সন্ত্রাসের নতুন মাত্রা
১০ এপ্রিল ২০১৫তথাকথিত ‘‘ইসলামিক স্টেট''-এর বিশ্বদর্শন অতীতমুখী, এমনকি মধ্যযুগীয় বলে মনে হতে পারে – কিন্তু তাদের সন্ত্রাসের পদ্ধতিকে নয়৷ আইএস সন্ত্রাসবাদীরা বহুদিন আগেই সাইবারস্পেস-কে রণাঙ্গন হিসেবে আবিষ্কার করেছে, যদিও এই রণাঙ্গনে তাদের গতিবিধি এ যাবৎ প্রচারণা যুদ্ধেই সীমিত ছিল৷
ফরাসি ‘টেভে স্যাঁক' বা টিভি ফাইভ টেলিভিশনের উপর তথাকথিত ‘‘সাইবার খেলাফৎ''-এর সর্বাধুনিক আক্রমণ সাইবার সন্ত্রাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে৷ জার্মান অপরাধ দপ্তরের সংজ্ঞা অনুযায়ী সাইবার সন্ত্রাস হল, সাইবার পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে বিপক্ষের বিশেষ বিশেষ ক্ষমতা বা কার্যক্রমের দখল নেওয়া, তাতে ব্যাঘাত ঘটানো অথবা তাকে ধ্বংস করা৷
টিভি ফাইভ-এর উপর যে সাইবার আক্রমণ চালানো হয়েছে, তাতে সাইবার সন্ত্রাসের সব উপাদানই পাওয়া যাবে৷ গুরুতর আক্রমণ: ১১টি টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেছে; সংস্থার ফেসবুক ও টুইটার অ্যাকাউন্টগুলি দখল করা হয়েছে; অনুষ্ঠানের প্রযোজনা দৃশ্যত দীর্ঘমেয়াদি সূত্রে ব্যাহত হয়েছে৷ আক্রমণের বেশ কয়েক ঘণ্টা পরেও টিভি ফাইভ-কে পূর্বপ্রযোজিত অনুষ্ঠানাবলী প্রচার করতে দেখা গেছে৷ সেই সঙ্গে ছিল ফরাসি সৈন্যদের প্রতি শাসানি: আইএস-এর বিরুদ্ধে অভিযানে নামলে তাদের পরিবারের অকল্যাণ ঘটতে পারে৷
‘‘অপ্রতিসম যুদ্ধ''
অথচ এই আক্রমণ অপ্রত্যাশিতভাবে আসেনি৷ জার্মান ফেডারাল অপরাধ দপ্তর গতবছরই তাদের একটি অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণে সাইবারস্পেস থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ সংস্থা ইউরোপোল সাইবার সন্ত্রাসের ঝুঁকি সম্পর্কে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ সাইবার সন্ত্রাসের সুবিধাই হল: বিশ্বের যে কোনো জায়গায় বসে বিশ্বের অপর যে কোনো জায়গায় শত্রুপক্ষের বিপুল ক্ষতি করা চলে; যাকে ‘‘অপ্রতিসম যুদ্ধ'' বলা চলে৷
‘‘সাইবার খেলাফৎ'' গত জানুয়ারি মাসেই নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়, যখন তারা সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন সামরিক অভিযানের সেন্ট্রাল কমান্ডের ইউটিউব ও টুইটার অ্যাকাউন্ট মোট ৩০ মিনিটের জন্য দখল করে বসে৷ আবার সেই দখলীকৃত পেজগুলিতে মার্কিন সৈন্যদের এবং তাদের পরিবারবর্গের খোঁজখবর প্রকাশ করে সেনাবাহিনীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে৷ টিভি ফাইভ-এর উপর সাম্প্রতিক আক্রমণ ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল, অনেক বেশি কার্যকরী৷ ইসলামপন্থিরা দৃশ্যত আরো অনেক কিছু শিখেছে এবং শিখছে৷
বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না
মুশকিল হল এই যে, ভার্চুয়াল এবং রিয়্যাল, অলীক ও বাস্তব যতো কাছাকাছি এসে পড়বে, ততোই সাইবারস্পেসে অপরাধী এবং সন্ত্রাসবাদীদের দৌরাত্ম্যের বিপদ বাড়বে৷ গত ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি আণবিক চুল্লির উপর হ্যাকার আক্রমণের ঘটনা ঘটে৷ তথ্যপ্রযুক্তিগত নিরাপত্তা সংক্রান্ত ফেডারাল দপ্তরও তার সর্বাধুনিক বাৎসরিক রিপোর্টে জানিয়েছে, কীভাবে হ্যাকার আক্রমণে একটি ইস্পাত তৈরির চুল্লি বিনষ্ট হয়েছে৷ জিরো আর ওয়ান-এর বাইনারি সিস্টেম ব্যবহার করে বাস্তব জগতে বাস্তব ক্ষয়ক্ষতি ঘটানো যখন সম্ভব, তখন কোনো তেল পরিশোধনাগার কিংবা রাসায়নিকের কারখানার উপর আক্রমণ চালাতেই বা বাধা কী? অথবা তথাকথিত ‘‘অতীব জরুরি অবকাঠামো'' – অর্থাৎ বিদ্যুৎ কিংবা পানি সরবরাহ, বা পরিবহণ ব্যবস্থার উপর আক্রমণ?
শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী ধাপে যদি শিল্প উৎপাদন কম্পিউটারের মাধ্যমে পুরোপুরি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে ডিজিটাল সন্ত্রাসীরা হাত কচলাবে বৈকি – বিপর্যয় সৃষ্টির এই তো সুযোগ!