শ্রীলঙ্কায় নিহতের সংখ্যা দু’শ ছাড়িয়েছে
২১ এপ্রিল ২০১৯আহত আরো অন্তত ৪০০ জন৷
সকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও তার বাইরে প্রায় একইসময়ে তিনটি চার্চ ও তিনটি পাঁচ তারকা হোটেলে বোমা বিস্ফোরিত হয়৷ এর কয়েক ঘন্টা পর কলম্বোর আরো দু’টি জায়গায় দু’টি বোমা বিস্ফোরিত হয়৷
এতে অন্তত ২০৭ জন নিহতের খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত নিহতদের অন্তত ২৭ জন বিদেশি বলে নিশ্চিত করেছে প্রশাসন৷
ইস্টারের প্রার্থনার সময়
ইস্টারের সকালে যখন চার্চগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা চলছিল তখন এ ঘটনাগুলো ঘটে৷ উত্তর কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি'স শ্রাইনে একটি বোমা বিস্ফোরিত হবার ত্রিশ মিনিটের মধ্যে পার্শ্ববর্তী শহর নেগোম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চে ও কলম্বোর পূর্ব দিকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে বাতিকালোয়া শহরের জিয়ন চার্চে বোমা বিস্ফোরিত হয়৷
এছাড়া কলম্বোর কেন্দ্রে অবস্থিত তিনটি পাঁচ তারকা হোটেলেও বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে৷ এএফপি বলছে, স্থানীয় সময় সকাল ৮:৩০ টায় হোটেল সিনামন গ্রান্ডে ও ৯:০৫ টায় হোটেল সাংগ্রিলায় শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয়৷ আক্রান্ত অপর হোটেলটি হলো হোটেল কিংসবুরি৷
এখন পর্যন্ত হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি৷ কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি৷ তবে হামলাগুলোর লক্ষ্য ধর্মীয় উপাসনালয় ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগু বলে উল্লেখ করেছে স্থানীয় গনমাধ্যমগুলো৷ আপাত দৃষ্টিতে সবগুলো হামলাই সমন্বিত বলে ধারণা করছে পুলিশ৷
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা বলেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে৷ তারা এর পেছনে জড়িতদের খুঁজে বের করবে৷ তিনি সবাইকে শান্ত থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো জরুরি বৈঠক করেছে৷ কলম্বোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানো হয়েছে৷
শ্রীলঙ্কার ক্যাথলিক চার্চ প্রধান কার্ডিনাল ম্যালকম রনজিতও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন যে, এই সন্ত্রাসী হামলার পেছনে কোন স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক দল জড়িত তা এখনো পরিষ্কার নয়৷
বিশ্বনেতাদের নিন্দা
বিশ্বনেতারাও ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন৷ আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বলেছেন যে, ‘উপাসনালয়ে হামলা আতঙ্কের বিষয়' এবং তিনি শ্রীলঙ্কার এমন ‘অন্ধকার সময়ে' পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মুখপাত্র টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ইস্টারের প্রার্থনার সময় শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ওপর এই হামলার ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত৷ আমরা তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই এবং আহতদের ও আক্রান্তের পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রার্থনা করি৷ সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতাকে জিততে দেয়া যাবে না৷''
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলু টুইটারে লিখেছেন যে, এই হামলা ‘কাপুরুষোচিত, বর্বর ও ঠান্ডা মাথায় করা', ঠিক যেমনটি নিউজিল্যান্ডে করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের কোনো ধর্ম নেই, জাতি নেই, কোনো ভৌগলিক পরিচয় নেই৷''
ইউরোপীয় কমিশন প্রধান জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার ঘটনায় ‘আতঙ্ক ও দুঃখ' প্রকাশ করেছেন৷ তিনি আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন৷
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক টুইট বার্তায় ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে এমন বর্বরতার কোনো জায়গা নেই৷'' শ্রীলঙ্কার এমন দুঃসময়ে ভারত পাশে আছে বলে জানান তিনি৷
শ্রীলঙ্কার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী৷ বঙ্গভবনের এক শোকবার্তায় ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি৷ শ্রীলঙ্কা সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত ব্যক্তিদের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান৷ প্রধানমন্ত্রী আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন৷
মিশরের আল আজহারের বিবৃতি
সুন্নি মুসলিমদের প্রখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মিশরের আল আজহার রোববার শ্রীলঙ্কায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে৷ এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করে সেখানকার গ্রান্ড ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েব বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারি না কীভাবে একজন মানুষ অন্যদের শান্তিপূর্ণ উৎসব উদযাপনের সময় হামলা করতে পারে৷ ঐ সন্ত্রাসীদের বিকৃত চরিত্র সব ধর্মের শিক্ষার বাইরে৷’’
আল আজহারের টুইটার অ্যাকাউন্টে তাঁর এ বক্তব্য প্রকাশিত হয়৷
ইমাম আল-তায়েব আরো বলেন, ‘‘আমি প্রার্থনা করি ঈশ্বর যেন নিহতদের পরিবারের সদস্যদের এ শোক সইবার ক্ষমতা দেন এবং আহতদের সারিয়ে দেন৷’’
শ্রীলঙ্কায় বেশ কিছুদিন ধরে চলা সিরিসেনার ব্যাপক মাদকবিরোধী অভিযানকে সমর্থন দিয়েছিল ক্যাথলিক চার্চ৷ শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাতে কারফিউ জারি করেছে৷
জেডএ/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)