সাইবার অপরাধ আইন
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২রক্ষণশীল ক্যাথলিক রাষ্ট্র ফিলিপাইনের সরকার এতোদিন ধরে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ে উৎকণ্ঠিত থাকলেও খুব একটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না৷ এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য পুলিশের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল না৷ তাই তারাও এতোদিন এ নিয়ে অভিযোগ তুলছিল৷ ফলে অবশেষে ইন্টারনেটে অশ্লীল ছবি প্রকাশ, হ্যাকিং, তথ্য চুরি, পরিচয় গোপন এবং ক্ষতিকর বার্তা ছড়ানোর মতো অপরাধকর্ম দমনে কড়া আইন প্রণয়ন করেছে দেশটির সরকার৷
কিন্তু এই আইন প্রচলিত গণমাধ্যমের জন্য চালু থাকা আইনের চেয়েও বেশি কঠোর হয়ে গেছে এবং এর ফলে একদিকে বাক স্বাধীনতা খর্ব হওয়া আর অন্যদিকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ কারণ এই নতুন আইন অনুসারে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য কিংবা ছবি প্রকাশের জন্য ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ পেসো তথা ২৪ হাজার ডলার অর্থদণ্ড হতে পারে৷ অথচ একই অপরাধের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যম বা সংবাদপত্রের সাংবাদিক কিংবা সম্পাদকরা ভোগ করবেন চার বছরের কারাদণ্ড এবং মাত্র ছয় হাজার পেসো৷
এই আইনের আওতায় এখন সরকারি কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে৷ এছাড়া স্কাইপ-এর মতো ভয়েস চ্যাট কিংবা ভিডিও অ্যাপলিকেশনগুলোতে আঁড়ি পেতে তথ্য শোনার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে৷
নাগরিক গণমাধ্যম ওয়েবসাইট হিসেবে পরিচিত ‘ব্লগ ওয়াচ' এর অন্যতম সম্পাদক এবং রাজধানী ম্যানিলার স্বনামধন্য ব্লগার নোয়েমি দাদো বলেন, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা অসতর্কভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে কোন বিদ্বেষমূলক ছবি, মন্তব্য কিংবা নিবন্ধ প্রকাশ কিংবা পুনর্বার প্রকাশ করলেও তারা এই আইনের আওতায় শাস্তি ভোগ করবে৷ তিনি বলেন, ‘‘সবাইতো বিশেষজ্ঞ নয় যে, কোন বিষয়গুলো বিদ্বেষমূলক কিংবা মানহানিকর তা যাচাই করতে পারবে৷ আমার মতো একজন মায়ের কথাই ধরুন, কিংবা এমন শিশু-কিশোরদের কথা যারা নাটকীয়ভাবে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করতে পছন্দ করে - তাদের জন্য তো এখন বেশ বিপদ হলো৷ এটি আসলেই আমাদের স্বাধীনতা খর্ব করবে৷''
নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এশিয়া দপ্তরের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, এই আইন ফিলিপাইনের তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক যোগাযোগের জগতে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷ কারণ ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহারের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হার রয়েছে যেসব দেশে সেগুলোর একটি ফিলিপাইন৷ দেশটির প্রায় ১০ কোটি মানুষের এক তৃতীয়াংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করে৷ আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯৬ শতাংশেরই রয়েছে ফেসবুকে নিয়মিত বিচরণ৷
যাহোক, এই আইনকে অসাংবিধানিক অ্যাখ্যা দিয়ে এবং এর যথার্থতা চ্যালেঞ্জ করে ইতিমধ্যে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে পাঁচটি আবেদন জমা হয়েছে৷ এই আইনটি যখন সংসদে অনুমোদনের জন্য ভোটাভুটি হয়, তখন এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলেন সাংসদ তেওফিস্তো গুইঙ্গোনা৷ ইতিমধ্যে তিনি এই আইনের বিরুদ্ধে আদালতে গেছেন৷ তিনি আদালতে বলেন, ‘‘মানহানির অপরাধ কিংবা এর জন্য দায়ী ব্যক্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় দৃশ্যত এখন যে কোন ব্যক্তি ইন্টারনেটের কোন বক্তব্য কিংবা ছবির প্রেক্ষিতে মন্তব্য কিংবা পুনর্বক্তব্য দিলেই অপরাধী সাব্যস্ত হতে পারে৷''
নতুন আইন নিয়ে এমন বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর সংসদে এই আইনের পক্ষে থাকা কিছু সাংসদ এই আইনের সাথে নিজেদের সংশ্লিষ্টতা বিচ্ছিন্ন করছেন৷ এমনকি তাঁদের কেউ কেউ বলছেন, তাঁরা আইনে উল্লিখিত বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা পড়ে দেখেননি৷
এএইচ / জেডএইচ (এএফপি)