1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রমিক অসন্তোষে বিশ্ব বাজারে নেতিবাচক প্রভাব

৩ জুলাই ২০০৯

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে গত কয়েকদিনের শ্রমিক অসন্তোষ বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল তথ্য তুলে ধরেছে৷ যার ফলে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে ও কমে যাবে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা৷

https://p.dw.com/p/IgP3
ছবি: picture-alliance / Godong

এর ফল হিসাবে আরো কমবে শ্রমিকের মজুরি এবং কাজের সুযোগ৷ সাম্প্রতিক শ্রমিক আসন্তোষের এই নেতিবাচক ফলাফলের বিষয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পমালিক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো৷

বাংলাদেশে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা

দু-তিন বছর আগেও বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের এই দুরবস্থা ছিল না৷ বিশ্ব বাজারে কোটা পদ্ধতি উঠে যাবার পর অনেকের আশঙ্কাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেশটির পোশাক কারখানাগুলো বেশ ভালই চলছিল৷ হয়তো এই সব কিছু বিবেচনা করে, একটু ভালো আর স্বচ্ছল জীবনের আশায় বাংলাদেশর দক্ষিণাঞ্চলের কোন এক শহর থেকে রাজধানী ঢাকায় এসেছিল ১৮ বছরের মোহাম্মদ কামালুদ্দীন৷ কিন্তু সময় এবং বাস্তবতা কোনটিই তার দিকে সুনজর দেয়নি ৷ কারণ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে তখন ধীরে ধীরে মন্দা বাতাস বইতে শুরু করেছে ৷

ঢাকা এসে কমালুদ্দীন দেখলো স্বপ্ন থেকে বাস্তব অনেক দূর৷ তার ভাষায়, অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছিলো দিন দিন, ভালো থেকে খারাপের দিকেই৷ দিন যতো যাচ্ছিলো মজুরি কমছিল ততো বেশি ৷ আর কমছিল কাজের সুযোগও৷

Demonstration in Bangladesh
গত কয়েকদিনের শ্রমিক অসন্তোষ বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল তথ্য তুলে ধরেছেছবি: AP

তার মতে প্রথমদিকে বেতন আর ওভারটাইম মিলে মাসে সে হাজার সাত টাকা বা ৭০ ইউরো আয় করতো ৷ সেখান থেকে সে তার পরিবারের জন্য পাঠাতো তিন হাজার৷ কিন্তু এখন সে নিজেই ঠিক মতো চলতে পারে না, টাকা পাঠানো তো দূরের কথা৷

কামালুদ্দীনের মতে ভাগ্য উন্নয়নের জন্য তার সঙ্গে আর যারা ঢাকা এসেছিল পোশাক শিল্প কারখানায় কাজ করতে, তারা এখন পেশা পরিবর্তনের চিন্তা করছে৷ দিনের পর দিন পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর তার মতো অনেক শ্রমিকই প্রতি নিয়ত ভুগছে চাকরি হারানোর ভয়ে৷

বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের বর্তমান আবস্থা

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একজন পোশাক শিল্প শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি হবে ২৫ ডলার বা ১৭৫০টাকা৷ গড়ে বেশির ভাগ শ্রমিকই ওভারটাইম ও মজুরি মিলিয়ে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা মাসে আয় করে৷ তবে দক্ষ শ্রমিকদের আয় অনেকসময়ই দশ হাজার টাকার ওপরে হয়ে থাকে৷

২০০৮ সালের শুরুর দিকেই শ্রমিকদের মজুরি কমতে থাকে চোখে পড়ার মতো হারে৷ ট্রেন ইউনিয়ন নেতা তরিকুল ইসলামের ভাষায়, ২০০৮ সালেই পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কমে ৩০ ভাগ৷ এবারের শ্রমিক অসন্তোষ পরোক্ষভাবে এই মজুরি কমার গতিতে ঘি ঢাললো আরো এক বার৷

বাংলাদেশ সরকারের শিল্প কারখানা তদন্ত বিভাগ এই সপ্তাহে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে ৮২৫টি কারখানার মধ্যে ১২২টি কারখানায় অর্থাৎ প্রায় শতকরা ১৮ ভাগ কারখানাতে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ঠিক সময়ে বেতন দেয়া হয়নি৷ এমন কি তাদের সঠিক বা ন্যায্য বেতনও দেয়া হয়নি ৷ প্রতিষ্ঠানটি আরো বলছে, গেল বছরের নভেম্বর মাসে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের চাহিদা দুই থেকে তিন ভাগ হারে কমছিল ৷ যেখানে বর্তমানে বিশ্বব্যাপি আর্থনৈতিক মন্দার কারণে তা কমেছে ৪০ভাগ৷

বাংলাদেশে পোশাক তৈরি এবং রপ্তানিকারকদের সংগঠনের প্রধান ফজলুল হক মনে করেন, পোশাক শিল্পের এই দুরবস্থা কারণ বিশ্বব্যাপি অর্থনৈতিক মন্দাও৷ আর কিছুদিন আগের শ্রমিক অসন্তোষ বিশ্বব্যাপি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রতি আগ্রহ কমাবে আরো একবার৷

বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প

২০০৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পখাত থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছিল এগারো বিলিয়ন ডলার৷ যা ছিল সবচেয়ে বেশি পোশাক রাপ্তানিকারক দেশ চীনের পরই৷ আন্তর্জাতিক মনিটরি ফান্ড এই তথ্য উপস্থাপন করে বলছে, বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবের কারণে বিদেশে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা কমেছে ৪০ ভাগ৷ শুধু বাংলাদেশেই নয় পাকিস্তান, ভারত এবং চীন তাদের আন্তর্জাতিক চাহিদা হারাচ্ছে এই অর্থনৈতিক মন্দার করণেই৷ কারণ পোশাকের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র তাদের চাহিদাকে সংকুচিত করেছে৷

শ্রমিক অসন্তোষের প্রভাব

এসপ্তাহের শুরুতে ঢাকার অদূরে আশুলিয়াতে শ্রমিক অসন্তোষের করণে একটি কারখানা আগুনে পুড়ে গেছে৷ পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গেছে ১০০টিরও বেশি কারখানা৷ যার ফলে কাজ হারিয়েছে প্রায় কয়েকহাজর শ্রমিক৷ পোশাক তৈরি এবং রপ্তানিকারকদের সংগঠনের প্রধান ফজলুল হক বলছেন, তার সংগঠনে আছে ১৩০০ পোশাক কারখানা৷ সবগুলি কারখানার জন্যই এই শ্রমিক অসন্তোষ মারাত্বক হুমকি৷ কারণ শ্রমিক অসন্তোষের কারণে সঠিক সময়ে সরবরাহ না পাওয়ার আশঙ্কায় আনেক বিদেশী ক্রেতাই পিছু হটবে৷ বিশ্বমন্দার এই সময়ে এধরণের একটি ঘটনা বাংলাদেশের শ্রমবাজার এবং অর্থনীতির জন্য নেতিবাচাক হবে বলেও তিনি মনে করেন৷

তবে বাংলাদেশের একজন উন্নয়ন গবেষণা কর্মী অনয় রহমানের মতে মজুরি এবং জীবনযাত্রার মান কমতে কমতে শ্রমিকদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে৷ তাই বিশ্ব মন্দার প্রভাবের ফল হিসবে এখন যদি তাদের মজুরি আরো কমানো হয় তবে, তাদের ক্ষোভ আরো বাড়তে পারে৷

প্রতিবেদক: ঝুমুর বারী, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য