সমুদ্রের গ্রাসের হুমকির মুখে আলবেনিয়ার উপকূল অঞ্চল
৭ নভেম্বর ২০২৩আলবেনিয়ার উত্তরের লেগুন বা উপহ্রদগুলি যেন স্বর্গরাজ্য৷ ডেমুশ জেসইয়া প্রায় চার দশক ধরে সেখানে জেলের কাজ করছেন৷ তবে তাঁর মতে, বেশ কয়েক বছর ধরে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘যবে থেকে লেগুনে কাঁকড়া এসেছে, তখন থেকে সাধারণ ও ইল মাছের সংখ্যা কমে চলেছে৷ প্রতি বছর আমাদের জালে কম মাছ ধরা পড়ছে৷ আগে এই লেগুনে অনেক জাতের মাছ পাওয়া যেতো৷ কয়েক হাজার কিলো মাছ ধরতে পারতাম৷''
অ্যাড্রিয়াটিক সাগর থেকে এই উপহ্রদের মাঝে শুধু চিকন একফালি জমি রয়েছে৷ সমুদ্রের স্তরের উচ্চতা বেড়ে চলায় ব্লু ক্র্যাব জাতের কাঁকড়া লেগুনে প্রবেশ করতে পারছে৷ ইয়াক গিনিও মনে করেন, যে কাঁকড়া লেগুনের প্রাকৃতিক মৎসভাণ্ডারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে৷ আঞ্চলিক পরিবেশ সংরক্ষণকারী হিসেবে তিনি জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করেন৷
এই জীববিজ্ঞানীর মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই একফালি এই জমি সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে৷ গিনি বলেন, ‘‘সমুদ্রে ঝড় বাড়ছে, ভূমিক্ষয় হচ্ছে, তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে৷ বন্যাও লেগুনের উপর প্রভাব ফেলছে৷''
ইয়াক গিনির মতে, রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ না করলে সমুদ্র শুধু এই সব উপহ্রদই গ্রাস করে নেবে না, আলবেনিয়ার উপকূলও সঙ্কুচিত হবে৷ দেশের উপকূলের আনুমানিক প্রায় এক তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যেই ভূমিক্ষয়ের শিকার হয়েছে৷
প্রায় চার দশক আগে কমিউনিস্ট জমানায় এক বাংকার তৈরি হয়েছিল৷ সে সময়ে সেটি সমুদ্র থেকে প্রায় ৪০ মিটার দূরে ছিল৷ এমন অনেক বাংকার আজ পানির নীচে চলে গেছে৷ সমুদ্র আরো কয়েকটিকে গ্রাস করে নিতে চলেছে৷ সমুদ্রের গ্রাসের কারণে সঙ্কুচিত হয়ে পড়া সৈকতে পর্যটকদের জন্য বরাদ্দ জায়গাও কমছে৷ স্থানীয় এক মানুষ জানালেন, ‘‘গত বছর আমাদের এখানে আরো ছাতা ছিল৷ এ বছর একটি সারি কম করতে হয়েছে৷ কে জানে পরের বছর কী হবে! হয়তো আরো একটি সারি উধাও হয়ে যাবে৷''
একই সঙ্গে নতুন হোটেল গজিয়ে উঠছে, যা ভূমিক্ষয় আরো তরান্বিত করবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন৷
ফাটিয়োন নোকার বাবা নব্বইয়ের দশকের শেষে যে রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছিলেন, সেটিও সমুদ্রের গ্রাসে হারিয়ে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন৷ ফাটিয়োন বলেন, ‘‘আগে গ্রামের বাসিন্দারা এখানে আসতেন৷ তখন গোটা এলাকা সবুজ ছিল৷ অনেকটা অ্যামাজনের মতো দেখতে জঙ্গল ছিল৷ আজকের হাল নিজের চোখেই দেখুন৷''
ভূমিক্ষয় বন্ধ করতে তিনি আলবেনিয়ার সরকারের আরো পদক্ষেপের দাবি করছেন৷ রাজধানী টিরানায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে ক্লোদানা মারিকা তাঁর বক্তব্য জানালেন৷ উপকূল এলাকায় প্রকৃতি সংরক্ষণও তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ আলবেনিয়ার পরিবেশ ও পর্যটন মন্ত্রী ক্লোদানা মারিকা বলেন, ‘‘আমরা রূপায়নের জন্য সংগ্রাম করছি৷ আমাদের যথেষ্ট আর্থিক সম্পদ নেই, কর্মীর সংখ্যাও কম৷ কারণ অর্থায়নের বিষয়টি সব সময়ে সেই সব মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যাদের প্রয়োজন৷''
তিনি বলেন, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটের এক শতাংশেরও কম পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ধার্য করা হচ্ছে৷ আলবেনিয়ার আরো তিরিশ গুন বেশি অর্থ ব্যয় করা উচিত৷ কিন্তু দরিদ্র এই দেশের হাতে সেই টাকা নেই৷
আবার উপহ্রদে ফেরা যাক৷ যে সব মানুষ বাসস্থান ও জীবিকার জন্য লেগুনের উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য হুমকি বেড়েই চলেছে৷ ডেমুশ জেসইয়া বলেন, ‘‘বহু বছর আগেই এই সব লেগুন ক্ষতির প্রাথমিক লক্ষণ দেখিয়েছিল৷ কিন্তু এখানে যে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে, আমরা এমন আশঙ্কাকে গুরুত্ব দেই নি৷''
ডেমুশ বলেন, বিশাল পরিমাণে মাছ ধরার সময় শেষ হয়ে গেছে৷ আরো বেশি জেলে হাল ছেড়ে দিচ্ছেন৷ এখন একমাত্র ব্লু ক্র্যাবের কোনো অভাব নেই৷
ফ্যানি ফাকসার/এসবি