চাই পোশাকের ন্যায্য মূল্য
২৯ জানুয়ারি ২০১৬বাংলাদেশ সরকার, গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর, এমন অভিমত জানিয়েছেন ইউরোপ, অ্যামেরিকা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও এবং ‘সাসটেনেবিলিটি কমপ্যাক্ট'-এর নেতৃবৃন্দ৷ তাঁরা এর সঙ্গে বাংলাদেশে শ্রমিকদের জীবনমানেরও উন্নয়ন চান৷
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী দফায় দফায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠকের পর বিজিএমই-র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইউরোপ-অ্যামেরিকা ও আইএলও মূলত আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের অগ্রগতির বিষয়টি জানতে চেয়েছে৷ আমাদের নেয়া পদক্ষেপে তারা খুবই সন্তুষ্ট৷''
ট্রেড ইউনিয়নের অগ্রগতির ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ট্রেড ইউনিয়ন তো আমরা করে দিতে পারি না৷ আমাদের শ্রমিকদের অধিকাংশই গ্রাম থেকে এসেছে৷ সেখানে তারা খুবই কষ্টে দিনপার করেছে৷ এখানে এসে ভালো পরিবেশ পেয়েছে৷ ফলে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না৷ কেউ করতে চাইলে আমরা তো বাধা দেই না৷ আসলে এটা তো তাদেরকেই করতে হবে৷''
গত দুই বছরে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তা মান উন্নয়নে সরকার ও মালিকপক্ষের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে পোশাকের ন্যায্য দামের দাবিও এসেছে বৈঠক থেকে৷ সরকার, কারখানা মালিক ও শ্রমিকরা সবাই একযোগে এই দাবি তুলেছেন৷ তাঁরা বলেছেন, সস্তায় পোশাক কেনার চিন্তা করে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি করা যায় না৷ শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের পোশাকেরও ন্যায্য মূল্য দিতে হবে৷
বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাজরীন ও রানা প্লাজার ঘটনার পর আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা কর্ম পরিবেশের উন্নতি করেছে৷ তবে ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারে যতটা এগোনির কথা ছিল সেই পরিমাণ এগোয়নি...৷ ট্রেড ইউনিয়ন করতে আইএলও এবং আমাদের সরকারকে শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ তবে একটা কথা সত্য যে, পোশাকের দাম না বাড়ালে হবে না৷ সেটাও আমরা বলেছি৷''
দিনব্যাপী বৈঠক ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে উভয় পক্ষ একটি যৌথ ঘোষণা উপস্থাপন করে৷ রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে সেই যৌথ ঘোষণা উপস্থাপন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷ এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফরকারী দলের প্রধান সান্ড্রা গ্যালিনা, মার্কিন দলের প্রধান মাইকেল জে ডিলেনি, আইএলও-র প্রতিনিধি ড্যান কুনিয়া এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট, ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়ের মায়াউদঁ, আইএলও-র কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীনিভাস রেড্ডিসহ পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন৷
যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ব্রাসেলস সভার পর শ্রম নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন তাৎপর্যপূর্ণ৷ এটি চলমান রাখতে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ঐক্যবদ্ধ থাকবে৷ তবে ট্রেড ইউনিয়ন প্রক্রিয়া আরো সহজ করা, সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো, লোকবল নিয়োগের বিষয়ে উভয়ে একমত হয়েছে৷ নির্ভয়ে শ্রমিকদের কথা বলার অধিকার নিশ্চিত করতে আইএলও-র নীতিমালা অনুযায়ী শ্রম আইন ও বিধির সংশোধনের লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করা, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ধরনের কারখানা পরীক্ষা ও সংস্কার নিশ্চিত করা এবং এ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়া৷
বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তা বিষয়ে অগ্রগতি স্বীকার করেন মাইকেল ডিলেনিও৷ তিনি বলেন, এই ইস্যুটি এখন আর বাংলাদেশের নয়৷ এটি গ্লোবাল ইস্যু৷ তবে অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারসহ শ্রমিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা, তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা, শ্রম আইনের যথাযত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইউরোপ-অ্যামেরিকা সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করবে৷ আগামী বছরের শুরুতে আবারো এর পর্যালোচনা হবে৷
পোশাক খাতে ট্রেড ইউনিয়নের অগ্রগতি কীভাবে করা সম্ভব? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷