1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারকে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলো এত আগ্রহী কেন?

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন আর বেসরকারি খাতে ঋণ দিতে আগ্রহী নয়৷ বরং সরকারকে ঋণ দিয়ে নিরাপদ থাকতে চায় তারা৷ অন্যদিকে বাজেট ঘাটতির চাপ মেটাতে বেশি সুদের সঞ্চয়পত্রের বদলে ব্যাংকমুখী সরকারও৷

https://p.dw.com/p/3YB6P
ছবি: Reuters/A. Rahman

প্রতিবছর বাজেটে সরকার যে খরচের লক্ষ্যমাত্রা ধরে তার একটি অংশ ঘাটতি থাকে, যা মেটানো হয় দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে৷ চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল সরকার৷ এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়ার কথা ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় মাসেই ব্যাংক খাত থেকে মোট ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা৷ গণমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে, জানুয়ারিতে তা আরো বেড়ে পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে৷ ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত তা ৫১ হাজার ৭৪১ কোটি টাকায় ঠেকেছে৷

যেভাবে সরকার ব্যাংক থেকে ধার করে

সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয় বেশ কয়েকটি উপায়ে৷ সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকেও ধার করে৷ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যার পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা৷ বাকি ৪১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকাই নেয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে৷ এই টাকা সরকার নিয়েছে বাজারে ট্রেজারি বিল বা বন্ড ছেড়ে৷ ব্যাংক সেই ঋণপত্র কিনে সরকারকে টাকা দিয়েছে৷

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অর্থমন্ত্রণালয় চাইলে তারা ঋণ দিতে বাধ্য৷ কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে কোনো বাধ্যবাধকতার মধ্য দিয়ে সরকার ঋণ নেয় না৷ ট্রেজারি বিলগুলো নিলাম হয়৷ যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেখানে অংশগ্রহণ করতে চায়, যেই রেট তারা দেয়, তার মধ্যে যে নিতে পারে সে নেয়৷ এখানে কোনো জোরজবরদস্তির ব্যাপার নেই৷’’

কেন ব্যাংকগুলোর আগ্রহ

সাধারণত সরকারকে ঋণ দেয়ার চেয়েও বাণিজ্যিকভাবে ঋণ বিতরণ করেই ব্যাংকের বেশি লাভ হওয়ার কথা৷ তারপরও সরকারের ঋণপত্র কিনতে কেন এত আগ্রহী তারা? ড. জায়েদ বখত মনে করেন, ব্যাংকগুলো এখন তাদের ‘পোর্টফোলিও ডাইভারসিফাই' করতে চায়৷ পাশাপাশি খেলাপি ঋণও এড়াতে চায় তারা৷ যার কারণে নয়ভাগে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণের চেয়ে সরকারের বন্ড কেনাই তাদের জন্য নিরাপদ৷

গত কয়েক বছর ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ক্রমান্বয়ে বেড়েছে৷ শিল্পখাতে ঋণ দিয়ে তা আদায়ে তারা হিমশিম খাচ্ছে৷ আগের চেয়ে কিছুটা কমার পরও বিতরণকৃত ঋণের ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে ডিসেম্বর পর্যন্ত, যা মোট ঋণের নয় দশমিক তিন-দুই শতাংশ৷

অন্যদিকে সরকারি ঋণপত্র কিনলে ব্যাংকগুলো আগের চেয়েও বেশি হারে সুদ পাচ্ছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ট্রেজারি বন্ডের সুদ হার প্রায় আট ভাগের উপরে চলে গেছে৷ সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর জন্য সরকারি বিনিয়োগই এখন সবচেয়ে নিরাপদ৷ ’’

বেসরকারি খাত কি ঋণ বঞ্চিত হচ্ছে?

সবমিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ ৩৮ দশমিক চার-আট ভাগ বেড়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল মাত্র তিন দশমিক চার ভাগ৷

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সরকার নিজেই এত ঋণ নেয়ার কারণে বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে না বেসরকারি খাত৷ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ব্যাংকের প্রধান কাজই হলো দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করা৷ তারা আমানতকারীদের টাকা নেবেন সেই টাকা বিনিয়োগের জন্য বিতরণ করবেন৷ কিন্তু এখন তাদের প্রকৃত কাজটাই কমে যাবে৷ তারা অন্য উপায়ে আয়ের পথ খুঁজবেন, যেটা খুবই খারাপ ইঙ্গিত৷’’

তার এই পূর্বাভাস মিলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও৷ বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের গতি এরইমধ্যে কমে গেছে৷ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মোটে সোয়া চার ভাগ, যেখানে আগের বছরের একই সময়েও এই হার ছিল সাড়ে পাঁচ ভাগের বেশি৷ তবে সরকারের ঋণ নেয়ার কারণেই এমনটা হচ্ছে তা মানতে নারাজ ড. জায়েদ বখত৷ তিনি বলেন, এত কিছুর পরও ব্যাংকে অলস অর্থ আছে৷ কিন্তু ব্যাংকগুলোর অতি সতর্কতার কারণেই বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে যাচ্ছে৷

‘‘বেসরকারি ব্যাংকই প্রাইভেট সেক্টরের (বেসরকারি খাতের) ঋণের সত্তর ভাগ বিতরণ করে৷ তারা যেহেতু অনেক সতর্কতার সাথে ঋণ দিচ্ছে সেকারণেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কম,’’ বলেন তিনি৷

সরকারের ঋণ যে কারণে বাড়ছে

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ধরেছিল৷ এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসে এনবিআরের এক লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা আদায়ের কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র এক লাখ পাঁচ হাজার ১৬১ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ ৩১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল৷

অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা বিক্রির লক্ষ্য ছিল সরকারের, সেখানে ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা৷

বাজেটের ঘাটতি মেটাতে তাই ব্যাংক খাতের ঋণে ঝুঁকেছে সরকার৷ অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত মনে করেন, সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমাতে সরকার যে এতটা সফল হবে তা তারা বুঝতে পারেনি৷ বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে তার চেয়েও কম খরচে এখন তারা টাকা নিতে পারছে৷

তবে সরকারের এই আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে বলে মনে করেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে একসাথে৷ সেগুলোর বেশরভাগই অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন থেকে হচ্ছে৷...অনেক প্রকল্প আছে যেগুলোর কোন প্রয়োজনই নেই৷ আর সেগুলোর খরচও বেড়ে যাচ্ছে প্রায়ই৷ প্রকল্পের কেনাকাটায় দুর্নীতি হচ্ছে৷ এগুলোর কোন নিয়ন্ত্রণ নাই৷’’ এসব কারণে সরকারের বাজেট ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, যা ঋণের চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেই মনে করেন ড. সালেহউদ্দিন৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য