সংগীত যাদের ভাষা
আর আট-দশজন মানুষের মতো যোগাযোগে পারদর্শী নয় তারা৷ অভ্যস্ত নয় প্রথাগত পদ্ধতিতে কাজ করেও৷ চীনের একটি স্কুলে এমন অটিস্টিকদের যোগাযোগের ভাষা হয়ে উঠছে সংগীত৷
পরিবর্তন
গত তিন বছরে বড় এক পরিবর্তন ঘটেছে চীনের ২৩ বছর বয়সি জু ওয়েনবাওয়ের জীবনে৷ স্টার কিডস নামে একটি ব্যান্ড দলের সদস্য তিনি৷ তারা সবাই অটিস্টিক৷ প্রশিক্ষক চেন শেনসির স্টুডিওতে সম্প্রতি তারা আবারও সংগীত চর্চা শুরু করেছেন৷
অসহযোগিতা
জুয়ের মতো চীনে প্রায় দেড় কোটি মানুষ অটিস্টিক৷ অনেক সময়ই তারা যথাযথ সহযোগিতা পান না৷ তাদের ব্যাপারে সচেতনতার অভাবও রয়েছে৷ অটিজমের কারণে হেইলংজিয়াং প্রদেশে গ্রামের স্কুলে পড়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়নি জু৷
ব্যান্ড দল
তবে জুয়ের জীবন বদলে যায় ২০২০ সালে৷ সে বছরই তাদের জন্য স্টুডিওটি চালু করেন চেন৷ এখানে অটিস্টিক আক্রান্তরা বিনা সুযোগে সংগীত শিখে৷ জু সেখানে কি বোর্ড বাজানো শিখেছেন৷ স্টার কিডস নামের চার সদস্যের একটি ব্যান্ড দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি৷
সংগীতই জীবন
জু কথা বলতে পারে না৷ তার মা জানান, ‘‘গান ছাড়া, সংগীত ছাড়া, সে এখন আর কিছু বোঝে না৷’’ সংগীত চর্চার জন্য প্রতি রোববার তিনি সন্তানকে নিয়ে তিনটি বাস বদল করে দুই ঘণ্টার যাত্রায় নিয়ে যান বেইজিংয়ের উপকণ্ঠে৷ বলেন, ‘‘গ্রামের অন্য তরুণেরা কাজে অথবা স্কুলে যায়৷ কিন্তু সংগীত বা ব্যান্ড ছাড়া সমাজের সাথে মেশার জন্য অন্য কোনো অবলম্বন আর তার নেই৷’’
সরকারি উদ্যোগ
অটিস্টিকদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসতে চীন বেশ কয়েকটি আইন পাশ করেছে, যার সবশেষটি হয়েছে সেপ্টেম্বরে৷ গত কুড়ি বছরে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনও কয়েক লাখ শিশু দেশটিতে আচরণগত থেরাপি থেকে বঞ্চিত৷
কর্মসংস্থান
অটিজমের শিকার ব্যক্তিরা সহজে চাকরিও পান না৷ চেন মনে করেন, সংগীত শিখিয়ে ছাত্রদের কিছু রোজগারের ব্যবস্থাও করে দিতে পারবেন তিনি৷ বেইজিংয়ের উপকণ্ঠে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কনসার্টে অংশ নিয়েছে তার শিক্ষার্থীদের ব্যান্ড স্টার কিডস৷
অভিভাবকদের আগ্রহ
অটিজমের শিকার তরুণদের অভিভাবকরাও চেন এই উদ্যোগে আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ জুয়ের মায়ের মতো অনেকেই দূর দূরান্ত থেকে সন্তানকে নিয়ে আসছেন সংগীত শেখাতে৷ ছবিতে জেকি ঝেংয়ের মা ফ্লোরা টানকে দেখা যাচ্ছে তার সন্তানকে প্রস্তুত করতে৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই সে একটি কনসার্টে পারফর্ম করবে৷
শুরুটা কঠিন
চেনের জন্য এই স্কুলের শুরুটা ততটা সহজ ছিল না৷ তাদেরকে শেখাতে, ক্লাসে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে৷ কিন্তু ধীরে শিক্ষার্থীরা তার ও একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শিখে৷ চেনের মতে, "তাদের জন্য অন্যদের সাথে স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করা, প্রথাগত পদ্ধতিতে কাজকর্ম করা কঠিন, কিন্তু তারা একজন শিল্পী হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হবে৷ আমি মনে করি সংগীত তাদের ভাষা হয়ে উঠতে পারে৷’’