নিবন্ধন বাতিল করায় তুরস্কের উপর ক্ষুব্ধ জার্মানি
৫ মার্চ ২০১৯জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া আদেবার তুরস্কের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সোমবার জানিয়েছেন, এটি ‘ধারণাতীত' ব্যাপার যে তিনজন জার্মান সাংবাদিকেরনিবন্ধন বাতিল করেছে আঙ্কারা৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা তুরস্ককে আমাদের অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি: আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এক মূল্যবান সম্পদ মনে করি৷ জার্মান এবং ইউরোপীয় সাংবাদিকদের তুরস্কে মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে৷ এবং আমরা আশা করছি যে তাদের জন্য শীঘ্রই ‘প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন' ইস্যু করা হবে৷''
তবে, ঠিক কীভাবে ‘প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন' বাতিল হওয়া সাংবাদিকরা আবারও তা ফিরে পাবেন সে বিষয়ে বার্লিনে কেউ কিছু বলতে পারেনি৷ তুরস্কের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে তাতে সেরকম জল্পনাকল্পনার সুযোগ তেমন একটা নেই৷
ডয়চে ভেলেকে পাঠানো এক সংক্ষিপ্ত ইমেলে আঙ্কারার গোয়েন্দা দপ্তর লিখেছে, ‘‘প্রিয় গণমাধ্যমের সদস্যরা৷ আপনার ২০১৯ সালে ‘প্রেস এক্রিডিটেশন' নবায়নের আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি৷''
এখন অবধি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তিনজন জার্মান সাংবাদিকের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে৷ তাঁরা হচ্ছেন বার্লিনভিত্তিক ডেয়ার টাগেসস্পিগেল পত্রিকার তুরস্ক প্রতিবেদক থমাস সিবার্ট, ইস্তানবুলে জেডডিএফ স্টুডিও'র প্রধান ইয়র্গ ব্রাসে এবং এনডিআর-এর সাংবাদিক হালিল গ্যুলবেয়াজ৷
প্রসঙ্গত, তুরস্কে সাংবাদিকদের ‘প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন' বাতিল হলে নানারকম সমস্যা তৈরি হয়৷ দেশটিতে প্রতিবছরের ডিসেম্বরে সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল হয়ে যায়৷ এরপর সেগুলো নবায়নের আবেদন করতে হয়৷ বিদেশি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এই অ্যাক্রিডিটেশন শুধু দেশটিতে কাজ করার অনুমতিই নয়, সেদেশে বসবাসের ‘রিসেডেন্স পারমিট' হিসেবেও বিবেচিত হয়৷ তবে, তুরস্কে এবারই প্রথম জার্মান সাংবাদিকরা ঝামেলায় পড়েননি৷ এর আগে ২০১৬ সালে ডেয়ার স্পিগেল পত্রিকার তৎকালীন তুরস্ক প্রতিবেদক হাসনাইন কাজিম-এর অ্যাক্রিডেশন বাতিল করে দেশটির গণমাধ্যম কার্যালয়৷ ফলে তুরস্ক ছাড়তে বাধ্য হন কাজিম৷ একইবছর জার্মান টেলিভিশন এআরডি'র সাংবাদিক ভল্কার স্যোয়েনস্ক এবং ট্যাবলয়েড পত্রিকা বিল্ড-এর আলোকচিত্রী গিয়র্গস মৌতাফিসকে তুরস্ক প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি৷
২০১৭ সালে জার্মান সাংবাদিকদের সঙ্গে তুরস্কের আচরণের কারণে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়৷ সে বছর সাংবাদিক ডেনিস ইউচেলকে গ্রেপ্তার করে একবছর বিনাবিচারে কারাবন্দি করে রাখে দেশটি৷ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অবশ্য দেশে ফেরার অনুমতি দেয়া হয় তাঁকে৷
উল্লেখ্য, তুরস্কে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি ক্রমশ অবনতির দিকেই যাচ্ছে৷ সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডার্স' এর ‘প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স'-এ ২০১৮ সালে তুরস্কের অবস্থান ছিল ১৫৭তম, যা আগের বছরের চেয়ে দুই ধাপ নীচে৷
ডানিয়েল হাইনরিশ/এআই