সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার সময়ের দাবি
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮বাংলাদেশে সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত৷ অনগ্রসর শ্রেণিকে এই সুবিধা দিয়ে সমতা বিধানের লক্ষ্যে এই কোটার প্রবর্তণ করা হয় স্বাধীনতার পরেই৷ কিন্তু মোট কোটার পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগেরও বেশি৷ সরকারি চাকরির অর্ধেকেরও বেশি কেটার দখলে, মেধার দখলে অর্ধেকেরও কম শতকরা ৪৫ ভাগ৷
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে৷ তবে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়৷ সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷
রবিবারও ঢাকাসহ সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রার্থীরা৷ এক সপ্তাহ আগে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কোটা সংস্কার ও সংস্কার বিরোধীদের মধ্যে ঢাকায় সংঘর্ষও হয়েছে৷
রবিবারের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে৷ তাতে সরকারি চাকরিতে কোটা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ রাখার দাবি করা হয়েছে৷
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহেদুল আনোয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কোটা বাতিল নয়, সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছি৷ কোটা আমাদের সংবিধানেই আছে৷ তবে কোটা যেখানে বৈষম্য দূর করার জন্য করা হয়েছে সেখানে এখন কোটা ব্যবস্থাই বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন মোট কোটা ৫৬ শতাংশ৷ এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য মোট কোটা সংরক্ষিত ৩৬ শতাংশ৷ কিন্তু তারা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ২.৬৩ শতাংশ৷ জেলা এবং নারী কোটা আছে মোট ২০ শতাংশ৷ তাহলে মেধার জন্য সুযোগ কই? এরকম হলে তো যারা মেধাবী, যারা যোগ্য, তারা বঞ্চিত হচ্ছে৷ আমরা চাই কোটা থাকুক, তবে তা কোনোভাবেই যেন সব মিলিয়ে ১০ শতাংশের বেশি না হয়৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল বা সংস্কারের দাবি করি নাই৷ আমরা পুরো কোটা ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করছি৷''
অন্যদিকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড-এর সাধাররণ সম্পাদক সেলিম রেজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরাও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চাই৷ কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের কোটা বাতিলের দাবির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান৷ কারণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এই কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাতে সপরিবারে হত্যার পর এই কোটা বাতিল করা হয়৷ ২৪ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেয়া হয়নি৷ ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য আবার কোটা চালু হয়৷ ২৪ বছর যদি কোটা বন্ধ না রাখা হত তাহলে এখন আর মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রয়োজন থাকতো না৷ আমাদের যে বঞ্চিত করা হয়েছে তাতো পুষিয়ে দিতে হবে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে আপত্তিকর কথা বলছে, কটুক্তি করছে তাদের বায়োডাটা আমাদের কাছে আছে৷ তারা কারা আমরা জানি৷ সংবাদ সম্মেলন করে আমরা তাদের পরিচয় প্রকাশ করব৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে এখন কোটার যে অবস্থা তা ন্যায় নীতির পরিপন্থী৷ কারণ মেধার চেয়ে সংরক্ষিত কোটা বেশি হতে পারেনা৷ বাংলাদেশের সংবিধানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমতা নীতির কথা বলা হয়েছে৷ তবে সংবিধানে এও বলা হয়েছে অনগ্রসর সম্প্রদায়কে অগ্রসর করতে কোনো বিধান করতে সরকারকে ওই(সমতা) বিধান বাধাগ্রস্ত করবেনা৷ তবে প্রশ্ন হল মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা বলেই কি অনগ্রসর? আর আরো যারা অনগ্রসর কোটা সুবিধা পাচ্ছেনা তারা এখনো অনগ্রসর আছেন কিনা৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি এখন নতুন করে পর্যালোচনা করা দরকার৷ এটার সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে৷ কোনোভাবেই কোটা শতকরা ৫০ ভাগের বেশি হওয়া উচিত না৷ আর যখন ১৯টি জেলা ছিল তখন সেখানে কোটা বিন্যাস করা সম্ভব ছিল৷ এখন ৬৪ জেলায় কোটা বিন্যাস অবাস্তব৷''
কোটা পদ্ধতি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷