1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত ১৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক

১৪ মে ২০২০

পায়ে হেঁটে, ট্রাকে করে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন তাঁরা। পারলেন না। উত্তর প্রদেশে এবং মধ্যপ্রদেশে দু'টি পৃথক দুর্ঘটনায় সব মিলিয়ে ১৪ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হলো।

https://p.dw.com/p/3cC3R
ছবি: DW/P. Tewari

এখনও তাঁরা হাঁটছেন। হাজারে হাজারে। পেটে খাবার নেই। এমনকী জল পাওয়াও কঠিন। গরমে রাস্তায় চলতে গিয়ে পা পুড়ে যাচ্ছে। তাই প্লাস্টিকের জলের বোতল কেটে সেটাকেই জুতো বানিয়ে পায়ে গলিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে বউ, বাচ্চা নিয়েও ঘরে ফেরার চেষ্টা করছেন। শেষ পর্যন্ত অনেকে পারছেন না। যেমন পারলেন না ১৪ জন পরিযায়ী শ্রমিক। মধ্যপ্রদেশে ট্রাক দুর্ঘটনায় আটজন এবং উত্তর প্রদেশে বাসের তলায় চাপা পড়ে ছয় জনের পথ চলা থেমে গেলো। মধ্যপ্রদেশের দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫৪ জন। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

মধ্য প্রদেশের ঘটনাটি ঘটেছে রাত তিনটে নাগাদ। গুণা বাইপাস রোডে। একটি বাস খুবই দ্রুতগতিতে এসে পিছন থেকে ধাক্কা মারে ট্রাকে। ট্রাকের পিছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। এই শ্রমিকরা সকলেই উত্তর প্রদেশ যাচ্ছিলেন। আর উত্তর প্রদেশ থেকে শ্রমিকরা বিহার যাচ্ছিলেন পায়ে হেঁটে। রাস্তার পাশে তাঁরা বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন রাজ্য পরিবহনের একটি ফাঁকা বাস তাঁদের পিষ্ট করে দিয়ে চলে যায়। 

পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে সরকার এখন শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনচালাচ্ছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনেক শ্রমিকই তাতে ঘরে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাই হাজার হাজার শ্রমিক হেঁটে বাড়ি ফিরছেন। সেখানেই দেখা যাচ্ছে সব হৃদয়বিদারক ছবি। দক্ষিণ ভারত থেকে গর্ভবতী স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে উত্তর ভারতে নিজের গ্রামের দিকে আসছিলেন এক শ্রমিক। তিনি কাঠ কেটে, চাকা জোগাড় করে একটা খেলনা গাড়ির মতো জিনিস বানিয়ে ফেলেন। তার মধ্যে স্ত্রী ও বাচ্চাকে বসিয়ে তা টেনে নিয়ে আসছিলেন। সকলেই অভুক্ত। মহারাষ্ট্রে ঢোকার পর পুলিশ তাঁদের খাবার দেয়, ট্রাকে করে বাড়ি পাঠাবার ব্যবস্থা করে।

সরকারেরশ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে এক হাজার ২০০ লোক একবারে যেতে পারে। রেলের দাবি, তারা ৮০০ ট্রেন চালিয়েছে, তাতে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক নিজেদের রাজ্যে পৌঁছতে পেরেছেন।  তাতেও পরিস্থিতি সামলানো যায়নি। অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক লকডাউনের জন্য আটকে পড়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা ফিরতে না পেরে অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে তাঁদের হাতে টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে। সরকার বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দয়ায় কোনওরকমে একবেলা হয়তো খাবার জুটছে। তাই তাঁরা ভিন রাজ্য থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরতে ব্যাকুল। সেখানে অন্তত তাঁদের কিছু খাবার ও মাথার ওপর ছাদ জুটবে।

সম্প্রতি ২০ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তারপরেও বাড়ি ফিরতে গিয়ে প্রতিদিন এইভাবে মারা যাচ্ছেন এই গরিব শ্রমিকরা। তাঁদের গলার স্বর ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছয় না। মাঝে মাঝে এক একটি ঘটনা ঘটে, আর তাঁদের পরিস্থিতি নিয়ে সামান্য হইচই হয়। লাভ কিছু হয় না। এরপরেও তাঁদের নিয়ে নিয়মিত রাজ্যগুলির পুলিশের মধ্যে বিরোধ হচ্ছে। অনেক সময় অনেক রাজ্যে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশের পুলিশের মধ্যে এই নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। ট্রাক চালকরা তাঁদের কাছ থেকে পাঁচশো টাকা নিয়ে ৫০ কিলোমিটার গিয়ে বলে দিচ্ছে, ট্রাক খারাপ হয়ে গিয়েছে। আর যাবে না। তারপর তাঁরা নেমে গেলে ট্রাক চালিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আর এই অভুক্ত, সম্পদহীন মানুষেরা ধুঁকতে ধুঁকতে চলেছেন নিজেদের বাড়ির দিকে। অনেক সময়ই তা মৃত্যুযাত্রায় পরিণত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশভাগের পর ভারতের সাধারণ মানুষকে এই ভাবে আশ্রয়ের সন্ধানে মৃত্যুপথ পার হতে হয়নি। 

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)