শহীদের আত্মা শান্তি পাবে
১ মার্চ ২০১৩একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলার সময় হত্যা, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে বুধবার ফাঁসির আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ইসলামী চিন্তাবিদের ভাবমূর্তি গড়ে তোলা এবং একসময় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠা এই জামায়াত নেতার একটি মামলার বাদি পিরোজপুরের জিয়ানগরের মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম হাওলাদার৷ ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মানবতাবিরোধিতার মামলার প্রথম সাক্ষীও তিনি৷
একাত্তরে সাঈদীর ভূমিকা কী ছিল তা জানাতে গিয়ে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছিলেন, পিরোজপুর জেলার পাড়েরহাটের উমেদপুর ও আশপাশের হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকায় ১৯৭১ সালের ২ জুন সকালে সাঈদীর নেতৃত্বে কীভাবে হামলা চালিয়ে ২০-৩০টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়৷ জামায়াত নেতা কীভাবে নিরস্ত্র ব্যক্তিদের হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা করেছিলেন, নারীদের ধর্ষণ করেছিলেন, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দেড়শরও বেশি মানুষকে নির্যাতন করে, হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্মান্তরে বাধ্য করেছিলেন তার বর্ণনাও দিয়েছিলেন মাহবুবুল আলম হাওলাদার৷
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে সে সবের সামান্যই এসেছে৷ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হওয়ায় দেশমাতৃকা কিছুটা পাপমুক্ত হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির জন্য ৪২ বছরের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে- এমন বক্তব্যই শুনিয়েছেন তিনি রায় ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর৷
মাহবুবুল আলম হাওলাদার এক দুঃখিনীর কথাও বলেছেন৷ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একাত্তরে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন৷ সেই নারী তাঁর হতদরিদ্র স্বামীর ঘরে তারপরও ছিলেন৷ স্বাধীনতার পর গর্ভে সন্তান এলে এলাকার কেউ কেউ তাঁকে কটাক্ষ করতে শুরু করেন৷ নিরপরাধ সেই নারী সমাজে একটু সম্মানও পাচ্ছিলেন না বলে দেশ ছেড়ে চলে যান ভারতে৷ তাঁর স্বামী যাননি৷ তিনি দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন প্রায় একা৷ গত বছরের ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে৷ যুদ্ধাপরাধের মামলায় ধর্ষণের শিকার হয়েও দেশে থাকতে না পারা সেই নারীর বৃদ্ধ স্বামী সাক্ষ্য দিয়েছেন৷ এমন মর্মান্তিক কয়েকটি ঘটনা বিষণ্ণ মনে জানালেও মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম হাওলাদার একটা কথা বলেছেন প্রশান্তি নিয়েই, ‘‘ সাঈদীর ফাঁসির আদেশে ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ নির্যাতিতা শান্তি পাবেন৷''
সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন