1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংসদ, বিধায়ক, নেতার বিদ্রোহে জেরবার পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি

২৫ জানুয়ারি ২০২২

পশ্চিমবঙ্গে ভোটে হারের পরই রাজ্য বিজেপি-তে শুরু হয়েছে বিদ্রোহ। যত দিন যাচ্ছে, ততই বিদ্রোহ তীব্র হচ্ছে।

https://p.dw.com/p/462Xr
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি এখন দলীয় নেতাদের বিদ্রোহে জেরবার। ছবি: Prabhakarmani Tewari/DW

দলের অন্দরের বিদ্রোহে, অসন্তোষে জেরবার পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে হারের পর যে অসন্তোষের শুরু, তা এখন প্রবল আকার নিয়েছে। বিধানসভার পর বেশ কিছু নেতা তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। তার মধ্যে নির্বাচিত বিধায়করা যেমন আছেন, তেমনই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো জিততে না পারা নেতাও আছেন।

কিন্তু এখন বিদ্রোহের চরিত্র বদলেছে। দলের বিধায়ক ও নেতারা একজোট হয়ে বিদ্রোহ করছেন বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, এই বিদ্রোহী বিধায়কদের অন্যতম নেতা হলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মতুয়া নেতা ও বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। শান্তনু ঠাকুর মতুয়া নেতা। মতুয়ারা বাংলাদেশ থেকে আসা দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে সমস্যা আছে। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েও সমস্যা সমাধান করেনি বা করতে পারেনি।

কারা বিদ্রোহে সামিল

শান্তনু ঠাকুর একা নন, তার সঙ্গে আছেন প্রায় জনা দশেক বিধায়ক এবং প্রচুর নেতা। বাঁকুড়া জেলার অধিকাংশ বিজেপি বিধায়ক বিদ্রোহীদের দলে নাম লিখিয়েছেন। সায়ন্তন বসু, জয়প্রকাশ মজুমদার, রীতেশ তিওয়ারির মতো নেতারাও শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে আছেন। তাছাড়া  সুব্রত ঠাকুর, অশোক কীর্তনীয়া, আশিস বিশ্বাসের মতো বিধায়করাও তার সঙ্গে আছেন। সম্প্রতি এই নেতাদের সঙ্গে পিকনিক করে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন শান্তনু ঠাকুর। তিনি জানিয়েছেন, কৌশল ঠিক করার জন্য বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই। তারা প্রধানমন্ত্রীর হাত শক্ত করতে চাইছেন।

এই বিদ্রোহী নেতাদের সমর্থন করছেন সাবেক বিজেপি সভাপতি ও ত্রিপুরার সাবেক রাজ্যপাল তথাগত রায়।

বিদ্রোহীদের দাবি

কয়েকদিন আগেই কলকাতা শহর ভরে গিয়েছিল একটা পোস্টারে। সেখানে লেখা ছিল, অমিতাভ চক্রবর্তীকে সরাতে হবে। বিক্ষুব্ধ নেতা রীতেশ তিওয়ারিও কেন্দ্রীয় নেতা অমিত মালবীয় এবং রাজ্য বিজেপি-র সাংগঠনিক সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর কড়া সমালোচনা করেছেন। তার প্রশ্ন, অমিতাভ বা অমিত মালবীয় ডাকলে কটা মানুষ সমবেত হবেন? তার অভিযোগ, এই নেতারা রাজ্য বিজেপি-কে ধ্বংস করছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার জায়গায় তারা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে লড়াই করছেন। এর জবাব রাজ্যের কর্মীরা দেবেন।

তথাগত রায় টিভি৯-কে বলেছেন, রীতেশ ২০-২৫ বছর ধরে বিজেপি-তে কাজ করছে। সে আদর্শের টানে দল করে।

সূত্র জানাচ্ছে, যেভাবে সুকান্ত মজুমদার জেলা কমিটিগুলি গঠন করেছেন, তার বিরুদ্ধাচরণ করছেন বিদ্রোহী নেতারা। তাতে বিজেপি-র একগুচ্ছ নেতাকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই সব নেতারা বিক্ষোভে ফুঁসছেন।

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে জনিয়েছেন, এই নেতারা দলে ক্ষমতা চান। তারা আর চুপচাপ বসে থাকতে চান না। বিদ্রোহের একটা কারণ সেটা। তাছাড়া শান্তনু ঠাকুর, সুব্রত ঠাকুরের মতো মতুয়া সাংসদ ও বিধায়করা বিদ্রোহ করছেন সম্প্রদায়গত কারণে। বিজেপি মতুয়াদের সমর্থন হারাচ্ছে। সেটা বুঝতে পেরে তারা বিদ্রোহী হয়েছেন।

সাময়িক বরখাস্ত

বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য নেতাদের জানিয়ে দিয়েছে, তারা এখন উত্তরপ্রদেশ সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। পশ্চিমবঙ্গে দলীয় বিষয়ে তারা এখন নজর দিতে পারবে না। যা করার রাজ্য নেতাদেরই করতে হবে।

এরপর বিক্ষুব্ধ নেতা রীতেশ তিওয়ারি ও জয়প্রকাশ মজুমদারকে প্রথমে শো কজ করা হয়। তারপর তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিজেপি-র সূত্র জানাচ্ছে, এটা বিক্ষুব্ধ নেতাদের প্রতি একটা বার্তা। তারা বিদ্রোহ না থামালে আরো কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রীতেশ জানিয়েছেন, ''ক্ষমতা থাকলে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অনুপম হাজরাদের তাড়ান।'' রূপা এবিপি আনন্দকে বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, পুরভোটেও কিছু ক্ষেত্রে টাকা নিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে। তার প্রমাণও আছে। নেতারা জানেন না এটা হয় না। তথাগত ও দলীয় নেতৃত্বকে চিঠি দেয়ার পর বলেছিলেন, টিকিট দেয়ার ক্ষেত্রে অর্থ ও নারী প্রভাব ফেলেছে, তা তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন।

রীতেশের দাবি, তিনি কোনো শৃঙ্খলাভঙ্গ করেননি।  বরং রূপারা প্রকাশ্যে টিকিট বিক্রির কথা বলছেন। দল তাদের তাড়াক।

রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দলের নজর সবার উপরে আছে। দলে একটা শৃঙ্খলাভঙ্গ কমিটি আছে। তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

কী হবে?

বিজেপি-র এই বিদ্রোহের পরিণতি কী হবে? শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, দল ভাঙবে নাকি মিটমাট হয়ে যাবে অথবা পশ্চিমবঙ্গে বিএসপি-র মতো দলিত-প্রধান দল তৈরি হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। শুধু বলা যায়, বিজেপি আড়াআড়িভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে।

নামপ্রকশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বিজেপি-র এই বিক্ষোভ-বিদ্রোহ সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না।  দল ভাঙার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, আনন্দবাজার)