সৌর গবেষণাক্ষেত্র
১৫ অক্টোবর ২০১২জার্মানির সৌর বিদ্যুৎশক্তি কেন্দ্রগুলি ইদানীং বেশ দুরবস্থায় সম্মুখীন হয়েছে৷ সৌরবিদ্যুৎ গবেষণা ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী জার্মানির শীর্ষস্থানটা নড়বড়ে হয়ে উঠছে৷ সোলার সেল ও মডিউল উৎপাদনে লোকসানের পাল্লাটা ভারি হয়ে উঠছে৷ তাই চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে, সৌরবিদ্যুৎ গবেষণা ক্ষেত্রে বিকল্প কোনো পথের সন্ধান পাওয়া যায় কিনা৷
জার্মানির প্রায় ৭০টি গবেষণা ইন্সটিটিউট বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হল ফ্রাইবুর্গের ‘ফ্রাউনহোফার ইন্সটিটিউট ফর সোলার এনার্জি', সংক্ষেপে আইএসই৷ প্রতিষ্ঠানটির কর্মী সংখ্যা ১,২০০ আর এই খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ৭৩ মিলিয়ন ইউরো৷
কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
মেশিনের একঘেয়ে ঘট ঘট শব্দ, লেজার রশ্মির ঝিলিক, নীলাভ সোলার সেলের পাতগুলি কারখানার বেল্টের ওপর দিয়ে একের পর এক এইভাবেই গড়িয়ে যায়: দৃশ্যটি আনন্দিত করে রাল্ফ প্রয়'কে৷ আইএসই'র সোলার সেল টেকনোলজি বিভাগের প্রধান তিনি৷ তাঁর ২০০ সহকর্মীর সঙ্গে সোলার সেল প্রযুক্তির উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন- প্রয়৷ কর্মীরা সবাই অ্যাপ্রন পরে কাজ করেন৷ কোথাও ধুলাবালির চিহ্ন নেই৷
তাদের সবারই এক লক্ষ্য: সিলিকন সোলার সেলের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করা৷ অর্থাৎ এখনকার ১৮ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করা৷ এই সেলের কার্যকারিতা যতই বাড়বে সৌর বিদ্যুৎশক্তির খরচ ততই কমবে৷ গবেষক রাল্ফ প্রয় ও তাঁর টিমের তৈরি এই ধরনের সোলার সেল দক্ষতার দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্ব রেকর্ড ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ তবে বিশ্বের শীর্ষ স্থানটা টিকিয়ে রাখতে হলে তাঁদের এক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রয়োজন৷
কর্মক্ষমতা বেশি, উৎপাদনের খরচ কম, এই হল গবেষক রাল্ফ প্রয়'এর মটো৷
জার্মান সোলার সেল-উৎপাদনকে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে রাখার জন্য তাঁরা সুলভ মূল্যের বিকল্প খুঁজছেন৷ প্রয় বলেন, ‘‘সোলার সেল থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ করতে হলে বিপুল পরিমাণে রূপার প্রয়োজন হয়৷ আমরা সুলভ মূল্যের বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করছি৷ রূপার ব্যবহার কমিয়ে তামা ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তা পূরণ করার কথা ভাবছি৷''
দ্রুত কাজে লাগানো
গবেষক প্রয় তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দ্রুত কাজে লাগাতে চান, সোলার সেল ও সোলার মডিউল, কারখানার উৎপাদনে ব্যবহার করে এগুলির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে চান৷ সৌর বিদ্যুৎশক্তির সুবর্ণ সময়ে বিষয়টি কাজে লেগেছিল৷ অসংখ্য জার্মান সোলার সেল ও মডিউল উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সে সময় আর্থিক সহায়তা নিয়ে গবেষণা প্রকল্পগুলির পাশে দাঁড়িয়েছিল৷ কিন্তু এখন ব্যাপারটি নাজুক হয়ে পড়েছে৷ চীনের প্রতিযোগীরা সুলভ মূল্যের সোলার সেল ও মডিউল তৈরি করে বাজার ছেয়ে ফেলছে৷ জার্মানির বড় ও মাঝারি আকারের সোলার সেল উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলি এখন পিছু হটে আসছে৷ অনেকগুলি টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে৷ কয়েকটি তো দেউলিয়াই হয়ে পড়েছে৷
গবেষক প্রয়'এর কাজেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে: সহযোগী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি সাহায্যের হাত গুটিয়ে ফেলায় তাঁর কয়েকটি গবেষণা প্রকল্প আর্থিক দিক দিয়ে কাবু হয়ে পড়েছে৷ সোলার গবেষণা খাতে বাজেটের এক পঞ্চমাংশই হাত ছাড়া হয়ে গেছে৷ এখন নতুন সহযোগী না পেলেই নয়৷
আকস্মিক সংকট
সৌর বিদ্যুৎশক্তির আকস্মিক এই বিপর্যয়ের প্রভাবটা লক্ষ্য করা যায় ইন্সটিটিউটের গবেষণাগারেও৷ কক্ষটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, নীরব, নিস্তব্ধ৷ মাঝে মাঝে ইলেকট্রনিকের পি পি আওয়াজ আসছে৷ ফটোভোল্টায়িক মডিউল বিভাগের প্রধান হারি ভির্ট ও তাঁর সহকর্মীরা তৈরি মডিউলগুলি পরীক্ষা করে দেখছেন৷ এক ধরনের সুরক্ষা-পর্দা দিয়ে অতিরিক্ত তাপ, ঠাণ্ডা, আর্দ্রতা, ধুলাবালি ইত্যাদি থেকে সোলার সেলকে রক্ষা করতে হয়৷ এই সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন গবেষক টিমটি৷
সৌরবিদ্যুৎ গবেষণার রমরমা অবস্থার সময় হারি ভির্ট শিল্পকারখানাগুলির কাছ থেকে একের পর এক গবেষণার জন্য কাজের অর্ডার পেতেন৷ যন্ত্রপাতিগুলি পরীক্ষা করে দেখতে হতো তাঁর৷ সব ঠিকঠাক থাকলে ছাড়পত্র দিতেন তিনি৷ এখন তো অনবরত প্রকল্পগুলি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে৷ এটাই হারি ভির্ট'কে ব্যথিত করে বেশি৷ কেননা তাঁর শাখায় ৭৫ শতাংশ অর্থই আসে শিল্পকারখানা থেকে৷ হারি ভির্ট বলেন, ‘‘আমরা বহু গুরুত্বপূর্ণ খদ্দের হারিয়েছি, যারা দেউলিয়া হয়ে পড়েছে৷ অনেকেই আর বাইরের কোনো গবেষণার জন্য অর্থ ব্যয়ের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না৷''
বিকল্প খোঁজা
এখনও হারি ভির্ট তাঁর টিমকে ছোট করার কোনো পরিকল্পনা করছেন না৷ তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ কমিয়ে ফেলতে হবে৷ আর এজন্য টিম প্রধান হিসাবে উপযুক্ত কোনো বিকল্প খুঁজতে হবে এই গবেষকের৷ হারি ভির্ট'এর ভাষায়, ‘‘আমাদের এখন শিখতে হবে যে, খদ্দেররা আমাদের কাছে আসবেন না, বরং আমাদেরই তাদের কাছে যেতে হবে৷ বিশেষ করে নতুন নতুন খদ্দের খুঁজতে হবে, তাদের কাছে আমাদের গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ সুবিধা তুলে ধরতে হবে৷''