সন্ত্রাসী হামলায় বিশ্বে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে
২৬ ডিসেম্বর ২০১৪বিশ্ব ক্রমেই আরও বেশি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে৷ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সন্ত্রাসী হামলা বেড়েছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর সন্ত্রাসী ঘটনা বেড়েছে৷ গত দেড় দশকে এ সব হামলায় নিহতের সংখ্যা আগের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে৷ ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচক' অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারিয়েছে ১৮ হাজার মানুষ – ২০১২ সালের চেয়ে সংখ্যাটা প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি৷ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০১৪ সাল শেষের পর পরিসংখ্যান তৈরি করলে দেখা যাবে নিহতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে৷ এটা এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম নজিরবিহীনভাবে বাড়িয়েছে৷
২০১৪ সালে সিরিয়া, ইরাক, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে৷ ইসলামিক স্টেট, বোকো হারাম, তালেবান আর আল-কায়েদা এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী৷
সন্ত্রাসী হামলা কেন চালানো হয় তার কতগুলো কারণ রয়েছে৷ সবচেয়ে বেশি হামলা চালানো গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে একটি কারণের কথা সবার আগে মনে আসে, সেটি হচ্ছে: সুন্নি মতাদর্শের প্রসার বাড়াতে সৌদি আরবের সহায়তা, আর অন্যদিকে সেটা ঠেকাতে ইরানের প্রচেষ্টা৷
এই প্রতিযোগিতা বেশ কয়েকটি সংঘাতের জন্য দায়ী৷ প্রথমত: ইসরায়েলের সঙ্গে আরব বিশ্বের দ্বন্দ্ব, যেটা প্রায় ৬০ বছর ধরে চলছে৷ লেবানন ও গাজায় সন্ত্রাসী হামলায় সহায়তা করছে ইরান৷ এছাড়া সিরিয়ায় আসাদ সরকারকেও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে দেশটি৷
এবার সিরিয়া ও ইরাক প্রসঙ্গ৷ ২০০৩ সালে ইরাকের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলা, যেটা পুরোপুরি অন্যায় ছিল, তার পরবর্তী অবস্থা ঠিকমতো সামাল দিতে পারেনি ওয়াশিংটন৷ আল-মালিকির নেতৃত্বাধীন শিয়া সরকার ইরাকের সুন্নি জনগোষ্ঠীকে ইসলামিক স্টেটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে৷ এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ক্রমান্বয়ে সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে একটি অন্যতম বাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে৷ শুধু সিরিয়া নয়, ২০১৪ সালে তারা ইরাকেও শক্তিশালী হয়েছে৷ শিয়া মুসলিম, কুর্দ, ইয়াজিদি, খ্রিষ্টান আর পশ্চিমা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ইসলামিক স্টেট যে অত্যাচার চালিয়েছে সেটা অবিশ্বাস্য৷ ধর্মীয় কারণে চালানো সন্ত্রাসী হামলা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তার সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছে ইসলামিক স্টেট৷ তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে ২০১৫ সালে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরও বেশি করে লড়বে, সেটা ধরে নেয়া যায়৷ অবশ্য এর কোনো বিকল্পও নেই৷
তৃতীয় যে সংঘাতের কথা বলতে চাই তার সঙ্গে জড়িত আফগানিস্তান৷ সুপারপাওয়ারদের দ্বন্দ্বের কারণে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ এরপর নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে তালেবানের বিজয় সিআইএ-র সাবেক সহযোগী ওসামা বিন লাদেনকে পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে লড়ার সুযোগ করে দেয়৷ এবং সে কারণেই পরবর্তীতে দেশটিতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র৷
কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়া ও পুনর্গঠন দেশটিতে গণতন্ত্র আনতে ব্যর্থ হয়েছে৷ এখন যখন তালেবানকে অপরাজিত রেখে আইসাফ বাহিনী চলে যাচ্ছে তখন আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ বিপদের সম্মুখীন৷ আফগানিস্তানের ঘটনা পরিস্থিতি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানকেও অস্থিতিশীল করে তুলেছে৷ পাকিস্তান তার প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে৷ ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দেশ দুটি তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে৷ মাঝখানে কিছুটা সময় ভালো থাকলেও আবারও দু'দেশের সম্পর্কে শীতলতা দেখা যাচ্ছে৷ নরেন্দ্র মোদী ও নওয়াজ শরিফ এই অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবেন বলে আশা করা যেতে পারে৷ যতক্ষণ না সেটা হচ্ছে ততদিন পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী পাকিস্তানি তালেবান ও কাশ্মীরের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীকে সমর্থন জানিয়ে যাবে৷
শেষ প্রসঙ্গ আফ্রিকা – যেখানে বোকো হারাম ধারাবাহিকভাবে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে নাইজেরিয়া ও আশেপাশের দেশে ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি করছে৷ অপহৃত শত শত ছাত্রী এখনও নিখোঁজ৷ হামলা এখনও চলছে৷ দুর্ভাগ্যের বিষয় এর কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না৷
ফলে, বছর শেষে এসে ঐসব ইসলামি পণ্ডিতদের কথা মনে করা যেতে পারে যাঁরা মধ্যপন্থি ইসলামের কথা বলেন৷ দ্বন্দ্বে লিপ্তদের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানই ২০১৫ সালের লক্ষ্য হতে পারে৷ যেখানে এই কৌশল প্রয়োগ করা যাবে সেখানেই সন্ত্রাসের প্রতি সমর্থন দূর হবে৷