সবল বুলবুলকে দুর্বল করেছে সুন্দরবন
১০ নভেম্বর ২০১৯ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় আঘাত করে শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে৷ এরপরই তার তীব্রতা কমে যায়৷ ধীরে ধীরে এটি সাইক্লোন থেকে গভীর স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়৷ তবে এর আগে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা আরো একটু কমে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘‘সুন্দরবন বারবারই বাংলাদেশকে ঘূর্ণিঝড় থেকে ঢাল হয়ে রক্ষা করছে৷ আর উপকূলীয় এলকার সবুজ বেষ্টনীও এই সময় কাজ করে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানে পশ্চিমবঙ্গ এবং খুলনা হয়ে, সুন্দরবনের ওপর দিয়ে৷ তার গতিবেগ ছিলো ঘন্টায় ৯০ থেকে দমকা হাওয়ায় ১২০ কিলোমিটার৷ তখন এটা ছিলো প্রবল ঘুর্ণিঝড়৷ কিন্তু স্থলভাগে সুন্দরবনের গাছপালায় বাধা পেয়ে এটা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়৷ বাতাসের গতিবেগ কমে গিয়ে ৬০ থেকে দমকায় ৮০ কিলোমিটার হয়৷''
তাঁর মতে, ‘‘সুন্দরবনের গাছপালা ঘুর্ণিঝড়কে প্রতিরোধ করায় সেটা দুর্বল হয়ে পড়ে৷''
এবারের ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের গাছপালার কী ধরনের ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নির্ণয় হয়নি৷ তবে জলোচ্ছ্বাস না হওয়ায় বন্য প্রাণীর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে বন বিভাগ৷ ওই অঞ্চলে বিভিন্ন স্থাপনার বড় ধরনের কোনো ক্ষতির খবরও পাওয়া যায়নি৷ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন বলেন, ‘‘সুন্দরবন বরাবরের মত এবারও ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের রক্ষা করেছে৷ সিডরে সুন্দরবনের অনেক ক্ষতি হয়েছিল৷ তবে ১২ বছরে প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবন আবার তার আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে৷ আসলে সুন্দরবন আমাদের প্রাকৃতিক ঢাল৷ তাকে বিরক্ত না করলেও সে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠে, সুরক্ষা দেয়৷ সেখানোতো গাছ লাগাতে হয়না৷ ওটা একটা প্রাকৃতিক সিস্টেম৷ একটু ভালো ব্যবস্থাপনা হলেই সে শতাব্দির পর শাতাব্দি এভাবেই টিকে থাকবে৷''
এদিকে ঘূর্ণিঝড় এখন নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়ে দক্ষিণের পটুয়াখালি অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে৷ সতর্কতা সংকেত তিনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে আগামীকাল (সোমবার) দেশের আবহাওয়া পরিস্থতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসবে৷
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো এনামুর রহমান বলেন ,‘‘যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিলো তা হয়নি৷ পূর্ব প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হয়েছে৷ আমরা এখন তথ্য সংগ্রহ করছি৷ পূর্ণ চিত্র পেতে কয়েকদিন সময় লাগবে৷ তবে প্রাথামিকভাবে এটা বলা যায় যে বিপদ কেটে গেছে৷ আর এজন্য সুন্দরবন আমাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং এটা যাতে আর কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করব৷ এই বনের গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, বন উজাড় করা হচ্ছে৷ নানাভাবে বনের ক্ষতি করা হচ্ছে৷ এটা বন্ধ করে সুন্দরবনকে সুরক্ষা দিতে হবে৷''
প্রসঙ্গত, ২০০৭ এবং ২০০৯ সালে সিডর ও আইলার প্রাথমিক আঘাত সামাল দিয়েছিল সুন্দরবন৷ যাার কারণে সম্ভাব্য বিপুল প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায় বাংলাদেশ৷ দেশের দক্ষিণে ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবন এভাবে বারবারই এই জনপদকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করছে৷