‘সন্ত্রাসের চক্র ভেঙে দিন’
২৩ মে ২০১৬ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সাত দেশের রাষ্ট্রদূতেরা রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলোর ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে এসব কথা বলেন৷ পরে এক বিবৃতিতে এ সাক্ষাতের কথা জানিয়ে তাদের অবস্থানও তুলে ধরে ইইউ৷
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা চলাকালে ঢাকায় মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর ধারাবাহিক হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও কয়েকজন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট৷ হত্যা করা হয়েছে প্রকাশক, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মগুরু, সমকামী অধিকারকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ভিন্ন মতের ইসলামি ভাবধারা অনুসারীদের ৷
সর্বশেষ গত শুক্রবার কুষ্টিয়ায় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে হোমিও চিকিত্সক মীর সানাউর রহমানকে৷ পরোপকারী এ চিকিৎসক সাধারণ মানুষকে ‘ফি' না নিয়ে চিকিত্সা সেবা দিতেন৷ এরই মধ্যে তথাকথিত সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস চিকিৎসক হত্যারও দায় স্বীকার করেছে৷
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে একই কায়দায় সানাউর রহমানসহ ১৪ জনকে হত্যা করা হলো৷
এ সব হামলার অনেকগুলোতে ‘দায়' স্বীকার করে তথাকথিত আইএস ও আল-কায়েদার নামে বার্তা পাঠানো হলেও সরকার মনে করে, দেশের ভেতরের জঙ্গিরাই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে৷
রবিবারের বিবৃতিতে ইইউ বলেছে, ‘‘এ সব হামলা মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও বিশ্বাসের প্রতি 'নজিরবিহীন হুমকি তৈরি করেছে৷ মুক্ত, সহনশীল, স্থিতিশীল ও সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি রয়েছে, এসব ঘটনায় তা ক্ষুণ্ণ হতে পারে৷''
এ সব ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে এবং 'ঝুঁকিতে' থাকা সব নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করে ‘সহিংসতার এই চক্র' ভেঙে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে ইইউ৷
ইইউ বলেছে, ‘‘জঙ্গিবাদ মোকাবেলার জন্য কার্যকর ও ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার এবং এ জন্য গণতান্ত্রিক দায়িত্বশীলতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শক্তিশালী মিডিয়া, সহনশীল সুশীল সমাজের প্রয়োজন৷''
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকা দূতাবাসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা জোরালো করতে চায়৷''
সহিংস চরমপন্থা দমনে বৃহত্তর কর্মসূচির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের প্রয়োজনীয়তার কথাও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি:
এদিকে রবিবারের বৈঠকের ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও তার অগ্রগতি সম্পর্কে ইউরোপীয় মিশনগুলোর প্রধানদের অবহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী৷''
তিনি দাবি করেছেন, ‘‘এ সব হত্যাকাণ্ডে জামায়াতে ইসলামী ও এর সংশিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী জড়িত৷''
বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, ‘‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ এবং সরকারকে সমস্যায় ফেলতে এ সব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে৷ প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, জামায়াতে ইসলামী এবং এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী যেমন জামাআ'তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি), আনসার আল-ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হরকাতুল-জিহাদ-আল-ইসলাম (হুজি-বি), হিজবুত তাহরির বাংলাদেশ এবং নতুন আবির্ভূত আল-মুজাহিদ নামের কিছু সন্ত্রাসী সংগঠন এ সব হত্যাকাণ্ডে জড়িত৷''
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাতে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘বিএনপি দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের (সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের) সহযোগিতা করছে৷ ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়া প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার যে আহ্বান জানানো হয় তাতেও দলটি কান দেয়নি৷''
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার যা-ই বলুক না কেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা তদন্তকারীরা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি৷ একটি ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো ঘটনা তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই৷ এটা হতাশাজন৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অভ্যনন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশিদের চাপ যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি বাংলাদেশে বিরুদ্ধ মতকে দমনের যে প্রবণতা তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়৷ সরকারকে মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ নাগরিকদের জীবনের নিরপত্তা দিতে হবে৷ একটি গণতান্ত্রিক সরকারের এটাই প্রধান বৈশিষ্ট্য৷''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷