1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদভাষ্য: ম্যার্কেল লক্ষ্যে পৌঁছলেন, কিন্তু প্রশ্নচিহ্ন থেকে গেল

২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯

জার্মান সংসদীয় নির্বাচনে আঙ্গেলা ম্যার্কেল জয়ী হলেন৷ তিনি মুক্ত গণতন্ত্রীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবেন৷ কিন্তু এই সাফল্যের একটা মূল কারণ সামাজিক গণতন্ত্রীদের নির্বাচনী বিপর্যয়৷ কাজেই তাঁর কার্যকাল সমাপ্ত না’ও হতে পারে৷

https://p.dw.com/p/JqM6
সাফল্য সত্ত্বেও দলের কর্তৃত্বের রাশ কতদিন ধরে রাখতে পারবেন ম্যার্কেল?ছবি: AP

এই জয় দেখে ভুল বোঝার কোনো কারণ নেই: এটাকে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের চ্যান্সেলর কর্মকালের অন্তের সূচনা বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়া যাবৎ খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী সিডিইউ দলের এই সর্বনিকৃষ্ট নির্বাচনী ফলাফলের জন্য ম্যার্কেলের দল তাঁকে বেশীদিন ক্ষমা করবে না৷ দুই, বড়জোর আর তিন বছরের বেশী তিনি চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না৷ তার পরে তাঁকে যেতে হবে৷

স্বখাত সলিল

তার কারণ শুধু এই নয় যে ইউনিয়ন দলগুলির শিল্প-বান্ধব এবং রক্ষণশীল মূল্যবোধের গোষ্ঠীগুলির পালে এবার হাওয়া লাগবে – ম্যার্কেলের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা ব্যবস্থায় এ্যাতোদিন যাদের হাত-পা বাঁধা ছিল৷ আগামীতে ম্যার্কেলের সমস্যাগুলির জন্য তিনি নিজেই অনেকাংশে দায়ী৷ স্বয়ং ম্যার্কেল, যিনি ইউনিয়ন দলগুলির রাজনীতিকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ‘সামাজিক গণতন্ত্রী’ বলে পরিচিত, তিনিই এই নির্বাচনের আগে মুক্ত গণতন্ত্রী এফডিপি’র সঙ্গে জোট বাঁধার ঘোষণা দিলেন৷ এবার তার যে প্রতিক্রিয়া মাথা চাড়া দেবে, ম্যার্কেল অতো সহজে সেগুলিকে বিতাড়ন করতে পারবেন না৷ মুক্ত গণতন্ত্রীরা অসাধারণ ফলাফল করেছে, ফেডারাল পর্যায়ে দলের ইতিহাসে তাদের শ্রেষ্ঠ ফলাফল৷ এবং এফডিপি এই ফলাফলের মূল্য দাবী করবে, তারা আর শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার হাতিয়ার হয়ে থাকতে চাইবে না৷ তারা প্রচেষ্টা করবে, তাদের কর-হ্রাসের ভাসা-ভাসা মন্ত্র বাস্তব রাজনীতিতে পরিণত করার৷

সহজ পন্থা

এফডিপি যে কীভাবে করহ্রাস করবে, তা তারা নির্বাচনের আগেও বোঝাতে পারেনি, এবং নির্বাচনের পরেও যে পারবে, এমন আশা কম৷ তবুও এফডিপি’র এই নির্বাচনী সাফল্যকে অপ্রত্যাশিত বলা চলে না৷ অর্থনৈতিক সঙ্কটে তাদের সহজ সমাধান ছিল ‘কর কমাও’৷ অর্থাৎ সিডিইউ কিংবা এসপিডি যা করেনি অথবা পারেনি, এফডিপি তাই করেছে – মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বেছে নিয়ে তার একটি গ্রহণযোগ্য – কিংবা অগ্রহণযোগ্য সমাধান পেশ করেছে৷

অপরদিকে তথাকথিত গণদলগুলি সাধারণ মানুষের ভাবনা-চিন্তা থেকে যোজন মাইল দূরত্বে যে নির্বাচনী প্রচার অভিযান চালিয়েছে, ফেডারাল প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে তা অভূতপূর্ব৷ নির্বাচনী সভায় ম্যার্কেল এবং স্টাইনমায়ারের আবির্ভাব ছিল শূন্যগর্ভ স্লোগান এবং নাতিশীতোষ্ণ ঘোষণায় পরিপূর্ণ৷ নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বকামী জার্মানদের পক্ষেও তা যথেষ্ট ছিল না৷ জার্মানরা বিরোধ পছন্দ করে না, রাজনীতিতে তো নয়ই৷ কিন্তু কোনো একটা ধারণা, দিকনির্দেশ এবং বাস্তবমুখিতা তারাও কামনা করে৷ এবং গত চার বছরে বৃহৎ জোট যেভাবে সঙ্কটের মোকাবিলা করেছে, তা’তে তার লেশমাত্র ছিল না৷

পাঁচদলীয় প্রণালী

তার পরিবর্তে ছিল সর্বনিম্ন ঐকমত্যের রাজনীতির ৷ এবং এতো গড়ের মাঝখানে বড় কিছু করার কোনো সুযোগ ছিল না৷ এবং গণদলগুলি যে জায়গাটা ফাঁকা রেখে গেছে, ঠিক সেখানেই ছোট দলগুলি তাদের পাখা মেলার ফাঁক পেয়েছে৷ ফেডারাল প্রজাতন্ত্র পাঁচদলীয় প্রণালীর দোরগোড়ায় পৌঁছেছে - এবং সেখানেই সম্ভবত এই প্রজাতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা৷

হাঁপ ছাড়া

এবং সেক্ষেত্রে সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই নজিরবিহীন ভরাডুবি তার অবদান রাখতে পারে৷ এসপিডি’র ভিত ধ্বসে যাচ্ছে, এবং সামাজিক গণতন্ত্রীদের এখন ভাবতে হবে, তাদের বর্তমান অবস্থায় তারা ইতিমধ্যেই অতীত হয়ে দাঁড়াতে চলেছে কিনা৷ এসপিডি’কে আবার উঠে দাঁড়াতে হলে, তাদের অস্কার লাফন্টোইনের বামদলের সঙ্গে সম্পর্কটা পুনর্বিবেচনা করতে হবে৷ দি লিঙ্কে’দের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার প্রচেষ্টা সামাজিক গণতন্ত্রীদের লাভের বদলে লোকসানই ঘটিয়েছে৷ আগামীতে এসপিডি একটি নতুন সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ভেবে দেখার সুযোগ পাবে৷

এই দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক গণতন্ত্রীরা এই নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর একটু হাঁপ ছাড়তে পারবে: তাদের ঘাড়ে আর কোনো দায়িত্ব নেই৷ এবার তারা নতুন করে গড়ার সময় পাবে৷ জার্মানির সামনে যে সব সমস্যা, তার সমাধানের দায়িত্ব তাদের নয়৷ এবং আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও তাঁর কালো-হলুদ জোটকে এখন ঠিক সেই কাজটাই করতে হবে৷ তবে সে কাজের ফর্মুলাটা যে তাদের জানা আছে, নির্বাচনী প্রচার অভিযানে অন্তত তার কোনো আভাস পাওয়া যায়নি৷ এবং বৃহৎ জোটের দহরম মহরমের দিনও বিগত৷ অর্থাৎ শুধু আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জন্যই যে এই নির্বাচন শেষের শুরু, এমন নয়৷

লেখক: মার্ক কখ, অনুবাদ: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন