সবুজ ব্যাংকিং চালু হলো বাংলাদেশে
১৩ মে ২০১১এ এক অন্যরকম ব্যাংকিং ব্যবস্থা৷ মূলত পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখেই করা হয়েছে তা৷ এই পৃথিবীর সবুজকে ধরে রাখার মানসে ব্যাংকের এই বিষয়টি অনেক আগেই শুরু হয়েছে বিশ্বের উন্নত সব দেশে৷ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক - বাংলাদেশ ব্যাংক - অতি সম্প্রতি নতুন ধারার এই ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশ দিয়েছে কর্মরত সকল ব্যাংককে৷ এ জন্য একটি গাইড লাইনও প্রণয়ন করা হয়েছে৷
প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশে ব্যবসারত সব ব্যাংককে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে নিজেদের একটি পরিবেশবান্ধব বা সবুজ ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে৷ এ নীতিমালা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হতে হবে৷ পর্ষদের পরিচালকদের নিয়ে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং নীতি, কৌশল ও কার্যক্রমের দেখভাল করবে৷ বাংলাদেশে ব্যবসারত বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও প্রায় একই নিয়ম৷
গাইডলাইন অনুসারে পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি ব্যাংক স্বতন্ত্রভাবে একটি সবুজ ব্যাংকিং বিভাগ বা অনুশাখা স্থাপন করতে হবে৷ এ অনুশাখা ব্যাংকের পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম প্রণয়ন, মূল্যায়ন ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে৷ ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণভাবে পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ নিতে হবে৷ এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে যথাসম্ভব কাগজের ব্যবহার সীমিত করে অনলাইন ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করার এবং কম্পিউটার, এসিসহ বিভিন্ন যন্ত্র যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷
এ তো গেল দাপ্তরিক ব্যাপার-স্যাপার৷ কিন্তু মাঠ পর্যায়ে মানে গ্রাহক পর্যায়ে এর মাধ্যমে কী উপকার হবে? দৈনিক ইত্তেফাকের অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক জামালউদ্দীন জানান, ব্যাংকিং কার্যক্রমে পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি বা প্রকল্প অর্থায়নে নজর বাড়ানোর কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পানি শোধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জৈব-গ্যাস, জৈব সার প্রভৃতি৷ বন্যা, খরা ও দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য নিয়মিত সুদের হারেই অর্থায়নের কথা বলা হয়েছে৷
তিনি জানান, জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য একটি জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল গঠন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে৷ এছাড়া সবুজ বিপণন কর্মসূচি গ্রহণ, অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদার করা ও এ বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে৷
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণীত এই গাইডলাইনের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজগুলো ২০১২ সালের জুন মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে৷ এ পর্যায়ে পরিবেশ সংবেদনশীল বিভিন্ন খাতের বিষয়ে ব্যাংকের কৌশলগত নীতি প্রণয়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ যেসব খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে সেগুলো হলো কৃষি, কৃষি বাণিজ্য, চামড়া, মৎস্য, বস্ত্র ও পোশাক, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কাগজ ও মণ্ড, চিনি, নির্মাণ, গৃহায়ন, প্রকৌশল, ধাতব পদার্থ, রসায়ন, রাবার ও প্লাস্টিক, ইট প্রস্তুত, জাহাজভাঙা প্রভৃতি৷ এই পর্যায়ে ব্যাংকগুলোকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সবুজ শাখা স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করা হবে৷ যেসব শাখা সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক আলো-বাতাস, জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতি ও পাখা, সীমিত পানি-বিদ্যুৎ,পরিশোধিত পানি ব্যবহার করবে, সেগুলো সবুজ শাখা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃতি পাবে৷ তৃতীয় পর্যায়ে ব্যাংকগুলোকে পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালনের তাগিদ দেয়া হয়েছে৷
সুসংবাদ হচ্ছে এই যে, গাইড লাইনের আওতায় বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে সবুজ কার্যক্রম শুরুও হয়ে গেছে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক