সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার
১০ জানুয়ারি ২০১৪৫ই জানুযারি নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় সংখ্যালঘুরা হামলা এবং নির্যাতনের শিকার হন৷ বিশেষ করে, নির্বাচনের দিন রাত থেকে এই হামলা বেড়ে যায়৷ এখনো হামলা হচ্ছে৷ আর এই হামলার কারণে সারা দেশেই সংখ্যালঘুরা আতঙ্কে আছেন৷ হামলায় আহত-নিহত ছাড়াও সংখ্যালঘুদের শত শত বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ ঘটেছে মন্দিরে আগুন এবং প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাও৷ সংখ্যালঘুদের বড় একটি অংশ বাড়ি-ঘর, ব্যবসা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন৷ কেউ কেউ ভয়ে তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে গেছেন৷
সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেশি ঘটনা ঘটেছে সাতক্ষীরা, যশোর, ঠাকুরগাঁও, নাটোর, দিনাজপুর, মাগুরা, নেত্রকোনা, জয়পুরহাট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে৷ এ জন্য আইনমন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷ আইনমন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি বিবেচনা করে অনুমোদন দেয়ার পর তা গেজেট আকারে জারি করা হবে৷
শুধুমাত্র ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাই নয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সব ঘটনাই বিচারের আওতায় আনা হবে৷ রামু বৌদ্ধ পল্লিতে হামলার ঘটনার বিচারও হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে৷
মানবাধিকার কমিশন এবং সরকারের প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব এলাকায় সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সেসব এলাকা পরিদর্শন শুরু করেছেন৷ আর জেলা প্রশাসকরা এরই মধ্যে তাদের প্রতিবেদন পাঠাতে শুরুকরেছেন মন্ত্রণালয়ে৷
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান সংখ্যালঘু নির্যাতনের কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনের পর ডয়চে ভেলেকে জানান, সংখ্যালঘুদের রক্ষায় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে৷ যাতে কোনো সংখ্যালঘু পরিবার হামলা বা নির্যাতনের শিকার না হয়, সেজন্য তাদের নিরাপত্তা এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে৷ তিনি বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা হতে হবে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ৷ নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে পুলিশ বা তদন্ত সংস্থাকে নিরপেক্ষতা এবং দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করতে হবে৷ প্রকৃত অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে৷ মনে রাখতে হবে যে, অপরাধী কোনো দলের হতে পারে না৷ অপরাধীদের কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না৷
এছাড়া, মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ন্যায়বিচারের জন্য প্রয়োজন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত তদন্ত৷ তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী পুলিশই এসব ঘটনার তদন্ত করবে৷ তাই পুলিশকে আগে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে৷ আর সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷ নয়ত ভয়ে অনেকেই সাক্ষী দিতে চাইবে না৷ তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত না হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না৷