সরকারবিরোধীরা এখন কী করবে
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪জানা গেছে, সরকারের মুখোমুখি আন্দোলননিতে হলে কী করা দরকার সেটাই বিএনপি ও তাদের সমমনাদের ভাবনার বিষয় এখন। সেটা করতে কেনে কৌশলে যেতে হবে, কতটা সময় লাগবে তাও ভাবনার বিষয়। তাদের মধ্যে শুধু আন্দোলন নয় , দল এবং নেতৃত্ব পুনর্গঠনের প্রশ্নও উঠেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, " মুক্তি পাওয়ার পর মহাসচিব এখন কিছুটা অসুস্থ আছেন। আশা করছি চার-পাঁচ দিনের মধ্যে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তিনি পরবর্তী আন্দোলন নিয়ে বৈঠক করবেন।” আর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরাও তাদের সঙ্গে বৈঠকের আশা করছেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি ও তাদের সমমনারা আলাদা আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছে। তবে ওইসব কর্মসূচি গতানুগতিক। বিএনপির এক নেতা বলেন," এখন ঝড়ের পরের নীরবতা চলছে। আমরা তো প্রচণ্ড চাপের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। তাই এখন একটু দম নিচ্ছি। আন্দোলন অবশ্যই পুনর্গঠন হবে।”
বিএনপি গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে "দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও” নামে একটি কর্মসূচি শুরু করেছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচি শেষ হবে। এই কর্মসূচিতে তারা ঢাকাসহ সারাদেশে লিফলেট বিতরণ করছে। ছয় দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ১৬ ফেব্রুয়ারি " ব্যাংক লোপাট” ও "অর্থ পাচারের” প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে। গত ২০ জানুয়ারি থেকে তারা " প্রহসনের নির্বাচন মানিনা, গণতন্ত্রের পক্ষে গণস্বাক্ষর” শিরোনামে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করছে।
১২-দলীয় জোট, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দলও পৃথকভাবে সরকারের ‘প্রহসনের' নির্বাচনের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি পালন করছে।
তবে এই সব কর্মসূচি আসলে রুটিন কর্মসূচি। নির্বাচনের পর আর যুগপৎ কর্মর্সূচি হয়নি। তাদের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মধ্যে আন্দোলনের দুইটি ধারায় মতামত আছে। একটি ধারা চাইছে এখন এইভাবেই সাধারণ কর্মসূচি দিয়ে সময়ের জন্য অপেক্ষা করা। কারণ বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে আছে। তারা মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। তার আগে আবার বড় আন্দোলনে গেলে আবার গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হবে। আরো অনেক নেতা-কর্মীকে জেলে যেতে হবে। আরেকটি ধারা চাইছে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আবার একটি ডেটলাইন দিয়ে অল-আউট কর্মসূচিতে যেতে। তবে বিএনপি কোন ধারায় যাবে তা স্পষ্ট হতে আরো সপ্তাহ দুই সময় লাগবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া শুরু করলে অনেক কিছুই বোঝা যাবে।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন," আমরা যেভাবে আন্দোলন করেছি, সেটা তো ফেল হয়েছে। আমরা টার্গেটে যেতে পারিনি। আর সরকার নির্বাচন করেছে, কিন্তু সেই নির্বাচনে তো শতকরা পাঁচ ভাগ ভোটারও ভোট দেয়নি। আওয়ামী লীগের লোকজনও ভোট দেয়নি। সেই বিবেচনায় আন্দোলন সফল।”
তিনি বলেন, " কিন্ত আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ। নেতৃত্বের দুর্বলতা এগুলো নিয়ে মূল্যায়নের দরকার আছে। আমাদের মধ্যে কিছু আলোচনা হয়েছে। আরো হবে। এখানে মূল দলতো বিএনপি। নির্বাচনের আগে বিএনপিনসহ আমাদের বিভিন্ন দলের ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগরে পাঠানো হয়েছে। ফলে আন্দোলন এগিয়ে নেয়া কঠিন ছিলো। আমরা তো নির্বাচন প্রতিহত করার কথা বলিনি, বর্জনের কথা বলেছি। দেশের মানুষ নির্বাচন বর্জন করেছে।”
তিনি বলেন," আন্দোলনকে এখন নতুন করে সাজাতে হবে। সেটা নিয়েই কাজ করছি আমরা। আমরা দ্রব্যমূল্যসহ সাধারণ মানুষের ইস্যু নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলব।”
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন," নেতৃত্বের তো সংকট আছে। সেটা ওনারাও বুঝতে পারছেন। আমরাও বলছি। কিন্তু সেটা আমার দিক থেকে ঠিক করা কঠিন। সেটা কীভাবে ব্যালেন্স করা হবে। এটা এটা সার্বিক বিষয়। সেটা করা হয়তো কঠিন। তবে আন্দোলটা পুনর্গঠন করা দরকার । আমাদের মধ্যে এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। তবে চূড়ান্ত হতে সময় লাগবে।”
তিনি মনে করেন," আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি একই আছে। ফলে আমাদের আন্দোলনটা জারি আছে। সরকার সফল হয়নি। নির্বাচন করা সফলতা নয়। তবে আমরা যেটা পারিনি সেটা কেন পারনি দেখা দরকার। আমাদের ঘাটতির জায়গাগুলো বের করা দরকার। এখন আমরা যে যার মতো কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু আমাদের তো আবার সরকারের মুখোমুখি যেতে হবে। সেই জায়গায় আন্দোলনের পুনর্গঠন করা দরকার।”
বিএনপিও মনে করে, তাদের আন্দোলন এবং নেতৃত্ব সব কিছুই রিভিউ করা দরকার । দেখা দরকার কোথায় দুর্বলতা আছে। আন্দোলনের জন্য সব কিছু প্রস্তুত থাকার পর কেন সফলতা আসলনা সেটা দেখা দরকার। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন," জনগণতো তৈরি আছে। আন্দোলনের কৌশল হিসেবে কর্মসূচির পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। আমরা সেটাই করছি। আমরা আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি। যোগাযোগ হচ্ছে। আন্দোলন তো চলছে এবং আরো নতুন রূপে আসবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন," সরকারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা নয়, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এমনিতেই ছাড়া পেয়ছেন। সরকার মিথ্যা মামলায় কতদিন কারাগারে রাখবে? আরো যারা নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন তারাও ছাড়া পেয়ে যাবেন।”
তিনি বলেন ," মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব মুক্তি পাওয়ার পর আমাদের সঙ্গে তার নিয়মিত কথা হচ্ছে। তার শরীর এখনো কিছুটা খারাপ। আশা করছি চার-পাঁচ দিনের মধ্যে তিনি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শরিকদের সঙ্গেও বসবেন।”
জানা গেছে আন্দোলন পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে শরিকদের ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। আবারো মুলতবি বৈঠক হবে। ওই দিনের বৈঠকে শুধু আন্দোলন পুনর্গঠন নয়, যার দল ও নেতৃত্ব পুনর্গঠনের বিষয়ও উঠে এসেছে।