মোদীর প্রথম অগ্নিপরীক্ষা
১৬ মে ২০১৪নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী হবার সম্ভাবনা তৈরি হতেই হিন্দুত্বাবাদী সংঘ পরিবার নিজেদের চাল চালতে শুরু করেছে৷ অবশ্যই যাতে মোদীর সরকার গঠিত হবার পর, সংঘ পরিবারের গুরুত্ব যেন খাটো না হয়৷ বরং তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য চাপ আসে৷
এই যেমন অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ, জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ নং ধারার বিলোপসাধন এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা ইত্যাদি৷ সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ প্রসঙ্গে নির্বাচনি প্রচারে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, ৩৭০ ধারা মুছে ফেলা হলে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে থাকবে কিনা বলা মুশকিল৷
ওদিকে সংঘ পরিবার মনে করে, বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দির ছিল তার অস্তিত্ব প্রমাণিত৷ সংবিধানের ৩৭০ ধারা একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা মাত্র৷ আর অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এক নির্দেশিক নীতি, যাকে বলে ‘ডায়রেক্টিভ প্রিন্সিপাল'৷ এই তিনটি বিতর্কিত ইস্যুর সমাধান করতে হবে ভারতীয় সংবিধানের এক্তিয়ারের মধ্যেই৷ এইসব দাবি থেকে সরে আসার দরুণ বিজেপিকে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল ২০০৪ সালের নির্বাচনে, এমনটাই মনে করে সংঘ পরিবার৷
সেক্ষেত্রে মোদীর প্রথম অগ্নিপরীক্ষা হবে সতর্কভাবে পা ফেলা, যাতে সংঘ পরিবারের সঙ্গে কোনোমতেই সংঘাতের আবহ তৈরি না হয়৷ পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা যাতে দেখা না দেয়, সেটাও দেখতে হবে মোদী সরকারকে৷
দ্বিতীয় অগ্নিপরীক্ষা সংঘ পরিবার বিজেপির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে যেসব কৌশল অবলম্বন করবে, সংঘাতের পথে না গিয়ে চতুরতার সঙ্গে তার মোকাবিলা করতে হবে মোদীকে৷ মুশকিল হবে, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সরকার গড়তে না পারলে শরিক দলগুলিকেও সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে৷ স্বাভাবিকভাবেই এতে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকবে৷
এ সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা হবে বিজেপির সংসদীয় বোর্ড৷ ফল ঘোষণার পর বসবে বোর্ডের বৈঠক৷ তাতে স্থির হবে সরকারের ভবিষ্যত কৌশলনীতি৷ তার আগেই অবশ্য মোদী তাঁর অতিবিশ্বস্ত কয়েকজনকে নিয়ে একটা ‘কোর' কমিটি তৈরি করেছেন৷ যার মধ্যে আছেন বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিং, নিতিন গডকরি এবং অরুণ জেটলি৷ লক্ষণীয়, বিদায়ী পঞ্চদশ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় সুষমা স্বরাজ ছিলেন বিজেপির দলনেত্রী৷ তাঁর অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো৷
উল্লেখ্য, বিজেবি এখন দুই শিবিরে বিভক্ত৷ একটা আডবানি শিবির এবং অন্যটি রাজনাথ-মোদী শিবির৷ সুষমা আডবানি শিবিরে৷ গুজরাটের গান্ধীনগরে নিজের সরকারি বাসভবনে তাঁদের নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করেন মোদী৷ তাতে তিনি এই বার্তাই দেন যে, সকলের মতামত শুনে দলে এবং সরকারে শেষ কথা বলার হকদার তিনিই৷ অর্থাৎ মোদী হবেন ক্ষমতার ভরকেন্দ্র৷ দলের বর্তমান সভাপতি রাজনাথ সিং মন্ত্রিসভায় যাবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷ তবে পর্যবেক্ষক মহল বলছে, বাজপেয়ী সরকারে আডবানি ২নং স্থানে থেকে স্বরাষ্ট্র দপ্তর সামলে ছিলেন৷ এবারে, অর্থাৎ মোদী সরকারে রাজনাথ সিং হয়ত সেই জায়গাটা নিতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশে বিজেপি যদি গোটা পঞ্চাশেক আসন পায়, তাহলে তার পুরস্কার হিসেবে রাজনাথের বদলে অমিত শাহ দলের সভাপতি হতে পারেন৷ প্রশ্ন হলো, আডবানিকে কোথায় বসানো হবে? আডবানির সম্মানজনক পদ হতে পারে বিজেপি-জোট সরকারের জাতীয় উপদেষ্টার চেয়ারম্যান করা৷ আর অপর প্রবীণ সদস্য মুরলি মনোহর যোশীকে সংসদের স্পিকার পদের প্রস্তাব দেয়া হতে পারে৷