‘শেষ ইচ্ছা' জানিয়ে নিখোঁজ হন সৌলের মেয়র
১০ জুলাই ২০২০২০১১ সাল থেকে সৌলের মেয়র পাক৷ গতবছর জুনে তিনি তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ তিনি দেশটির শাসক দলের সদস্য ছিলেন৷ ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়েরও আগ্রহ ছিল তার৷
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে সরকারি বাসভবন থেকে বের হন পাক৷ এই সময় তিনি নিজের মেয়ের মোবাইলের ‘অ্যান্সারিং সার্ভিসে' একটি বার্তা রেখেছিলেন৷ পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় পর সেই বার্তা শোনেন মেয়রের মেয়ে৷ এরপর বাবার ফোন বন্ধ পেয়ে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানালে মেয়রের খোঁজ শুরু হয়৷
পাকের মেয়ে জানান, মোবাইলে রেখে যাওয়া তার বাবার বার্তা ‘শেষ ইচ্ছার' মতো শুনিয়েছে৷
ড্রোন ও কুকুর দিয়ে খোঁজ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার মাঝ রাতের পর পাকের মরদেহ খুঁজে পায় পুলিশ৷ সৌলের উত্তরে বুগাক পাহাড়ের ঢালে এক বৌদ্ধমন্দিরের কাছে জঙ্গলে তার মরদেহ পাওয়া যায়৷ তার শরীরে আঘাতে কোনো চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
এদিকে, বাসভবনের এক টেবিলে মেয়রের হাতে লেখা একটি চিঠি পাওয়া গেছে৷ পরিবারের অনুমতি নিয়ে শুক্রবার টেলিভিশনে সেটি প্রচার করা হয়েছে৷ পাক লিখেছেন, ‘‘আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি৷ আমার সঙ্গে আমার জীবনে যারা ছিলেন তাদের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷ আমি আমার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইছি, কারণ, আমি শুধু তাদের কষ্টই দিয়েছি৷ দয়া করে আমার দেহ পুড়িয়ে আমার মা-বাবার কবরে ছড়িয়ে দেবেন৷''
দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যায় পাকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তার এক সাবেক সেক্রেটারি৷ পাকের বিরুদ্ধে ‘অযাচিত শারীরিক সম্পর্ক' ও ‘অসঙ্গত বার্তা পাঠানো'র অভিযোগ আনা হয়৷
পুলিশ এই অভিযোগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি৷ দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুযায়ী, পাকের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে৷
সৌলের শহর কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ সম্পর্কে ‘অবগত নয়' বলে জানিয়েছে৷
পাকের পরিচয়
১৯৭০-এর দশকে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন ৬৪ বছর বয়সি পাক৷
পরবর্তীতে মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন৷ আশি ও নব্বইয়ের দশকে রাজনৈতিক কর্মীদের হয়ে আইনি লড়াই করেছেন৷
দেশের মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসমতার নিয়মিত সমালোচক ছিলেন৷
২০১৭ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আয়োজিত ‘মোমবাতি বিক্ষোভের' অন্যতম আয়োজক ছিলেন৷ এই প্রতিবাদের কারণে ক্ষমতা হারিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট পাক গুন-হে৷
জুলিয়ান রায়াল/জেডএইচ