1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সন্তানের হত্যাকারীদের ‘ধন্যবাদ’!

স্টুয়ার্ট হোল্ডসওয়ার্থ/এসিবি২৫ আগস্ট ২০১৩

প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, ঘৃণা - এসব তাঁদের অভিধানে নেই৷ তাঁরা জানেন ভালোবাসতে৷ তাঁদের সন্তানকে হত্যা করেছে যারা, তাদের জন্যও ঘৃণা নেই মনে৷ বুকে জড়িয়ে ধরে হত্যাকারীদের নতুন জীবন দিয়েছেন রে ডনোভান এবং ভায়োলেট ডনোভান৷

https://p.dw.com/p/19Vd7
ছবি: privat

ডনোভান দম্পতির জন্য ২০১১ সালের মে শোকের মাস৷ এক শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের সারের রাস্তা দিয়ে গান গাইতে গাইতে হাঁটছিল রে-ভায়োলেট দম্পতির দুই ছেলে ক্রিস্টোফার আর ফিলিপ৷ বন্ধুর বাড়ি যাবে৷ সারা সপ্তাহের অপেক্ষার অবসান হবে৷ খুব আনন্দ হবে বন্ধুদের সঙ্গে৷ এসব ভাবনা আর গান থেমে গেল হঠাৎ কিছু মদ্যপ ছেলেকে দেখে৷ দুই ভাই গান থামিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল৷ কিন্তু একটি ছেলে সোজা ঘুসি চালালো ফিলিপের মুখে৷ মাটিতে পড়ে গেল ফিলিপ৷ তাকে বাঁচাতে গেল ক্রিস৷ তার মাথায় লাথি চালালো আরেক ছেলে৷ তারপর চলতে থাকলো বেদম মার৷

গভীর রাতে ফোন৷ পুলিশের ফোন৷ রে আর ভায়োলেটকে যেতে হবে হাসপাতালে৷ ক্রিসের অবস্থা খুব খারাপ৷ শুনে হাসপাতালে ছুটে গেলেন মা-বাবা৷ সারারাত অপেক্ষার পর জানা গেল মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ক্রিস আর নেই৷ সদ্য কৈশোর পেরোনো সন্তানের বাবা-মা-কে পুলিশ আশ্বাস দিয়েছিল অপরাধীদের খুঁজে বের করা হবে৷ চার মাসের মধ্যে সত্যি সত্যি গ্রেপ্তার করা হলো তিনজনকে৷ হত্যাকারীদের বয়সও খুব বেশি নয়৷ এক জনের ১৫, এক জনের ১৬ আর সবচেয়ে বড় ছেলেটির বয়স ১৯৷ ক্রিসকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছরের জেল হলো প্রত্যেকের৷

Chris Donovan
ডনোভান দম্পতির নিহত ছেলে ক্রিসছবি: Ray Donovan

কিন্তু হত্যাকারীদের সাজা হলেই কি সব চুকেবুকে যায়? অপরাধীরা বুঝতে পারে একটা পরিবারের কী সর্বনাশ তারা করেছে? রে আর ভায়োলেটের মনে হলো সাজাপ্রাপ্তদের কাছে ‘ক্রিস' শুধু একটা নাম৷ তাদের পিটুনিতে পৃথিবীর একটি পরিবার থেকে একটি নাম মুছে গেছে – ব্যস, এর চেয়ে বেশি কিছু কি ভাবনায় কখনো আসে অপরাধীদের? শুধু কয়েক বছর জেল খাটলে কারো তো স্বাভাবিক অবস্থায় একটি পরিবারের কী ভীষণ ক্ষতি করেছে সেটা বোঝারই কথা নয়৷ মা-বাবা তাঁদের কোলেপিঠে করে মানুষ করা সন্তান হারিয়েছে, ভাই হারিয়েছে তার খেলার সাথি, পরিবারের সবার জীবনে একটি রাত, একটি মুখ হয়ে গেছে চির ব্যথা জাগানিয়া স্মৃতি – এসব তো আর জেলজরিমানা দিয়ে বোঝানো যায়না! রে আর ভায়োলেট তাই সমাজ থেকে সহিংসতা দূর করতে গড়ে তুললেন ক্রিস ডনোভান ট্রাস্ট৷ ট্রাস্টের কাজ স্কুল এবং কারাগারে গিয়ে সহিংসতাবিরোধী আলোচনা করে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমানোর চেষ্টা করা৷

দিন যায়, অনেক মানুষের অনেক অনুভূতি, অনেক স্মৃতি ফিকে হয়ে যায়৷ বন্ধন গুরুত্ব হারায়৷ কিন্তু সন্তান বলে কথা৷ রে আর ভায়োলেট কি ক্রিসকে ভুলতে পারেন? আদরের সন্তানকে যারা হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে দেখা না করে, একটি বার কথা না বলে পারেন? যেদিন তাদের মুক্তি দেয়া হবে ডনোভান দম্পতি তাই আগে থেকেই কারাগারের সামনে গিয়ে হাজির৷ প্রথমে বেরিয়ে এলো বয়সে সবচেয়ে ছোট ছেলেটি, ১০ বছরে তার বয়স বেড়ে হয়েছে ২৫৷ রে দু হাত বাড়িয়ে অপেক্ষায়৷ হারিয়ে যাওয়া ছেলের বয়সি ছেলেটি এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তাঁকে৷ রে তার কানে কানে বললেন, ‘ধন্যবাদ৷'

সন্তানের বাকি দুই হত্যাকারীকেও বুকে জড়িয়ে ‘ধন্যবাদ' বললেন ডনোভান দম্পতি৷ মহত্বের এইটুকু দৃষ্টান্ত রেখে গল্পটি এখানেই শেষ করে দিতে পারতেন রে আর ভায়োলেট৷ কিন্তু গল্প সেখানে বরং শুরু৷ কারামুক্তির পর তিন তরুণই বার্তা পাঠিয়েছে তাদের হাতে নিহত ক্রিস্টোফারের বাবা-মাকে৷ সেখানে লেখা, ‘‘ক্ষমা করে আমাদের নতুন করে জীবন শুরুর সুযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ৷'' তারপর থেকে ক্রিস ডনোভান ট্রাস্টের কাজ পুর্নোদ্যমে চলছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য