সাংবাদিক খুনের তদন্তে হেগের ট্রাইবুনাল
২ নভেম্বর ২০২১তার শেষ লেখায় মেক্সিকোর সাংবাদিক মিগুয়েল লোপেজ ভেলাস্কো নারীহত্যা, স্বজনপ্রীতি ও দূষিত পানীয় জল নিয়ে লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ''কর্তৃপক্ষ এই সব সমস্যার সমাধান করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদি তারা প্রতিশ্রুতি না রাখে, তাহলে আমরা তাদের মনে করাতে থাকব।''
মনে করাতে পারেননি তিনি। এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে হত্যা করা হয়। ২০১১ সালের ২০ জুন ভোরের দিকে হত্যাকারীরা তার বাড়িতে আসে। তিনি তখন ঘুমোচ্ছিলেন। হত্যাকারীরা সামনের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সাংবাদিক, তার স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে হত্যা করে। ৪০০টিরও বেশি বুলেট বৃষ্টি করেছিল তারা।
পাশের ব্লকেই পুলিশ ছিল। তারা একটি নজরদারি গাড়িও পাঠায়নি। দশ বছর পরেও তদন্তকারীরা দোষীদের খুঁজে পায়নি, হত্যার কারণও তারা বের করতে পারেনি। লোপেজের বড় দুই ছেলে অজ্ঞাতবাসে। তাদের ভয়, তাদেরও হত্যাকারীরা মারতে পারে।
৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই হত্যাকারী অধরা
রিপোটার্স উইদাউট বডার্স-এর মেক্সিকো প্রতিনিধি ব্যাবলিনা ফ্লোরেস বলেছেন, ''হত্যাকারীরা একটি পরিবারকে শেষ করে দিল। কিন্তু তারা ধরা পড়ল না। ৯০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে হত্যাকারীরা ধরা পড়ে না।''
এখন বিষয়টি নিয়ে শুনানি শুরু করবে পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইবুনাল। মঙ্গলবার প্রেস ফ্রিডম ডে থেকেই শুরু হচ্ছে শুনানি।
প্রথমে তিন সাংবাদিকের হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে চায় ট্রাইবুনাল। লোপেজ ছাড়া বাকি দুই সাংবাদিক হলেন শ্রীলঙ্কার লাসান্থা বিক্রমাতুঙ্গে এবং সিরিয়ার নাবিল আল-শারাবাজি। এই ট্রাইবুনালের শাস্তি দেয়ার অধিকার নেই। কিন্তু তারা অন্তত সচেতনতা বাড়াতে পারে, সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
'রাষ্ট্রকে দায় স্বীকার করতে হবে'
ট্রাইবুনালকে এই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড, রিপোর্টার্স উইদাউট বডার্স এবং কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস(সিপিজে)। সিপিজে-র লাতিন অ্যামেরিকার সমন্বয়কারী নাতালিয়া সাউথউইক বলেছেন, ''রাষ্ট্র সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে পারছে না। তাদের দায় স্বীকার করতে হবে। এই প্রয়াস লাতিন অ্যামেরিকার জন্য খুবই জরুরি। সাংবাদিকদের হত্যাকারীরা কখনোই ধরা পড়ে না। বিশেষ করে মেক্সিকোর অবস্থা সব চেয়ে খারাপ।''
সাংবাদিক সুরক্ষার প্রশ্ন
২০১২ সালে মানবাধিকার কর্মীদের চাপের ফলে সাংবাদিক ও অধিকাররক্ষা কর্মীদের সুরক্ষা নিয়ে মেক্সিকোর কংগ্রেস একটি আইন পাশ করে। এরপর ৫০০ সাংবাদিক সহ এক হাজার ৫০০ জন ওই আইন অনুসারে সুরক্ষা চেয়েছেন।
কিন্তু এই ব্যবস্থা খুব বেশি করে আমলাতান্ত্রিক ও ধীরগতিতে চলে। আইন অনুসারে, কেউ সুরক্ষা চাইলে ১২ ঘণ্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। পুলিশি টহল, দেহরক্ষী দেয়া, দরকার হলে বাড়ি বদল করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এই সব কাজ করতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়।
আন্দ্রে ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডোর যখন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট হন, তখন তিনি সুরক্ষা নীতিতে ব্যাপক বদলের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ৪৩ জন সাংবাদিক ও ৬৯ জন মানবাধিকার কর্মীকে মেক্সিকোয় হত্যা করা হয়েছে।
সান্দ্রা ওয়েস/জিএইচ