সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিমুক্ত রাখার প্রাথমিক উদ্যোগ
২৬ জুলাই ২০২১সদ্য অবসরে যাওয়া জনপ্রশাসন সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সম্পদের হিসাব দেয়ার নির্ধারত ফরমটি তৈরি করে যান৷ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এখন সেই ফরম্যাটেই হিসাব দিতে হবে৷ তবে কতদিনের মধ্যে দিতে হবে সেই সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি৷ পরে সময় নির্ধারণ করা হবে৷
১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী চাকরি বিধিমালায়ই সম্পদের হিসাবের কথা বলা আছে৷ তাতে বলা হয়েছে. সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার সময় এবং প্রতি পাঁচ বছর পর পর সবাই সম্পদের হিসাব দেবেন৷ ফলে চাকরি শুরুর সময় সম্পদ কেমন ছিল এবং পরে কত বাড়ল তা স্পষ্ট হবে৷ আর এই হিসাব দেয়ার জন্য নির্ধারিত ফরম থাকার কথাও আছে বিধিমালায়৷ অথচ গত ৪০ বছরে সেই ফরম তৈরি হয়নি৷শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘‘আমার জানা মতে ওয়ান ইলেভেনের সময় একবার সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছিল৷ আর সর্বশেষ কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সম্পদের হিসাব নিয়ে দুদকে পাঠানো হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে একজন সাংবাদিককে নির্যাতনের অভিযোগ আছে৷’’ তবে এর বাইরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মাচারীদের একবার সম্পদের হিসাব নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু আইনে সম্পদের হিসাব না দিলে শান্তির বিধান থাকলেও ৪০ বছর ধরে কেউ সম্পদের হিসাব দেননি৷
সাবেক জন প্রশাসন সচিব বলেন, ‘‘সম্পদের এই হিসাব দেয়া হলে কারো সম্পদে অস্বাভাবিকতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত ও ব্যবস্থা হতে পারে৷ আবার দুদকের কাছেও তদন্ত পাঠানো যেতে পারে৷ এটা হলে প্রশাসনে দুর্নীতি কমে যাবে৷ স্বচ্ছতা আসবে৷ এর প্রভাবে অন্য খাতেও দুর্নীতি কমবে৷ যার সুফল দেশের মানুষ পাবে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান এই হিসাব দেয়ার ব্যবস্থা কার্যকর হোক৷’’
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করি না৷ আমাদের কাছে অভিযোগ আসতে হয়৷ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার বিধান আগেই ছিল৷ এখন এটা সরকার কার্যকর করতে যাচ্ছে৷ তবে তারা চাইলে অভিযোগ দুদকের কাছেও পাঠাতে পারে৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘যদি সম্পদের বিবরণী নেয়া হয় তাহলে কেউ দুর্নীতি করলে তখনই ধরা পড়বে৷ আয়ের সাথে সম্পদ সঙ্গতিপূর্ণ না হলেই তো ধরা পড়ে যাবে৷ আমাদের লাগবে না৷ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই ধরতে পারবে৷ বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে৷ আর তদন্তের জন্য আমাদের কাছে পাঠাতে পারবে৷ আমাদের কাজ অনেক সহজ হবে৷’’
টিআইবির একাধিক মতামত জরিপে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দাখিলের দাবি স্পষ্ট হয়েছে৷ সাধারণ মানুষ অনেক দিন ধরেই এই দাবি জানিয়ে আসছিলেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেয়ার আইন অনেক পুরনো৷ কিন্তু এতদিন তারা সেই আইন মানেননি৷ তারা সম্পদের হিসাব দেয়নি৷ তারপরও এখন যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাকে সাধুবাদ জানাই৷ হিসাব ও তা হালনাগাদ করা জরুরি৷’’
‘‘কিন্তু এটা কার্যকর ও নিয়মিত হতে হবে৷ এই সম্পদের শুধু হিসাব নিয়ে রেখে দিলেই চলবে না৷ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ দুদকে পাঠাতে হবে৷ তাহলে এটা দুর্নীতি দমনে সহায়ক হবে৷’’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এরইমধ্যে সব মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাবের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে৷ তবে সময় বেঁধে দেয়া হয়নি৷ জানা গেছে, লকডাউনের পর পরিস্থতি বুঝে সময়ও বেঁধে দেয়া হবে৷