নতুন বছরে সবার প্রত্যাশা রাজনৈতিক সহনশীলতা
৩১ ডিসেম্বর ২০২২অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনীতি নিয়ে আমার প্রত্যাশা, স্থিতিশীলতা থাকুক, সহনশীলতা থাকুক৷ আগে আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতাম তখন দুই দিন পরপর হরতাল হতো, এতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হতো৷ এখন অনেকদিন হরতাল নেই৷ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা নেই, পড়াশোনার পরিবেশ আছে৷ বাংলাদেশের মানুষতো সংঘাত দেখে অভ্যস্ত৷ ফলে সেই সংঘাতটা আর না থাকুক সেটাই তো আমার চাওয়া হবে৷ শিক্ষক হিসেবে আমার আরেকটি চাওয়া, নতুন বছরে শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে, নতুন কারিকুলাম চালু হচ্ছে, এটা যেন সফল হয়৷ আমি যেন দেখি শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করছে৷''
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও চান রাজনীতিতে যেন সহিংসতা না বাড়ে৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলছিলেন, ‘‘রাজনীতির ক্ষেত্রে যেন সহনশীলতা দেখা দেয়৷ রাজনীতি হল সবচেয়ে বড় ব্যাপার৷ সেখানে যদি সহনশীলতা দেখা দেয় সেটা আমাদের জন্য সুখকর হবে৷ এই সহনশীলতা সৃষ্টির জন্য উদ্যোগটা কিন্তু সরকারকেই নিতে হবে৷ সরকারের পক্ষ থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে যাতে সহনশীলতা বাড়ে৷ যাতে সবার বক্তব্য উপস্থাপন করার সুযোগ ঘটে৷ যেসব রাজনৈতিক দল আছে তারা যেন প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারে এবং তাদের যেন সেই সুযোগ থাকে৷''
সেন্টার ফর পলিসি ডাইলগের সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০২২ সালে তো অর্থনীতির অনেকগুলো ঝুঁকি গেলো৷ সেই ঝুঁকি ২০২৩ সালেও থাকবে৷ মূল্যস্ফীতি হোক আর রফতানি হোক সব ক্ষেত্রেই এই ঝুঁকি থাকবে৷ অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়ালে পারলে এগুলো থেকে বের হওয়া সম্ভব৷ সব ঝুঁকি তো আমাদের নিজেদের উপর নির্ভর করে না৷ আন্তর্জাতিক সুযোগগুলো আমরা যদি নিতে পারি তাহলে অনেক ঝুঁকি কাটিয়ে উঠা সম্ভব৷ সুশাসনের সঙ্গে আমরা যদি কাজ করতে পারি তাহলে পরীক্ষাগুলোতে পাশ করা কঠিন হবে না৷''
অন্যদিকে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, নতুন বছরে যেনো জিনিসপত্রের দাম তাদের নাগালের মধ্যে থাকে৷ শ্যাওড়াপাড়া বাজারের মাছ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম৷ নতুন বছরের প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন,‘‘জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে৷ আমি চাই নতুন বছরে জিনিসপত্রের দাম যেন কমে৷ আমি যে মাছ বিক্রি করি ৪০০-৫০০ টাকার নীচে কোন মাছ নেই৷ তাহলে গরীব মানুষ বাঁচবে কীভাবে? গত এক বছরের মধ্যে সব জিনিসের দাম দ্বিগুণ হয়েছে৷ বাড়িভাড়া বেড়েছে৷ আমি যে ঘরে পরিবার নিয়ে আগে ৬ হাজার টাকা ভাড়া দিতাম, এখন সেই ঘরের ভাড়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা৷ খরচ তো বেড়েছে, আয় তো বাড়ছে না৷ আমাদের চলা কঠিন হওয় যাচ্ছে৷''
মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বছরে একটা ইনক্রিমেন্ট ছাড়া বেতন বাড়ছে না৷ অথচ দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়ছে সেটা আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে৷ আমি ৬০ হাজার টাকা বেতন পেয়েও তিনজনের সংসার চালাতে পারছি না৷ গ্রামে বাবা-মাকে আগে মাসে চলার জন্য ৭ হাজার টাকা দিতাম৷ এখন ১০ হাজার টাকায় তাদেরও চলে না৷ সাধারণ মানুষের পক্ষে জীবন চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে৷ আমার প্রত্যাশা, নতুন বছরে অন্তত দ্রব্যমূল্যটা যেন কমে৷ সাধারণ মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারে৷''
কারওয়ান বাজারের চা বিক্রতা আবেদুর রহমান বেশ রাজনীতি সচেতন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমার প্রথম চাওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধটা যেন বন্ধ হয়৷ এই যুদ্ধটা অনেক ক্ষতি করে দিছে৷ আমাদের যে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তার জন্য এই যুদ্ধ দায়ী৷ আর রাজনীতি নিয়ে আমার প্রত্যাশা, এক বছর পর তো নির্বাচন, ফলে এই এক বছর রাজনীতির মাঠ বেশ গরম থাকবে৷ তা থাকুক, কিন্তু রাজনীতির নামে মারামারি, খুনাখুনি যেন না হয়, শান্তিপূর্ণ ভোট হোক, যে দল ভোটে জিতবে তারা ক্ষমতায় আসুক৷ কিন্তু গাড়িতে আগুন দেওয়া, ভাঙচুর করা এমন কিছু যেন না ঘটে৷''