বাংলা ভাষার প্রচলন
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর পার হলেও আজো বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন না হবার পেছনে রাজনৈতিক উদাসীনতা এবং সরকারি উদ্যোগহীনতাকেই দায়ী মনে করছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী৷
ডিডাব্লিউ রেডিওকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, ‘‘ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাকে পরিত্যাগ করে আমরা গ্রহণ করি ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদ৷ আর তারই পথ ধরে আসে আমাদের স্বাধীনতা৷ কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, একুশের সেই ধর্মনিরপেক্ষ চেতনাকেও আমরা সমুন্নত রাখতে পারি নি৷ ''
এক্ষেত্রেও দেশের দ্বিদলীয় রাজনীতির টানাপোড়েনকেই দায়ী করেছেন তিনি৷
তিনি বলছেন, ‘‘ভোটার রাজনীতির কারণে আমাদের রাজনীতিবিদেরা আমাদের ধর্মকে ব্যবহার করছে৷ সুতরাং আমাদের এই সামগ্রিক ব্যর্থতার জন্য আসলে রাজনীতিবিদেরাই দায়ী৷''
ভাষা আন্দোলনের স্বপ্নভঙ্গের কথা বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উচ্চ আদালত ও উচ্চশিক্ষার মাধ্যম এখনো ইংরেজি৷ এখনো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলোর অধিকাংশ বই ইংরেজিতে৷ শুধু যে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি তাই নয়, আমাদের দেশে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও আছে বিভাজন৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই দেশে একই সঙ্গে তিন ধরণের শিক্ষা পদ্ধতি চলছে৷ বাংলা, ইংরেজি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা৷ মাদ্রাসা শিক্ষা এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে বাংলার কোনো গুরুত্বই নেই৷ এটা খুবই দুঃখজনক৷''
সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের যে দাবি আজো পূরণ হয় নি তা কীভাবে পূরণ হতে পারে? তারই কিছু পথও দেখাচ্ছেন তিনি৷
‘‘সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে৷ মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রচলন করতে হবে৷ একই দেশে তিন ধরণের শিক্ষা পদ্ধতি নয়, ধনী-দরিদ্র সবার জন্য একধরণের শিক্ষা চালু করতে হবে৷ পাশাপাশি বাংলা ভাষায় প্রচুর সাহিত্য লেখা ও গবেষণা করতে হবে যাতে ভাষা আরো সমৃদ্ধ হয়৷'' তাহলেই আমাদের একুশের প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷
প্রতিবেদন: আফরোজা সোমা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক