শেষ মুহূর্তে কী সিদ্ধান্ত নেবে ঐক্যফ্রন্ট?
২৬ ডিসেম্বর ২০১৮তবে সেটা সম্পূর্ন নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের ওপর৷ ''মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের সময়ই সংকটের সূত্রপাত৷ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ঐ সময় ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়৷ তারপরই বৈঠক বয়কট করে বের হয়ে আসেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা৷ পরে বিকেলে এক জরুরি বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তাৎক্ষণিক পদত্যাগের দাবি জানান৷
এরপর নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে থাকে– ঐক্যফ্রন্ট কি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে? বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন বর্জন বা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর একটি আলোচনা নেতাদের মধ্যে আছে৷ তবে এটা কোনো চূড়ান্ত মতামত নয়৷ নির্বাচনে থাকার মতামতই প্রবল৷ নির্বাচনে থাকলে কী লাভ হবে আর সরে দাঁড়ালে কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে৷ নির্বাচন থেকে সরে আসার দিকে তরুণ নেতাদের ঝোঁক বেশি৷ তবে সিনিয়র নেতারা মনে করেন, নির্বাচন যেহেতু আন্দোলনের অংশ, তাই নির্বাচনে অংশ নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে৷ সিনিয়র নেতারা মনে করেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে আওয়ামী লীগই বেশি সুবিধা পাবে৷
আর বিএনপিতে নির্বাচনে থাকা-না-থাকার মধ্যে এক ধরনের হিসাব-নিকাশ কাজ করছে বলে জানা যায়৷ হিসেবটা হলো– নির্বাচন পরবর্তী নেতৃত্ব এবং বিএনপির নিবন্ধন৷ নিবন্ধন জটিলতা থাকবে না৷ কারণ, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও কাগজে-কলমে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলেই ধরতে হবে৷
এদিকে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থী মনোনয়নের সময়ে লন্ডনে বসে স্কাইপে পুরো মাত্রায় সক্রিয় থাকলেও এখন তার এ ধরনের কোনো নির্বাচনি তৎপরতা চোখে পড়ছে না৷
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন তাঁর নির্বাচনি এলাকা দাউদকান্দিতে৷ সেখান থেকে তিনি টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি যেহেতু ঢাকায় নেই, আমার কাছে অনেক তথ্যই স্পষ্ট নয়৷ ড. কামাল হোসেন সাহেব নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন৷ কাল (বৃহস্পতিবার) ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক আছে৷ ওই বৈঠকেই আসলে বোঝা যাবে কী হয়৷ ওখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে৷''
জানা গেছে,নির্বাচনের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে ঐক্যফ্রন্ট, তথা বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গে নানা মাধ্যমে কথা বলে মতামত নেয়া হচ্ছে৷ তাঁদের নির্বাচনে থাকা এবং সরে দাঁড়ানো দু'ধরনের মতামতই পাওয়া যাচ্ছে৷ কারো কারো মত হচ্ছে,‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচনে টিকে থাকা খুবই কঠিন৷''
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার চায় না আমরা নির্বাচনে থাকি৷ পুলিশ আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করছে৷ শত শত লোককে ধরছে৷ এক চট্টগ্রামেই পাঁচ হাজার লোককে ধরেছে৷ ভোটকেন্দ্রে আমাদের কোনো পোলিং এজেন্ট থাকবে না৷ তারপরও আমরা নির্বাচনে আছি৷ আমরা জনসাধারণকে বলেছি আপনারাই ভোটকেন্দ্রে যান৷ আপনারাই আমাদের এজেন্ট৷ আমরা আছি৷''
সিইসি'র সাথে মঙ্গলবারের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সিইসি পুরোপুরি পার্টিজান৷ পুলিশ ১০ দিনে ১৫৬ জনকে অ্যারেস্ট করেছে নতুন মামলায়৷ পুলিশের এই যে দলীয় অবস্থা, তা শুনতে চান না সিইসি৷''
বৃহস্পতিবারের বৈঠকের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো যে, আমরা মার খাবো, না প্রতিহত করব, আত্মরক্ষা করব৷ আর নির্বাচনে আমরা এখনো আছি৷ আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছি৷ তিনি পদত্যাগ করলে নির্বাচনে কেনো সমস্যা হবে না৷ ৩০ তারিখেই নির্বাচন হবে৷ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের মধ্য থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন৷''
সিইসি যদি পদত্যাগ না করেন তাহলে ঐক্যফ্রন্ট কী সিদ্ধান্ত নেবে? ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা তো এখনো নির্বাচনে আছি৷ কী হবে?''
পরিস্থিতি বিবেচনায় মঙ্গলবার ঢাকাসহ সারা দেশে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রচার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ছিল৷ তবে কেউ কেউ প্রচার চালিয়েছেন৷ কিন্তু বুধবার থেকে আবার প্রচার চলছে৷ সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বগুড়ায় নির্বাচনি সফরে যাওয়ার আগে ঢাকায় বলেন, ‘‘আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার জন্য চেষ্টা করছি৷ তবে এটা এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করছে নির্বাচন কমশিনের ওপর৷ আমরা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান করবো, ভয়াবহ কর্মকাণ্ড থেকে তারা যেন বিরত থাকে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখনো ইসি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি৷ যেখানে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও হামলার শিকার হচ্ছে, গায়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলা হয়েছে, সুব্রত চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে, সেখানে নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু হবে, এ বিষয়ে জনমনে বড় একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘ আমরা ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বৈঠকে বসবো৷ সেখানে এসব বিষয় নিয়ে কথা হবে৷ আমরা সিদ্ধান্ত নেবো৷''
কী নিয়ে আলোচনা হবে বা কী সিদ্ধান্ত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সেটা বৈঠকের পরই জানা যাবে৷''
জানা গেছে, বিএনপি, তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ওপর সরাসরি হামলা তাদের বেশি চিন্তিত করে তুলেছে৷ ড. কামাল হোসেন বুধবার সাংবাদিকদের বলেন,‘‘সারাদেশে ধরপাকড় চলছে৷ জেলায় জেলায় ফোন করে বলা হচ্ছে, প্রার্থীদের ওপর হামলা ও আটক করা হচ্ছে৷ এটা অস্বাভাবিকভাবে হচ্ছে৷''
ঐক্যফ্রন্টের বৃহস্পতিবারের বৈঠকের সময় এখনো নির্ধারণ হয়নি৷ নেতারা সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন৷ প্রয়োজনীয় মতামত নিচ্ছেন৷ এ নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মধ্যেও চাঞ্চল্য দেখা গেছে৷