শেষ রাতের নাটকীয়তার অপেক্ষায় জলবায়ু আলোচনা
১৪ ডিসেম্বর ২০১৮এবার পোল্যান্ডের কাটোভিৎসে শহরে জাতিসংঘের আয়োজনে জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা কপ২৪ নামে পরিচিত৷ কপ মানে হচ্ছে ‘কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিজ'৷ এখানে পার্টি বলতে একেকটি দেশকে বোঝানো হচ্ছে৷ জাতিসংঘের আয়োজনে এবার ২৪তম বারের মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷
দুই সপ্তাহব্যাপী এই সম্মেলনের এবারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ২০১৫ সালে প্যারিসে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাস্তবায়নের নীতিমালা তৈরি করা, যাকে ‘রুলবুক' বলছেন আলোচকরা৷ কিন্তু শুক্রবার আলোচনার শেষ দিনে এসেও আলোচকরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছেন না যে, একটি রুলবুক পাওয়া যাবে৷
সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী আশা করছেন, শেষ দিনে হয়ত একটি রুলবুক চূড়ান্ত হবে৷ কিন্তু সেটি ‘অত কমপ্রিহেন্সিভ' হবে না বলে তিনি মনে করছেন৷ ‘‘কিছু কাজ হয়ত আগামী কপে শেষ হবে,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন পরিবেশ সচিব৷
তবে বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট'- এর পরিচালক সালিমুল হক আশা করছেন, শেষ দিনে রুলবুক চূড়ান্ত হবে৷ ‘কপ নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা বলছে, শেষ দিনে কিছু একটা হবে,'' বলেন তিনি৷ সালিমুল হক বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে একজন, যিনি সবগুলো কপ-এ অংশ নিয়েছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রুলবুকের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়ে গেছে, যা একটি ভালো দিক৷ আর রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে মন্ত্রীরা এখন আলোচনা করছেন৷ আমি আশাবাদী, এই কপ, এই (রুলবুক) হয়ে যাবে৷''
বাংলাদেশের `কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম এখন পর্যন্ত সম্মেলনে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করছেন, এই কপ-এ রুলবুকের কাজ শেষ হবে না। এমনকি আগামী কপ-এও যদি শেষ হয় তাহলে সেটি সৌভাগ্যের বিষয় হবে বলে তিনি মনে করছেন।
রুলবুকে যা থাকবে
২০২০ সাল থেকে প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হবে৷ কিন্তু সেটা কীভাবে হবে তার নিয়ম-কানুন থাকবে রুলবুকে৷ যেমন ধরুন, মিটিগেশন৷ একটি দেশ কী পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাবে, তা কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, তার একটি উপায় বলা থাকবে রুলবুকে৷ সব দেশকে সেটি মেনে চলতে হবে৷ ফলে কোনো দেশ তার নিজের সুবিধামতো নির্গমনের হার ঠিক করতে পারবে না৷
একই কথা প্রযোজ্য অর্থায়নের ক্ষেত্রেও৷ উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দরিদ্র দেশগুলোকে কী পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেবে, তা-ও রুলবুকে লেখা থাকবে৷ ফলে কোনো দেশ চাইলেই কম অর্থ দিয়ে পার পাবে না৷
রুলবুকের আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কোন দেশ কী পরিমাণ নির্গমন কমালো, কত অর্থ সহায়তা দিলো, তা নিয়মিত ভিত্তিতে ঐ দেশকেই জানাতে হবে৷ এরপর সেই তথ্য সঠিক কিনা, সেটি যাচাই করে দেখার কথাও থাকবে রুলবুকে৷
আইপিসিসি'র প্রতিবেদন বিতর্ক
২০১৫ সালের প্যারিস সম্মেলনে নেয়া সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সারা বিশ্বের প্রায় ৯০০ বিজ্ঞানী মিলে গত অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন৷ জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ' বা আইপিসিসির প্রকাশ করা এই রিপোর্টে, শিল্প বিপ্লব শুরুর আগের চেয়ে তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে ক্ষতির পরিমাণ কীরকম হতে পারে, তার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়৷ এছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হলে আগামী ১২ বছরের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন অর্ধেক কমাতে হবে বলে মত প্রকাশ করা হয়৷
কিন্তু তেল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত চারটি দেশ সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও কুয়েত আইপিসিসির এই প্রতিবেদন মেনে নিতে চাইছে না৷ ফলে পোল্যান্ডে চলমান জলবায়ু আলোচনায় আইপিসিসির প্রতিবেদনটি গ্রহণের সিদ্ধান্তের প্রস্তাব করা হলে তাতে আপত্তি জানায় তারা৷
অর্থাৎ, জাতিসংঘের উদ্যোগে তৈরি প্রতিবেদন জাতিসংঘের সম্মেলনেই ‘স্বাগত' হচ্ছে না৷
ঐ চার দেশের এমন মনোভাবের সমালোচনা করেছেন বেশ কিছু দেশের প্রতিনিধি ও বিজ্ঞানীরা৷
তবে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে৷
জলবায়ু সম্মেলনের শেষ দিনে রুলবুক চূড়ান্ত করার পাশাপাশি আইপিসিসির প্রতিবেদনকে ‘স্বাগত' জানানোর বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশসহ অন্য দেশের আলোচকরা৷