1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সভ্যতার হাত ধরে আসা ব্যাধি

১১ জানুয়ারি ২০১১

ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যা, ক্যান্সার – এই অসুখগুলোকে বলা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর অসুখ৷ এসব রোগকে বলা হচ্ছে সভ্য যুগের, সভ্য সমাজের সুখ এবং অসুখ৷

https://p.dw.com/p/zw6T
সুস্বাস্থ্যের জন্য যোগ ব্যায়ামছবি: AP

এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব, নিত্য নতুন প্রযুক্তি পাল্টে দিচ্ছে মানুষের জীবন-যাপনের ধারা৷ অত্যাধুনিক এসব প্রযুক্তি আমাদের মুগ্ধ করছে প্রতিদিন৷ কিন্তু এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে৷ ইদানিং যে সব রোগের কথা আমরা শুনি, ২৫ বছর আগেও আমরা এগুলোর কথা শুনতাম না৷

ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যা, ক্যান্সার – এগুলো একবিংশ শতাব্দীর অসুখ হতে পারে, কিন্তু সমস্যা অন্যত্র৷ এই অসুখগুলো একসময় শুধু শিল্পোন্নত দেশগুলোতেই দেখা যেত, কিন্তু ইদানিং এই অসুখগুলো ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তরেই৷

সংক্রমিত ব্যাধি এবং ক্রনিক ডিজিজ

ক্রনিক ডিজিজের মধ্যে পড়ে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং বিভিন্ন ধরণের ব্যাধি৷ সংক্রামক রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া এবং যক্ষ্মা-ই ছিল একসময় মারণ ব্যাধি৷ বিশ্বে যত মানুষ নানা ধরণের অসুখ বিসুখে মারা যেত, তার ৬০ শতাংশই মারা যেত সংক্রামক নয় এমন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে৷ এরপর বিংশ শতাব্দীতে হানা দিয়েছে এইডস৷ লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পরিচালক বিজ্ঞানী পিটার পিয়ট জানান, ‘‘ইদানিং সংক্রামক ব্যাধিতে যত মানুষ মারা যায় তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ এবং ডায়াবেটিসে ভুগে৷ আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলে এইডসে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে৷ সেখানকার মানুষের জীবন-যাপনেও আমূল পরিবর্তন এনেছে এইডস৷ এছাড়া খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টিও অনেক ক্ষেত্রে জড়িত৷ খাবারে কাঁচা লবণ, বেশি চিনি, অতিরিক্ত তেল – আসল কথা হল, যে সব খাবার সুলভমূল্যে বিক্রি হয় সেগুলো মোটেই স্বাস্থ্যকর খাবার নয়৷ এর সঙ্গে রয়েছে চলাফেরা, হাঁটাহাটি বা ব্যায়ামে অনীহা৷ এসব কারণে শুধু ইউরোপ নয়, পৃথিবীর সব প্রান্তেই অসুখ বিসুখগুলো একরকম৷''

দারিদ্র্যই অসুখ-বিসুখের মূল উৎস

দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত ওজন বা উচ্চ রক্তচাপ ধনীদের রোগ বলে অভিহিত হত৷ বলা হত এগুলো হচ্ছে ‘সভ্যতার হাত ধরে আসা ব্যাধি'৷ এগুলো দেখা যেত শুধুমাত্র পশ্চিমা বিশ্বে৷ বিশ্বায়ন এবং নগরায়নের ফলে সব জায়গাতেই এসেছে পরিবর্তন৷ এমনকি আফ্রিকাতেও তৈরি খাবার শোভা পাচ্ছে টেবিলে, হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় খাবার৷ আরব বিশ্বে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি সফ্ট ড্রিঙ্কেই চিনির মাত্রা অনেক বেশি৷ ধূমপান নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ধরণের আইন কানুন করা হয়েছে ইউরোপ থেকে অ্যামেরিকা অবধি৷

‘সভ্যতার হাত ধরে আসা ব্যাধি' সম্পর্কে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট পেক্কা পুস্কা জানান, ‘‘যেসব রোগকে এতদিন আমরা ‘সভ্যতার ব্যাধি' বলে জানতাম সেগুলো এখন ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোতেও৷ আর এই দরিদ্র দেশগুলোতে তা ভয়ানক রূপ নিয়েছে৷ এর কারণ হল সেখানে মানুষের উপার্জন কম৷ স্বল্প উপার্জনে তারা কোন অসুখের চিকিৎসা করাতে পারে না৷ সেসব দেশে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু বাড়ছে না চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা৷ আর্থিকভাবে বা সামাজিকভাবেও সাহায্য পাচ্ছে না এই অসুস্থ মানুষগুলো৷ অনেকেই বলে দারিদ্র্যই অসুখ-বিসুখের মূল উৎস এবং অসুখ-বিসুখের মূল উৎস দারিদ্র্য৷''

খেলাধুলা এবং ব্যায়ামের সঙ্গে জড়িত থাকা প্রয়োজন

একটি জরিপে জানানো হয়েছে বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মারা যায় বিভিন্ন ধরণের ক্রনিক ব্যাধিতে৷ আর এক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এগিয়ে রয়েছে৷ এর মূলে রয়েছে স্বল্প উপার্জন৷ সমাজবিজ্ঞানী থেকে শুরু করে চিকিৎসক, বিজ্ঞানী এবং রাজনীতিকরাও এই সমস্যা চিহ্নিত করেছেন৷ এছাড়া রয়েছে আরেকটি ব্যাধি৷ যার নাম মানসিক বিষাদ৷ সারা বিশ্বে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ মানসিক বিষাদে ভুগছেন৷ অথচ এই রোগটি ছোঁয়াচে নয়৷ কিন্তু এই রোগটি ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে সমাজকে৷ ধারণা করা হচ্ছে এর মূলে রয়েছে স্ট্রেস বা অত্যাধিক মানসিক শ্রম এবং অশান্তি৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আলা আলওয়ান বিভিন্ন ধরণের রোগ বিষয়ে বলেন, ‘‘হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ চাইলেও আমরা এড়াতে পারি৷ এগুলো ছোঁয়াচে নয়৷ ডায়াবেটিসও এড়ানো সম্ভব৷ কম ধূমপান করলে বা মদ্যপান করলে সুস্থ থাকা সম্ভব৷ স্বাস্থ্য-সম্মত খাওয়া দাওয়া জরুরি৷ ব্যায়াম করা বা খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত থাকা প্রয়োজন৷ আর যদি কেউ অসুস্থ হয়েই যায় – এর জন্য বিষাদগ্রস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই৷ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে মৃত্যুকে অবশ্যই দূরে রাখা সম্ভব৷''

বিজ্ঞানী পিয়ট আরেক অসুস্থতার কথা বলেন - তা হল শরীরের ওজন মাত্রাধিক বেড়ে যাওয়া৷ ব্রিটেনে ১৪ বছরের প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একটি শিশু মাত্রাধিক মোটা৷ ইদানিং তা বেড়েই চলেছে৷ অথচ অতিরিক্ত মেদের এই সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে অন্তত ৬-৭ বছর আগে৷ প্রশ্ন, এই সমস্যা সমাধানে কা'কে এগিয়ে আসতে হবে: পরিবারকে? প্রতিষ্ঠানকে? স্কুলকে? তবে সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন সদিচ্ছার এবং প্রচুর অর্থের৷ প্রশ্ন, সেটাই বা পাওয়া যাবে কোথায়?

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক