সাইবার অপরাধ-বিরোধী ‘যুদ্ধের’ আগেই অসহায় বাংলাদেশ
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১সংবাদমাধ্যম বলছে ,সাইবার সিকিউরিটি সেলের কাজ হলো ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘‘সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী'' বিভিন্ন কন্টেন্ট-এর ওপর নজর রাখা৷ একইসঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক, পর্নগ্রাফি, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে উসকানিমূলক ও উগ্রবাদী কন্টেন্ট-এ নজর রাখা৷ এরা সরাসরি আপত্তিকর কন্টেন্ট সরিয়ে দেবে৷ এতদিন তারা শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরোধেই এই কাজ করতো৷ এখন সরাসরি করবে৷ এর আগেও ২০১২ সালে এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল বিটিআরসি৷ তবে তেমন কাজে আসেনি৷
তাই এখন কয়েকটি প্রশ্ন সামনে এসেছে৷ ১. বিটিআরসির সক্ষমতা ২. আইনগত দিক ৩. মত প্রকাশের স্বাধীনতা ৪. ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দায়িত্ব এবং ৫. ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে দেশীয় আইন৷
বিটিআরসি হাইকোর্টের নির্দেশে চেষ্টা করেও পাবজি এবং ফ্রি ফায়ার গেম বন্ধ করতে পারেনি৷ বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র ডয়চে ভেলেকে চলতি সম্পাহেই জানিয়েছেন, পুরোপরি বন্ধ করার সক্ষমতা তাদের নেই৷ তারা আল-জাজিরার লিংকও বন্ধ করতে পারেনি৷ ফেসবুক ও গুগলকে চিঠি দেয়ার পরও তারা বন্ধ করেনি৷ আর ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) ব্যবহার করে যারা সক্রিয়, তাদের চিহ্নিত বা বন্ধ করার কোনো প্রযুক্তি তাদের কাছে নেই৷
তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘‘যদি নজরদারি করতে হয়, তাহলে বিটিআরসির ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স সফটওয়ার লাগবে৷ এটা ছাড়া আসলে মনিটরিং সফল হয় না৷ এটা বিটিআরসির নেই৷ এর পাশাপাশি ফেসবুক বা অন্যদের সাথে আইনগত চুক্তি করতে হবে৷ ভারত ফেসবুকের কাছ থেকে এডিটিং প্যানেল নিয়েছে৷ আমাদেরও সেটা নিতে হবে৷ সেটা না পারলে বাস্তবে কোনো কাজ হবে না৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ফেসবুক, গুগল বাংলাদেশের সব কথা শুনবে কিনা, বাংলাদেশ যেটাকে সরকার বা রাষ্ট্রবিরোধী মনে করে, তারা সেটাবে মনে করে কিনা৷ তারা চলে তাদের গাইডলাইন অনুযায়ী৷ বাংলাদেশ চাইলে আইনও করতে পারে৷ কিন্তু সেই আইন অনুয়ায়ী তারা কাজ করবে, সেটা কিন্তু নয়৷’’
বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেসব লিংক বন্ধ করতে বিটিআরসিকে অনুরোধ করে তা জিজিটাল সিকিউরিটি আইনের আওতায় করা হয় বলে জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ৷ তিন বলেন, ‘‘ফেসবুক বা গুগলে বিটিআরসির সরাসরি হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগই নেই৷ আমাদের ওয়েবসাইট বা অনলাইন নেটওয়ার্কে বিটিআরসি হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি চাইলেই হস্তক্ষেপ করতে পারেন৷’’
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ এবং গুজব যেভাবে বাড়ছে, তাতে এটার প্রয়োজন আছে৷ কিন্তু এটা যদি বাক-স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে৷ কোনো মন্ত্রী, এমপি বা প্রভাবশালী কারো সমালোচনা করলে বা তাদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুললে তা যদি আটকে দেয়া হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠবে৷
বাংলাদেশে আপত্তিকর কন্টেন্ট, গুজব দেশের বাইরে থেকেও ছাড়ানো হয়৷ আর তা বাংলাদেশের নাগরিকরাই ছাড়ান৷ সেক্ষেত্রে করনীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশের আইনেই তার প্রতিকার আছে৷ যারা বিদেশে বসে এই কাজ করেন, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করতে হবে৷ মামলায় অপরাধ প্রমাণ হলে ইন্টারপোল বা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে দেশে তাদের ফেরত এনে সাজাভোগের ব্যবস্থা করা যায়৷ কিন্তু সেই উদ্যোগ তেমন দেখা যায় না৷’’
তিনি ফেসবুক বা অন্যান্য সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সরাসরি বাংলাদেশের আইনের আওতায় আনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অষ্ট্রেলিয়া আইন করেছে৷ অষ্ট্রেলিয়ায় ফেসবুকের অফিস আছে৷ সেখানে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷ কিন্তু আমাদের এখানে তা সম্ভব নয়৷ কারণ, এখানে অফিস নেই৷ তারপরও তারা নিজস্ব নীতিতে চলে৷ তারা ট্রাম্পকেও হেট স্পিচ ছড়ানোর অভিযোগে ব্যানকরেছে৷ আবার আল-জাজিরার লিংক তারা হাইকোর্টের নির্দেশে বাংলাদেশের অনুরোধ সত্বেও বন্ধ করেনি৷ ওরা চলে ওদের নিজস্ব নীতিতে৷’’
তবে তারা তাদের নীতিমালা অনুসরণ করে বিভিন্ন দেশের অনুরোধ রক্ষা করে বলে জানান তিনি৷ গত এক বছরে বাংলাদেশ থেকে ১৮ হাজার ৮৩৬টি লিংক বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হয়৷ তার মধ্যে চার হাজার ৮৮৮টি লিংক বন্ধ করে ফেসবুক৷
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যন বলেন, ‘‘আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও নেই, আবার এগুলো যারা আপলোড করে, তাদের অফিস দেশের বাইরে৷ এখান থেকে আপলোড হলে আমরা বন্ধ করতে পারি৷ আমরা সব বন্ধ করতে পারি না৷ যেখানে পারা যায় না, সেখানে আমরা চিঠি লিখি৷ তারা ব্যবস্থা নিলে বন্ধ হয়৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘শুধু বাংলাদেশ কেন ইন্টারনেটের এই যুগে বিশ্বের কোথাও সবকিছু বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ সেটা করা হলে সববিছু বন্ধ হয়ে যাবে৷ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে৷’’