প্রধান বিচারপতিকে ‘মিসকোট'
২৫ আগস্ট ২০১৭২৪ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে জুডিশিয়াল ইন্টারপ্রিটেশন নামক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আমাকে মিসকোট করবেন না৷ আমাকে নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়৷ এমনকি আমি কোর্টে যা বলি কিছু তা ‘ডিসটর্টেড' করা হয়৷ আর এতে আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়৷ এটা যাতে আমাকে না পড়তে হয়৷'' প্রধান বিচারপতি অবশ্য সুনির্দষ্টভাবে বলেননি যে তাঁকে কোথায়, কীভাবে ‘মিসকোট' করা হয়েছে৷
এর একদিন আগে ২৩ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দাবি করেন, ‘‘পাকিস্তান প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি গণমাধ্যমে ভুলভাবে এসেছেন৷'' তিনি আদালতে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘আমি বললাম, ‘দেখেন, বাইরে অবস্থা খুব উত্তপ্ত৷ এখন লম্বা সময় দিয়ে দেন (শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রসঙ্গে)৷ উত্তপ্ত অবস্থা কাটুক, তারপর গভর্নমেন্ট এটা দেখবে৷' তখন উনি (প্রধান বিচারপতি) বললেন, ‘উত্তপ্ত তো আমরা করিনি৷ আমরা একটা রায় দিয়েছি আর এটা নিয়ে আপনারা এত আলাপ করছেন৷' পাকিস্তানের রায়ের পর তো প্রাইম মিনিস্টারও চলে গেল, কিন্তু সেখানে তো কিছু হয়নি৷''
এর আগেও প্রধান বিচারপতি সংবাদমাধ্যম সম্পর্কে একই ধরনের কথা বলেছিলেন৷ গত ২১ মে জয়পুর হাটে তিনি বলেন, ‘‘আমার বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়৷ কিছু মিডিয়া তাদের কাটতির জন্য আমার বক্তব্য সঠিকভাবে তুলে না ধরে ভুলভাবে প্রকাশ করে৷''
আদালতের ‘প্রসিডিংস' বা যুক্তিতর্ক এবং কথাবার্তা কতটুকু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ নিয়ে কোনো নীতিমালা বা বিধি নেই৷ তবে ‘মিসকোট' না করলেই হলো৷ সঠিকভাবে লিখলে বা উদ্ধৃত করলে কোনো সমস্যা নেই৷ যথার্থভাবে ‘কোট' করার দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে৷''
আদালত তো কখনো কখনো কতটুকু লেখা যাবে বা কতটুকু লেখা যাবে না, তা বলে দেয় – এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে আদালত এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেয়নি৷''
পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির যে বললেন তাঁর কথা গণমাধ্যমে ভুলভাবে এসেছে – এ কথা তিনি কেন বললেন? প্রধান বিচারপতি জানান, ‘‘এ নিয়ে এখন আর আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না৷''
এ নিয়ে আইন ও আদালত বিষয়ে ‘দ্য ডেইলি স্টার'-এর সিনিয়র সাংবাদিক আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত বা প্রধান বিচারপতির কোনো বক্তব্য ‘মিসকোট' করা হলে তা চরম ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ সেটা দেশ তথা বিচার বিভাগেরও ক্ষতি করতে পারে৷ তাই আইন আদালত সম্পর্কে প্রতিবেদন করার সময় সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়৷ আদালতের ভাষা, মেজাজ এবং কোনো কথার প্রকৃত অর্থও বোঝা প্রয়োজন৷''
আশুতোষ ষোড়শ সংশোধনীসহ উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক রায় এবং আইনগত বিতর্কগুলো নিজে আপিল বিভাগে উপস্থিত থেকে কাভার করেছেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সাধারণত যেটা করি তা হলো মনোযোগ দিয়ে শুনি, নোট নেই এবং কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে পরে আদালত সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তা বুঝে নেই৷ এছাড়া বক্তব্যে কোনো অস্পষ্টতা থাকলে তা ‘ক্লারিফাই' করে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করি৷''
প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ‘মিসকোট' করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি ‘মিসকোট' করিনি৷ তবে অন্য কেউ করেছেন কিনা, তা আমি তা বলতে পারব না৷ ‘মিসকোট' হয়ে থাকলে তা দুঃখজনক৷''
আশুতোষ বলেন, ‘‘তবে এই সমস্যা এড়াতে উচ্চ আদালতসহ সব রকম আদালতে মুখপাত্র থাকা প্রয়োজন৷ এঁরা আদালতের বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের ‘ব্রিফ' করবেন৷ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেবেন৷ আইনগত বিষয়ও পরিষ্কার করবেন৷ তাহলে ‘মিসকোট'সহ আরো অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব৷''
তিনি অবশ্য একই সঙ্গে আইন আদালত নিয়ে যাঁরা প্রতিবেদন করবেন তাঁদের পেশাগত প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব দেন৷