সময়ের অপেক্ষায় জামায়াত
২০ নভেম্বর ২০২৩তবে জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ‘‘আমরা এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না৷ আমরা সরকার বিরোধী আন্দোলনে আছি৷''
মতিউর রহমান আকন্দ আরো বলেন, ‘‘নিবন্ধন বাতিল হলেও দল হিসেবে জামায়াত তৎপর আছে৷ সংবিধান অনুযায়ী দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নাই৷ আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে না পারলেও, প্রতীক ব্যবহার করতে না পারলেও কোনো দল বা জোটের সঙ্গে সমঝোতা করে তাদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারব৷ আমাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবেও নির্বাচন করতে পারবেন৷ তবে সেটা আমরা যখন নির্বাচনে যাব তখন সিদ্ধান্ত নেব৷ এখন আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না৷''
আইনগত লড়াইয়ের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আপিল বিভাগের রায় নিয়ে রিভিউ আবেদন সুযোগ আছে৷ তবে আমরা এখন রিভিউ আবেদন করব না৷''
এক রিটের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট৷ ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে৷ ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দিয়েছিলো নির্বাচন কমিশন৷
২০১৪ সালে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন বর্জন করেছিলো জামায়াত৷ ২০১৮ সালে তারা নিবন্ধন না থাকায় দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি৷ ২০০৮ সালে তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়৷ এর আগের নির্বাচনগুলোতেও তারা অংশ নেয়৷
আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিলটি খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন৷ আপীলকারীর পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় খারিজের আদেশ দেয়া হয় (ডিসমিস ফর ডিফল্ট)৷ জামায়াতের আপিলের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী এবং অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন৷ ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য তারা শুনানিতে অংশ নিতে তাদের পক্ষে আরো ছয় মাস সময়ের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মো. জিয়াউর রহমান৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দুইজন আইনজীবীই শুনানির তারিখে আদালতে ছিলেন না৷ তাদের পক্ষে আদালতে আমি সময়ের আবেদন করেছিলাম৷ আদালত সময় না দিয়ে তাদের আসতে বলেন এবং মামলার শুনানি করতে চান৷ কিন্তু তারা আসেননি৷ ফলে আপিলটি ডিসমিস করে দেয়া হয়৷''
তার কথা, ‘‘এটা রায় নয়, আদেশ৷ এখন জামায়াত চাইলে আপিলটি রেস্টোর করার আবেদন করতে পারে৷ সেই আবেদন প্রহণ করলে আবার আপিল শুনানি হবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘রিভিউ আবেদনের প্রশ্ন এখনও আসেনি৷ কারণ আইনজীবী অনুপস্থিত থাকায় শুনানি হয়নি এবং আপিল খারিজ হয়েছে৷ রায় হলে রিভিউয়ের প্রশ্ন আসতো৷''
তার মতে, ‘‘জামায়াত এখন আর নিবন্ধিত দল নয়৷ ফলে আইন অনুযায়ী এই দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না৷ তবে দল হিসেবে কার্যক্রম চালাতে বাধা নেই৷''
জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, এখন আর তারা দলের নিবন্ধন নিয়ে নতুন করে আইনগত লড়াই শুরু করতে চান না৷ তারা এখন অনুকূল সময়ের জন্য অপেক্ষা করবেন৷ সময় এলে তারা আবার আইনি লড়াইয়ে যাবেন৷ এরইমধ্যে জামায়াতের নীতি-নির্ধারকেরা আলোচনা করে এই সিদ্বান্ত নিয়েছেন৷ জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়েও এই ব্যাপারে মেসেজ দিয়ে তাদের চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে৷
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে আপিল বিভাগের রায়কে ‘‘ন্যায়ভ্রষ্ট রায়'' বলে অভিহিত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে৷ আমরা মনে করি জনগণের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ঘৃণ্য উদ্দেশে এ ন্যায়ভ্রষ্ট রায় দেয়া হয়েছে৷''
তিনি তার দলের নেতা-কর্মীদের চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলকে আরও বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছেন৷
জানা গেছে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনেই থাকছে৷ তবে তাদের নীতি হলো, ‘‘বিএনপি দুই পা এগোলে জামায়াত এক পা এগোবে৷''
পিরোজপুর জেলা জামায়াতের আমীর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘‘আমরা এখন কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসরণ করছি৷ আমরা আন্দোলনে আছি৷ আন্দোলনেই থাকব৷''
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রিটের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ‘‘জামায়াতের আন্দোলন, সমাবেশ বা মিছিল মিটিং করার অধিকার নাই৷ কারণ দলটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক প্রমাণিত হয়েছে৷ কোনো ব্যক্তি বা কোনো দল তাদের নিবন্ধন থাকুক বা না থাকুক তারা সংবিধানে ৩৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মত প্রকাশ, সভা সমাবেশ করতে পারে৷ কিন্তু সেটা সংবিধান মেনেই করতে হয়৷ জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে৷ তাই তারা যে রাজনৈতিক কার্যক্রম করছে এবং হাইকোর্টের রায়ের পরও করেছে তা বেআইনি৷''