শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ, আগুন
১ এপ্রিল ২০২২শ্রীলঙ্কায় এখন ভয়াবহ আর্থিক সংকট চলছে। তারই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে প্রেসিডেন্ট হাউসের সামনে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভ দেখান। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে ইস্তফা দিতে হবে।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তেজক হচ্ছে দেখে আধা সামরিক বাহিনীর একটি ইউনিট এবং বিশেষ টাস্ক ফোর্সের একটি ইউনিট মোতায়েন করা হয়। মোট ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংঘর্ষে একজন এএসপি সহ পাঁচজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একটি পুলিশ বাস, একটি জিপ, দুইটি মোটরবাইক পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একটি জলকামান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন।
সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, একটি চরমপন্থি গোষ্ঠী এই প্রতিবাদের পিছনে ছিল। তাদের সব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার অবস্থা
শ্রীলঙ্কায় স্বাধীনতার পর থেকে এরকম আর্থিক সংকট কখনো হয়নি। খাবার-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাল দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার কোথাও ডিজেল পাওয়া যায়নি। ফলে রাস্তায় যানবাহন ছিল না। ১৩ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। ফলে হাসপাতালে সার্জারি হয়নি। সেখানে ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুতের রেশন চালু হওয়ায় মোবাইল ফোন ব্যবহারেও অসুবিধা হয়েছে। কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জ মাত্র দুই ঘণ্টা চালু ছিল। জরুরি নয়, এমন সব বিভাগের কর্মীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিদ্যুৎ বাঁচাবার জন্য রাস্তার লাইট বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সন্ধ্যা থেকেই প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে লোক জড়ো হতে শুরু করে। তারা বলতে থাকেন, প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার এখান থেকে চলে যান। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের বড় ভাই মাহিন্দ্র রাজাপাকসে হলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকসের হাতে অর্থ মন্ত্রণালয় আছে এবং তার আরেক বড় ভাই চামাল রাজাপাকসের কাছে কৃষি মন্ত্রণালয় দায়িত্ব আছে। তার ভাইপো নামাল রাজাপাকসের কাছে ক্রীড়ামন্ত্রণালয় আছে।
দেশজুড়ে প্রতিবাদ
স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
কলম্বোতে পুলিশ জোর করে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে জড়ো হওয়া মানুষদের সরাতে গেলে গোলমাল শুরু হয়। জনতা পাথর ও বোতল ছুঁড়তে শুরু করে। পুলিশ লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে।
জনতা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুজন বাইক-আরোহী পুলিশ কর্মীকে তারা ঘিরে ফেলে। তাদের বাইকেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সংবাদসংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, সেই সময় প্রেসিডেন্ট বাড়িতে ছিলেন না।
বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিভিন্ন রাস্তা অবরোধ করা হয়।
শ্রীলঙ্কা সরকারের ঋণের পরিমাণ ৫১ বিলিয়ান ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর মার্চে আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট দেখা দেয়। জিনিসের দাম ভয়ংকরভাবে বেড়ে যায়।
শ্রীলঙ্কা সরকার পরিস্থিতি সামলাতে আইএমএফ, চীন ও ভারতের কাছ থেকে ঋণ চেয়েছে।
জিএইচ/এসজি (এএফপি, রয়টার্স, এনডিটিভি)