে, সব কিছু যদি ঠিকঠাক চলে, তাহলে আগামী বছর, ২০১২-তেই কোনো সময় একটা টার্গেট ডেট আমরা ঠিক করেছি, ধরে রাখতে পারব কিনা জানি না, কিন্তু সেটা হচ্ছে পঁচিশে বৈশাখ৷ অর্থাৎ ২০১২ সালের মে মাসের গোড়ার দিকে আমরা অন্তত কিছু রচনার পাঠান্তর দিয়ে এই ওয়েবসাইটটা চালু করে দিতে পারব৷ এখন প্রশ্ন, ওয়েবসাইটে থাকবে কি৷ থাকবে তাঁর প্রত্যেকটি পাণ্ডুলিপির প্রত্যেকটি পৃষ্ঠার একটা চিত্র৷ মুদ্রিত যে গ্রন্থগুলি, তাদেরও প্রামাণ্য পাঠ যে সব সংস্করণে আছে - কতগুলি বিশেষ সময়ে দেখা যাচ্ছে যে মুদ্রিত পাঠও বদলাচ্ছে৷ যেখানে আমরা এই বদলগুলি দেখতে পাচ্ছি, এই সংস্করণগুলি, সেগুলিরও চিত্র, ‘ইমেজ ফাইল' সেখানে থাকবে৷ তার পাশাপাশি থাকবে ‘টেক্স্ট ফাইল'৷ এবং যেটা হয়তো সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক, আমরা একটা সফটওয়্যারের উদ্ভাবন করেছি, সেই সফটওয়্যারটার নাম ‘পাঠান্তর'৷ এই ‘পাঠান্তর' সফটওয়্যার, এই যে বিভিন্ন পাঠান্তরগুলি আছে, সেগুলি মিলিয়ে, তুলনা করে, তফাৎগুলি আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরে৷''
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক