নারীর অধিকার
৩০ নভেম্বর ২০১২১৯৬০ সালের ২৫শে নভেম্বর ডোমিনিকান রিপাবলিকে বর্বরোচিত এক নির্যাতনে তিনজন নারী মারা যান৷ তাঁদের স্মরণ করে ১৯৮১ সালে ২৫শে নভেম্বরকে নারী নির্যাতন বিরোধী দিবস ঘোষণা করা হয়৷ এরপর ১৯৯৩ সালে আসে আরেক ঘোষণা৷ সেবার ২৫শে নভেম্বর থেকে ১০ই ডিসেম্বর – এ সময়টাকে করা হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ পক্ষ'৷ ২৫শে নভেম্বর তখন থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস'৷
বাংলাদেশে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ পক্ষ' প্রথম উদযাপন করা হয় ১৯৯৭ সালে৷ শুরু করেছিল বেসরকারি সংস্থা নারীপক্ষ৷ এবারও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে নারী নির্যাতন বন্ধ করার, নারী-পুরুষ সবার মাঝে নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ এ নিয়েই কথা হলো শিরিন হকের সঙ্গে৷ প্রশ্ন ছিল, আর দশটা সংস্থার মতো নারীপক্ষও কেন এবার প্রায় সব কর্মসূচী রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ রাখলো? জবাবে বাংলাদেশের সুপরিচিত এই নারীনেত্রী জানিয়েছেন, এ বছর বিশেষ কারণে ঢাকার বাইরে শুধু বরিশাল বিভাগে কর্মসূচি পালন করলেও বরাবর দেশজুড়েই করা হয়৷ এমন কর্মসূচির কার্যকারিতা সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ জবাবে বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাননি শিরিন হক৷ নারীর অধিকার আদায় যে খুব কঠিন এক লড়াই, এ লড়াই যে শুধু পুরুষের বিপক্ষে নয়, অনেক ক্ষেত্রে নারীও যে নারীর প্রতিপক্ষ আর তাই লড়াইটা যে মূলত সমাজের গভীরে প্রোথিত একটা মানসিকতার বিরুদ্ধে, সেটাও স্বীকার করলেন অসহায়ভাবে৷
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে আসা শিরিন হক হতাশা এবং অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন আরেকটি প্রশ্নেও৷ গৃহকর্মীদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন, এমনকি হত্যাও বাংলাদেশে অনেকদিন ধরেই প্রায় নিয়মিত ঘটনা৷ তাঁদের জন্য কি ‘নারীপক্ষ' আলাদাভাবে কিছু করছে? উত্তর ছিল ‘না'৷ সরাসরি শুধু গৃহকর্মীদের জন্য কিছু করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করার পাশাপাশি শিরিন হক অবশ্য এ কথাও জানিয়েছেন যে, একটি সংস্থা গৃহকর্মীদের হয়ে কাজ করছে এবং নারীপক্ষ সবসময়ই তাঁদের প্রয়োজনমতো সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে৷
সমাজের প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া কোনো মানসিকতাকে বদলে দেয়া খুব কঠিন এবং তা পারা যায়নি বলে অনেক না পারার কথা হতাশা নিয়ে শিরিন হক স্বীকার করলেও নারীপক্ষ যে তিন দশকে কিছুই অর্জন করেনি তা কিন্তু নয়৷ পত্র-পত্রিকায় যে এখন নারী বিষয়ক, বিশেষ করে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের খবরে বিশেষ কিছু নিয়ম মানা হয় সেটা কিন্তু নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেরই অর্জন৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তেমন কিছু সাফল্যের কথাও বলেছেন শিরীন হক৷